একুশে জার্নাল এর পথ চলা : চাই বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৬ ২০১৮, ২৩:৩৭

একুশে জার্নাল মতামত:
ফরমায়েশি লেখা আমি লিখিনা। কেন লিখিনা এটা বলা লজ্জার। তারপরও বলতে হয়। অনেকেই আমাকে লেখক মনে করে লেখার জন্য রিকুয়েস্ট করেন। অনেক আশা নিয়েই করেন। কিন্তু সবাইকে আমি খালি হাতেই ফিরাইয়া দেই।

কেন দেই? দেই এজন্য যে অনেক ভাই মনে করেন আমি একজন সাহিত্যিক। অথচ আমি নিজে ভাল করেই জানি সাহিত্যিক পরের কথা আমি লেখক বলতে যা বুঝায় সেই ক্যাটাগরিতেও পড়িনা। আর পড়ার কথাও না কারণ বাংলা সাহিত্য নিয়ে আমার কোন লেখা পড়া নাই। টুকটাক আরবি ব্যাকরণ ও উর্দু সাহিত্য নিয়ে কিছু পড়েছি তাও জগাখিচুড়ি মার্কা।

মানুষ আমার কাছে লেখা চায় কেন?
এ আরেক ইতিহাস। কওমি মাদরাসা থেকে টাইটেল পাশ করার পর মাদরাসায় পাঠদান শুরু করি। পাঠদান করতে গিয়ে দেখলাম জবান থেকে উর্দু বের হয়ে যায়। নিজের কাছেই খারাব লাগলো নিজের ভাষায় অক্ষমতা দেখে। সিদ্ধান্ত নিলাম উর্দু ভাষার কিতাব আর চর্চা করবোনা। অনেক কষ্ট করে বাংলা ব্যাখ্যাগ্রন্থ জোগাড় করলাম।

তবে সমস্যা হলো, তখন বাংলা কিতাব চর্চা করলে কিছুটা তাচ্ছিল্যের নজরে দেখা হত। তারপরও বাংলা শরাহ শরোহাত মুতালায়া করি। বাংলাতে পাঠদান করি, বাংলাতে লিখি।

তখন আদর্শ নারী পত্রিকা ছিল কওমিতে বহুল প্রচারিত। শুরু করি আদর্শ নারীতে লেখালেখি। এতো লেখা প্রতি সপ্তাহে ডাকে প্রেরণ করতাম সম্পাদক বাধ্য হয়ে লেখা ছাপাতেন। এই তো শুরু। তারপর জাগো মোজাহিদ, রহমত, দৈনিক ইত্যাদিতে।

পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হতো এই যে বললাম, এতো লেখা পাঠাতাম সংশ্লিষ্টরা সবাই হয়তো লজ্জিত হয়ে ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে ছাপাতেন। এভাবেই আমি অনেকের কাছে লেখক, কারো কাছে সাহিত্যিক হিসেবে ভালোবাসার পাত্র হয়ে যাই।

অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলা সাহিত্যের ব্যাকরণ, সাহিত্য মানে কী? লেখক বলতে কী বুঝায়? শুদ্ধ বানান, মার্কেটিং বানান ইত্যাদি কিছু এখনো বুঝিনা পারিনা।
তাই কেউ যখন ফরমায়েশি লেখার কথা বলেন তখন নিজের সব অজ্ঞতা হাজির হয়ে যায় ফলে বন্ধুদের আবদার থেকে পালানোর চেষ্টা করি এবং সফলও হই।

এতো কিছুর পরেও আমি অনলাইন অফলাইনে দু’হাতে লিখে যাচ্ছি। কে কী বলল নাহি ভাবছি। কারণ আমি তো আমার মনের কিছু কথা ব্যক্ত করি। এই ব্যক্ত সাহিত্যের মাপকাঠিতে পড়লো কিনা এ চিন্তা আমার দায়িত্বে নয়। আমি আমার মনের কথা ব্যক্ত করি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে। ব্যক্ত করার পর উদ্দিষ্টরা বুঝে নেন এটাই আমার চাওয়া। আমি তো কোন কিছু সাহিত্য হিসেবে বর্ষণ করিনা যে কী ব্যক্ত করলাম ব্যাকরণ নিয়ে দেখতে হবে।

ফলে কারো সমালোচনায় আমি কোন কালেই পিছুটান দেই নি। এটা আমার একটা সমস্যা কোন জিনিষ করবার আগে একশো বছর পরে কী হবে তা ভেবে মাঠে নামি। এতে কেউ আমাকে আমার স্বপন থেকে হঠাতে পারেনি। আপনারা দেখবেন মজলিস, কমাশিসা, আনসারুল উলামা সহ আরো অনেক বিষয়ে আমি জড়িত হয়েছি কিন্তু কোন ধরণের হুমকী ধমকি, সমালোচনা আমাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। এই নির্ভয়তা আমাকে আদর্শ নারী পত্রিকা উপহার দিয়েছে শ্রেষ্ঠ লেখকের সনদ যা মাঝেমধ্যে আমি বাইর করে দেখি।

এভাবে পরতে পরতে আমি যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছি। পত্রিকা পড়া নিষেধ, আউট বই পড়া নিষেধ, টিভি টকশো নিষেধ এরকম বিষয়ে আমি বরাবরই প্রতিবাদীদের দলে। কারো কোন স্বপ্নে না বললেও জড়িয়ে পড়ি। স্বপ্নবাজদের আমার খুব ভালো লাগে। আমি নিজেও স্বপ্ন দেখি বিশ্বজয়ের। আমি স্বপ্ন দেখি বিপ্লবী মজলিসের। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি মানুষ স্বপ্ন সমান বা তারচেয়ে বড় হয়।

আমি একুশে জার্নালের পরিবারবর্গের কাছে কথা একটাই বলতে চাই, কঠিন এপথে কত শত বাঁধা আসবে। সব বাঁধাকে দুমড়ে মুচড়ে এগিয়ে যেতে হবে খুব বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনায়। মন থেকে চাইলে কঠিন জিনিসও আল্লাহ সহজ করে দেন।

একুশে জার্নালের মসৃণ পথচলা কামনা করে এখানেই বিদায়। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

-শাহ আব্দুস সালাম ছালিক
প্রবন্ধকার,কথাশিল্পী