ওসমানীনগরে ধান সংগ্রহের নামে লুটপাঠে কর্মকর্তা কর্মচারী
একুশে জার্নাল
ফেব্রুয়ারি ২১ ২০২০, ০৩:৫৯
সরকারিভাবে ধান সংগ্রহে ধীর গতি ও কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে ওসমানীনগর উপজেলার খাদ্য গুদামে কর্মরত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে,সরকারীভাবে ধান কেনার কর্মসূচীকে পূঁজি করে লুটপাটে মেতে উঠেছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে উৎপাদনকারী প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকারের দেয়া প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুযারী পর্যন্ত এ উপজেলায় এক হাজার ১৮ টন ধান সংগ্রহরের কথা থাকলে ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শুধু মাত্র ৬ শত ১৮ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।সংশ্লিষ্টদের দূর্নীতির বিষয়টি বার বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের মৌখিক ভাবে অবগত করলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় সোমবার উপজেলার ভুক্তভোগী কৃষকদের পক্ষ থেকে কৃষক জামেল হোসেন চানমিয়া,শ্যামলসহ কয়েকজন কৃষক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বরাবরে প্রদান করেছেন কৃষকরা।
অভিযোগ জানা গেছে, উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এল এস ডি মূর্শেদা বেগমসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতি টন ধান কিনতে ১৫/২০০০ হাজার টাকা অগ্রীম কৃষকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতি টন ধানের সাথে ৩/৪ মন বাড়তি দিতে হচ্ছে কৃষকদের। এসবের বাইরেও কোন সাধারণ কৃষক ধান নিয়ে গুদামে এসে বিক্রি করতে পারছে না। উপজেলা খাদ্য গুদামের দ্বায়িত্বে থাকা মোর্শেদা বেগমের নিযুক্ত সিন্ডিকেট,উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিদিষ্ট দালার বা কতিপয় সরকার দলীয়সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া ১ কেজি ধানও সরকারী গুদামে ঢুকানো হচ্ছে না।
সরজমিনে একাধিক বার খাদ্যগুদামে গিয়ে দেখা গেছে,কয়েকটি বড় বড় ট্রাকে করে ধান এনে রাতেও গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। গুদামে কৃষি কার্ড নিয়ে আসা উপজেলার রাতখাই গ্রামের কৃষক কদ্দুছ মিয়া, পংকি মিয়া,আপ্তাব আলী, বড় ধিরারাই গ্রামের কৃষক দোলন দেব নাথ জানান,তাদের নিজস্ব কোন ধান নেই। স্থানীয় খালিছ মিয়া ও আনছার মিয়া নামের দুই ব্যাক্তি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা মোর্শেদা বেগম সহ সংশ্লিষ্টদের চুক্তি করে তাদের কার্ড ব্যবহার করে ধান দিচ্ছেন ওই ব্যবসায়ীরা। মূলত কৃষকের কার্ড ব্যবহার করা হলেও সব ধান ব্যবসায়ীদের। তারা টাকা তুলে দেওয়ার জন্য গুদামে এসেছেন। গুদামের দ্বায়িত্বে থাকা মোর্শেদা বেগম আর্দ্রতা বেশি বা ভিজা ও চিটা আছে বলে কৃষকদের ধান ফেরত দিয়ে নিযুক্ত সিন্ডিকেট ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের গোটি কয়েক কতিপয় নেতা ও ব্যবসয়ীদের পঁচা ধান গুদামে ঢুকাচ্ছেন। কয়েকজন কৃষক পঁচা ধান গুদামে ঢুকাচ্ছেন বুধবার এমন খবর পেয়ে সরজমিনে যাওয়ার পর ওই কৃষকরা জানায়,তাদের কোনো জমি নেই আমন ধানও নেই।