‘এহরাম’এর কাপড় পরে ওরুসে ভক্তরা ; আলেমদের প্রতিক্রিয়া
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ২৪ ২০১৯, ২২:৩৪

ইকবাল হাসান জাহিদ
সিলেটের হযরত শাহজালাল (র) এর মাজারের ওরসে ‘এহরামের কাপড়’ পড়ে যোগ দিয়েছেন কতিপয় ভক্ত। তারা সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে নগরীর চৌহাট্টা এলাকা দিয়ে শাহজালালের মাজারে প্রবেশ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাজারভক্ত কিছু লোক এহরামের সাদা কাপড় পরে শাহজালাল দরগাহ শরীফের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে এহরামের কাপড় পরা অনেক লোককে দেখতে পেয়ে আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।
এহরামের কাপড় পরে ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন বায়তুল্লাহর দিকে হজ্বে যাচ্ছেন ঠিক তখনই শাহজালালের ওরসে যোগ দিতে সারিবদ্ধভাবে ভক্তবৃন্দের বিশাল একটি কাফেলার যাত্রা দেখে জনমনে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিলেটের ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ীরা জানান, মুসলমানদের পবিত্র হজ্ব পালন হয় এহরামের কাপড় পরে। শাহজালাল রহ. দরগায় তারা কীভাবে এহরামের কাপড় পরে গেলেন? সাদা কাপড় যেহেতু এহরামের জন্য নির্ধারিত সেহেতু লাল কিংবা হলুদ অন্য যে কোনো রংয়ের কাপড় তারা পরতে পারে। এটা মুসলমানদের পবিত্র বিধান হজ্বের প্রতি অবমাননা করেছেন বলেও তাদের অনেকে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে শাহজালাল রহ. দরগাহ জামে মসজিদের খতীব ও দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম-শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ির) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এহরামের কাপড় শুধুমাত্র হজ্বের সময় ব্যবহার করেন হাজীরা। এছাড়া অন্য যে কারো জন্য এটা পরা অনুচিত। তারা ওরসে এরহামের কাপড় পরে গর্হিত কাজ করেছেন। এটা বন্ধ করতে হবে।”
আপনি দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম এবং মসজিদের খতীব, আপনার বা আপনাদের মাদরাসার কী কোনো ভূমিকা থাকার দরকার নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ১৫-২০ বছর আগে এখানে শরীয়ত বিরোধী কাজ বন্ধের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সাথে সিলেটের সর্বসাধারণকে পাইনি। অথচ শরীয়ত বিরোধী কাজের প্রতিবাদ করা সকল মুসলমানের ওপর সমান দায়িত্ব। আমরা তাদেরকে বুঝাচ্ছি, প্রতিবাদ করেছি, এখনও বিভিন্নভাবে করছি। সবাইকে আমাদের থাকার আহবান।
এ ব্যাপারে সিলেট ইমাম সমিতির সভাপতি হাবিব আহমদ শিহাব বলেন, এহরামের কাপড় শুধুমাত্র হজ্বের নিয়তে হাজীরাই পরতে পারেন। অন্য যে কারো জন্য এহরামের কাপড় পরা জঘন্য অপরাধ। এ কাজ যারা করেছেন তাদের জন্য অবশ্যই তাওবা করা উচিত। তিনি বলেন, যারা দরগার ওরস নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা এই দায় এড়াতে পারেন না। এজন্য আমি মনে করি, মাজারের পাশের মসজিদে ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার মাজারের জিয়ারতকারীদের উদ্দেশ্যে দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে নসিহত করা দরকার।
আঞ্জুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের সেক্রেটারী হাফিজ আব্দুল হাই হারুন এ ব্যাপারে বলেন, মুসলমানদের ধর্মীয় বিধান হজ্ব ও ওমরার সময় এহরামের কাপড় পরা হয়। কিন্তু মাজারে যেতে এহরামের কাপড় পরা হয় বা হচ্ছে এটা আজ আমি প্রথম শুনলাম। অবশ্যই এটা নিন্দনীয়। সিলেটে ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি মহল এটা করছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার যায় না।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী বলেন, মাজারে যে সকল কর্মকান্ড হচ্ছে এগুলোর বেশিরভাগই শরীয়ত বিরোধী। এহরামের কাপড় যদি তারা নিয়ত করে পরে থাকে তবে তারা শিরক করেছে। এ জন্য তাদেরকে প্রকাশ্যে তাওবা করা উচিত। সিলেটের ধর্মপ্রাণ ও শান্তিপ্রিয় মানুষকে উত্তেজিত করতে কতিপয় ভন্ড এগুলো পরিকল্পিতভাবে করছে। সিলেটের ওলামায়ে কেরামের উচিত এর সম্মিলিত প্রতিবাদ জানানো। আমি মনে করি এ ব্যাপারে সিলেটের প্রশাসনকেও সচেতন ভূমিকা রাখা দরকার। আগামীতে পূণ্যভূমি সিলেটে এমন ধৃষ্টতা প্রদর্শিত হলে এগুলো সিলেটের ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতিহত করবে।
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে সিলেটের শাহজালাল দরগাহ মাজারে ওরস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ভক্তবৃন্দ ওরসে শরীক হচ্ছেন। কিন্তু ধর্মীয় উৎসব পালন করতে প্রতিনিয়ত এখানে চলছে শরিয়ত বিরোধী কর্মকান্ড। কতিপয় ভক্তবৃন্দ মাজারের পার্শ্বের বিভিন্ন আড়াল জায়গায় তাবু টাঙ্গিয়ে মদ-গাঁজা-ইয়াবসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চালাচ্ছেন। যা ধর্মপ্রাণ সিলেটবাসী সহজভাবে নিতে পারছেন না।
সৌজন্যে: দৈনিক জালালাবাদ,সিলেট