ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সা. উদযাপন
একুশে জার্নাল
অক্টোবর ২৫ ২০২০, ১৬:১০
কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? নবিজি সা.’র জন্মদিবস আসলেই কি ১২ রবিউল আউয়াল!
আসুন, আমরা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকােণ থেকে তার একটু পর্যালোচনা করি।
# ঐতিহাসিক সীরাত গ্রন্থ, সীরাতে মুস্তফার মধ্যে আল্লামা ইদরীস কান্ধলবি রা. লিখেন- বিশ্ব জাহানের সরদার, পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহা-মানব হযরত মুহাম্মদ সা. হাবাশার বাদশা আবরাহা কতৃক হস্তিবাহিনীর বিনাশপ্রাপ্তির ৫০/৫৫ দিন পর ৮ রবিউল আউয়াল সােমবার মােতাবেক ৫৭০ ইসায়ির এপ্রিল মাসে সুবহে সাদিক উদয়ের মূহুর্তে তাঁর চাচাজান আবু তালিবের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। নবিজি সা.’র জন্ম তারিখ সম্পর্কে এটিই প্রচলিত যে তিনি ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলবি র. এর ভাষ্য “জুমহুর মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ঐতিহাসিকদের মতে নবিজি সা. ৮ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন”। সীরাতে মুস্তফা পৃ.৫১ মা. মুহাম্মদীয়া।
# বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ আর্ রাহিকুল মাখতুমের মধ্যে মাও. ছফিউর রাহমান মুবারকপুরি রা. লিখেন; প্রিয় নবিজি সা. মক্কার বনি হাশিম বংশে ৯ই রবিউল আউয়াল সােমবার মােতাবেক ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ অথবা ২২ এপ্রিল সােমবার দিনে জন্মগ্রহণ করেন।
আর রাহিকুল মাখতুম, পৃ.৭৪, মা. কুরআন।
# সিরাতে অন্যতম গ্রন্থ “রাসুলে রাহমাত”-এর মধ্যে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রাহ. লিখেন, প্রিয় নবিজি সা. ৯ রবিউল আউয়াল সােমবার দিন সুবহে সাদিকের পর পবিত্র মক্কা নগরিতে জন্মগ্রহন করেন
# সিরাতে ইবনে হিসাম’র ভাষ্য অনুযায়ি হুজুর সা. রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ইহাই সঠিক ও নির্ভরযােগ্য উলামায়ে কেরামদের মত। কেউ কেউ বলেছেন ১২ রবিউল আউয়াল নবিজি সা. জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু সকল উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে প্রিয় নবিজি সা. মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল সােমবার দিনে।
সুতরাং আমরা অধিকাংশ নির্ভরযােগ্য কিতাবের আলােকে জানতে পারলাম। হুজুর সা. রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ জন্মগ্রহণ করেছেন।
এবং “রাসুলে রাহমাত” গ্রন্থে উল্লেখ্য আছে, বিখ্যাত আলেম সুলাইমান আল মানসুর ও মিশরের জােতির্বিজ্ঞানীরা নিখুঁতভাবে প্রমাণ করেন যে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ রবিউল আউয়াল দিনটি ছিল সােমবার। যা ছিল প্রিয় নবিজি সা.’র জন্মতারিখ। আর ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল ছিল বৃহস্পতিবার।
রাসুলে রাহমাত, পৃ. ৩৭, মা. এতেকাদ।
তাহলে ১২ রবিউল আউয়াল নবিজি সা.’র জন্মদিন পালন করাটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? আর আমাদের নিকট অতিগুরুত্বের সাথে বিষয়টি অনুধাবনযােগ্য যে, প্রিয় নবিজি সা.’র জন্মতারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যদিও বিরাট মতানৈক্য রয়েছে।তবে নবি করিম সা. যে ইন্তেকাল করেছেন ১২রবিউল আউয়াল এতে কারাে এখতেলাফ বা দ্বিমত পাওয়া যায় না।
সর্বসম্মত ও সঠিক রায় হিসাবে ১২ রবিউল আউয়াল মৃত্যুদিবস হওয়া সত্ত্বেও আজ কেন এই বেদনা ও শােকের দিনে আনন্দ উৎসব, ঈদে মিলাদুন্নবী, জসনে জুলুস মাহফিল,
র্যালি বাহির করা, বিশ্বনবির জন্ম ঈদ, সব ঈদের সেরা ঈদ ঈদে মিলাদুন্নবী, ইত্যাদি অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে। নবিজি সা. বা কারাে মৃত্যু তারিখে ঈদ পালন করা মানবতার বিবেচনায় বা ইসলামি শরীয়া’হ ও ইতিহাসের আলােকে কতটুকু বাস্তব সম্মত? নবিজির মৃত্যুর তারিখে ঈদ পালন করা বা এই তারিখকে গুরুত্ব সহকারে উদযাপন করা, ইসলামি শরীয়া’র মধ্যে বিকৃতি সাধন বা সংযােজন করার নামান্তর।
আর এই প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের সূচনা হয়েছিল,রাসুলে আরাবি সা.’র তিরােধানের প্রায় ৬ শত বৎসর পর।এর পূর্বে পৃথিবীর ইতিহাসে কােথাও মিলাদ মাহফিলের অস্থিত্ব খােঁজে পাওয়া যায়নি। ৬০৪ হিজরিতে বর্তমান ইরাকের উত্তরে অবস্হিত ইবরিল নামক শহরে তৎকালিন স্বৈরাচারী শাসক আবু সাইদ মুজাফফারুদ্দিন কুরকুরির আর্থিক সহযােগিতায় আবু্ল খাত্তাব উমর ইবনে হাসান ওরফে ইবনে দিহয়া কালবি নামক দরবারি মুল্লা সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিলের উদ্ভাবন ও আয়ােজন করেন।
এরপর থেকে চলমান সময় পর্যন্ত কিছু সংখ্যক ভাইয়েরা ইতিহাস পর্যালোচনা ছাড়াই মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপনকে শরীয়তের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে পালন করে আসছেন।
অথচ শরীয়তে ইসলামিতে এর কােন ভিত্তি খােঁজে পাওয়া যায় না। আর ইসলামি শরীয়াহ’র মধ্যে যার কােন ভিত্তি নেই তাকে শরীয়তের অংশ মনে করে কেহ যদি ইবাদত স্বরুপ আমল করে তাহলে তা স্পষ্ট বিদআত ও নাজায়েয।
তাই আসুন, আমরা এসব রুসম-রেওয়াজ ও মনগড়া প্রথা আবিস্কার ও উদযাপন পরিত্যাগ করি। এবং প্রিয় নবিজি সা.’র তিরােধানের পর তার রেখে যাওয়া সুন্নাহ, নববি আদর্শ আমাদের মধ্যে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।