মূলত এক ব্যবসায়ী তাদের নিয়ে এসেছে তার ধান বিক্রি করার জন্য। তাদের স্বাক্ষর দিতে হবে তাই তারা ওই ব্যবসায়ীদের অনুরুধে এখানে এসেছেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ব্যবসায়ীর পরিচয় না দিয়েই সবাই দ্রুত গুদাম থেকে বেড়িয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাধারণ কৃষকদের কাছে থেকে ধান ক্রয় না করে একাধিক সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা খাদ্য গুদামের দ্বায়িত্বে থাকা র্মোশেদা বেগমসহ তার নিযুক্ত দালালরা। গুদামের ওই কর্মকর্তার কৌশলের কাছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উধ্ধর্তন কর্মকর্তাদের হার মানতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে সাধারণ কৃষকদের পক্ষ থেকে বার বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলেও কোন কাজ হচ্ছে না। সাধারণ কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে একাধিক বার গুদাম পরিদর্শন করলেও এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। অপর দিকে গুদাম থেকে হতাশ হয়ে ফেরত যাওয়া কৃষকদের সাথে ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা অব্যাহত যোগাযোগ রেখে সেই ধান কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে আবার ২৬ টাকা কেজি দরে গুদামে বিক্রি করেন।
গোয়ালাবাজারের আব্দুল মুমিন ও আব্দুল হান্নান সহ একাধিক কৃষক আক্ষেপের শুরে বলেন,আমরা সাধারণ কৃষকরা ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে গেলে নিম্নমানের বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা বড় বড় ট্রাকে করে পঁচা ধান গুদামে ডুকাচ্ছে।এ অবস্থায় কৃষকরা নিজের জমির ধান গুদামে নিয়ে গিয়ে নিরুপায় হয়ে দালালদের কাছে বিক্রি করে চলে আসতে হচ্ছে। কারন নিযুক্ত দালালদের সনাক্ত ছাড়া ছাড়া কোন ধান নেয়া হয় না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে রক্ষকরাই বক্ষক হয়ে আছেন।
উপজেলা স্বেচ্চাসেবকলীগের আহবায়ক চঞ্চল পাল বলেন, সংশ্লিষ্ট কিছু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কতিপয় অসাধু
সিন্ডিকেটের কারনে সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের উন্নতিকল্পে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কতিপয় কিছু লোকদের নিজ স্বার্থ হাছিলের লক্ষ্যে ভাল উদ্যোগকে ব্যাহত করছেন।
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এল এসডি কর্মকর্তার দ্বায়িত্বে থাকা মোর্শেদা বেগম অভিযোগগুলি অস্বিকার করে বলেন,একজন কর্মচারী এর সাথে জড়িত থাকায় তার বদলি হয়েছে। আমি আন্তরিকতার সাথে ধান সংগ্রহের কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।গত বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইংরেজী পর্যন্ত ৬১৮ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ১০ দিন আরও ৬শ টন ধান সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদি তিনি। তবে অভিযোগগুলিকে ছোটকাট বিষয় আখ্যা দিয়ে এসব বিষয়ে প্রতিবেদককে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন ওই কর্মকর্তা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত) আব্দুল আউয়াল ধান সংগ্রহের ধীর গতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা চেষ্ঠা করছি নিদিষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রায় পৌছার। তবে অনিয়মের ব্যাপারে আমার জানা নেই। এ রখম হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা:তাহমিনা আক্তার বলেন,সরকারের এ কার্যক্রমকে সঠিক ভাবে বাস্থবায়ন করতে আমি একাধিকবার সরেজমিনে খাদ্য গুদামের ধান সংগ্রহের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। এরপরও যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলি আমি দেখব।
প্রসঙ্গত: মৌসুমে সরকারিভাবে ১ হাজার ৬শত ১৮মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্তে একজন চাষি ৫শ কেজি থেকে সর্বোচ্চ এক মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। এ বছর সরকার প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৬ টাকা। তবে ১৮ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ওসমানীনগরে ৬শ ১৮ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।