এমপিদের পালানো ঠেকাতে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিমানবন্দর অবরোধ
একুশে জার্নাল ডটকম
মে ১০ ২০২২, ১৯:৪৭

শ্রীলঙ্কায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-সহিংসতার মধ্যে দেশটির সংসদ সদস্যরা যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য দেশটির প্রধান বিমানবন্দর অবরোধ করে রেখেছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা।
আরও পড়ুন: ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে
মঙ্গলবার লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতুনায়েকে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার প্রধান বিমানবন্দর অবরোধ করে রেখেছে একদল তরুণ বিক্ষোভকারী। বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে গাড়ি রেখে অবস্থান নিয়েছে তারা। চলমান বিক্ষোভের মধ্যে এমপিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে গতকাল সোমবার বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় এক এমপির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরেকজন। এদিন শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে সহ অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা কলম্বো উপকণ্ঠে সরকার দলীয় এমপি অমরাকীর্তি আথুকোরালার গাড়িতে হামলা চালালে তিনি দুজনকে গুলি করেন। এতে একজন মারা যান। এরপর সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা তাকে ঘিরে ধরেন। পরে নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই সংসদ সদস্য।
এছাড়া, সোমবার রাতে হোমগমার মহাকুম্বুরা এলাকায় সংসদ সদস্য কুমারা ওয়েল্গামার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে একদল লোক। এতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ওই এমপি।
শ্রীলঙ্কায় দেশব্যাপী কারফিউ সত্ত্বেও ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতায় সোমবার থেকে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭ জন, আহত হয়েছেন ২০০-রও বেশি মানুষ।
জনতার ক্ষোভের মুখে সোমবার পদত্যাগ করেছেন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। তবে তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের পদত্যাগের দাবিতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
জনরোষ কতটা ভয়াবহ উঠতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রাজাপাক্ষে পরিবার। গত রাতে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ছাড় পায়নি মন্ত্রী সানাৎ নিশান্তার বাড়িও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, জ্বলন্ত বাড়িগুলো ঘিরে উল্লাস করছে মানুষজন। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের চারপাশের এলাকাতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে ইতিমধ্যে তার পরিবার নিয়ে রাজধানী কলম্বোর বাসভবন ছেড়েছেন। এরপর তিনি দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিঙ্কোমালি শহরে একটি নৌঘাঁটিতে সপরিবার আশ্রয় নেন। কিন্তু তাও রেহাই মিলল না তার। ওই নৌঘাঁটিও ঘিরে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী কলম্বো থেকে ওই নৌঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। সেখানেও বিক্ষোভ চলছে।
গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ। আজ কারফিউ জোরদার করতে হাজারো সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এছাড়া আজ প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাক্ষের সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই মানুষকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।
করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
অচলাবস্থা নিরসনে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সম্পর্কে মাহিন্দা রাজাপাক্ষের ছোট ভাই। এক যুগ আগে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতাকামী তামিল টাইগারদের দমন করে দেশটিতে রাজাপাক্ষে পরিবারের আধিপত্য তৈরি করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে।
রাজাপাক্ষেদের উত্থান শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট শ্রীলঙ্কাবাসীকে রাজাপাক্ষেদের বিরুদ্ধে পথে নামিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের সরকারে শুধু তার নিজের পরিবারের সাত সদস্য ছিলেন। গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।