ওসমানীনগরে কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা: মা ও পোনা মাছ রক্ষায় উদ্যোগ নাই
একুশে জার্নাল
জুন ১০ ২০২০, ২৩:১৬
সিলেটের ওসমানীনগরে চলছে কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা। বর্ষা মৌসুম শুরু হবার পূর্বে থেকে উপজেলায় গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর শেরপুরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে অবৈধ কারেন্ট জাল মজুদ করে রেখে রমরমা ব্যবসা চলিয়ে যাচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর উপজেলার বাজারগুলো থেকে এক শ্রেণীর মৎস্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ কারেন্ট জাল ক্রয় করে উপজেলা বিভিন্ন হাওর, জলাশয়, খাল বিল সহ নতুন পানি জমে থাকা জলাশয়ে কারেন্ট জালের মাধ্যমে মিওয়ালা মা মাছ পোনা মাছ নিধন করে চলেছেন।
সরকারি বিধি উপেক্ষা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কারেন্ট জালের অবাধ বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদাম গুলোতে লক্ষ লক্ষ টাকার কারেন্ট জাল মজুদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও এ মৌসুমে জলয়াশ গুলোতে পোনা মাছ ডিমওয়ালা মা মাছ ধরা বা কারেন্ট জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে কারেন্ট জালের ব্যবসা ও জাল দিয়ে মাছ চলছে দেদারছে।
বিষয়গুলো উপজেলা মৎস্য দপ্তর তদারকি করা কিংবা কারেন্ট জাল ব্যবহারকারী ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কথা থাকলেও খালে বিলে পানি আসার পর থেকে অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
একটি অসমর্থীত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সব চেয়ে বড় কারেন্ট জালের আড়ৎ খ্যাত গোয়ালাবাজার সহ বিভিন্ন বাজারের প্রায় শতাধিক কারেন্ট জালের দোকানের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজার গুলোর প্রভাবশালী ব্যক্তি, কতিপয় সাংবাদিক ও প্রশাসনের অসাধু ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময় ম্যানেজ করে একবারে খোলামেলা অবৈধ কারেন্ট জালের রমরমা বানিজ্য করে যাচ্ছে। যার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারগুলোতে অভিযানের পূর্বেই খবর পৌছে যায় কারেন্ট জাল ব্যবসায়ীদের নিকট। আর এ কারণেই দোকান ও গোদামে রাখা লক্ষ লক্ষ টাকার অবৈধ কারেন্ট জাল গুলো অভিযানের পূর্বেই বাজার থেকে সরিয়ে ফেলে ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার স্থানীয় গোয়ালাবাজার থেকে অবৈধ কারেন্ট জাল আশে-পাশের উপজেলাসহ কয়েকটি জেলায় পাইকারি বিক্রয় করা হয়। এখানের কারেন্ট জালের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মূলত পুরো উপজেলা সহ আশপাশের অপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে কারেন্ট জাল। এছাড়াও ঢাকা, সিলেট, ভৈরব সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কারেন্ট জাল আসে ওসমানীনগরে। সপ্তাহে হাটবার ছাড়াও বিভিন্ন বাজারে প্রতিনিয়ত পাওয়া যায় অবৈধ কারেন্ট জাল।
উপজেলার প্রতিটি খাল বিলে শুরু হয়েছে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব। এখন শত শত জেলেকে কারেন্ট জালের সাহায্যে মাছ আহরণ করতে দেখা যায়। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল ক্রয় বিক্রয় করছেন।স্থানীয়রা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দেদারছে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে অবৈধ কারেন্ট জাল। এই জাল ব্যবহার করে খালে-বিলে পোনা মাছ শিকার করছে। দেশীয় প্রজাতির নানা প্রকার মাছের পোনা নহ ডিমওয়ালা মা মাছ এই জালের ফাঁদে আটকা পড়ে। আর এ কারণে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ এখন ওসমানীনগরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের মাছের আড়তে ছোট ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার সাদিপুর ইউপির ইব্রাহিমপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, স্থানীয় গোয়ালাবাজার থেকে তিনি ছোট মাছ ধরার জন্য আধা কেজি কারেন্ট ক্রয় করেছেন। তার এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ শিকার করতেই তিনি কারেন্ট জাল কিনেছনে।উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোছা. মাশরুফা তাছলিম বলেন, আমি এতো দিন প্রশিক্ষণে ছিলাম শিগগিরই অর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে অভিযানের ব্যবস্থা করা হবে।ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তাও আমাকে কিছুই অবগত করেননি যেহেতু সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি মৎস্য অফিসারের সাথে কথা বলে আগামী কাল থেকেই কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।