একটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আবহ চাই

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২৬ ২০১৯, ১৪:২৩

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

অনেকেই বলেন হাতের কাছে যা পান তা-ই পড়েন। একটু বাকশৈলী যোগ করে কথাটাকে আরো আকর্ষণীয় এবং স্টাইলিশ করার জন্য খানিকটা অনুপ্রাস মিশিয়ে বলে ওঠেন — চটি থেকে চন্ডি যা হাতের কাছে পান তা-ই পড়েন তারা। তাদের এই অনুপ্রাসের শিল্প সুষমাকে অগ্রাহ্য করতে চাই না। তবে নীতিবাগীশ শোনাতে পারে এমন বাকঝুঁকি নিয়েও বলতে চাই, প্রশ্ন করতে চাই — রেন্ডম পড়াশুনা করলে তা কি পাঠককে কোন তৃপ্তিকর বোঝাপড়া এবং বোধ ও উপলব্ধির কোন উচ্চসন্তোষে পৌঁছে দেয়? বা দিতে পারে?

নাকি পড়াশুনারও একটি মাকসাদ হোনা চাহিয়ে। একটা পরিকল্পিত সিলসিলা থাকা চাই। আর এই সিলসিলার একটা কিবলাও থাকা চাই। এই মাকসাদ, সিলসিলা এবং কিবলা-ই ঠিক করে দেবে আপনি কোন বইটি পড়ার জন্য বেছে নেবেন। তার পরে আবার কোন বইটি আপনাকে আপনার ঐ নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য পড়তে হবে তার ইঙ্গিত আপনি তখন নিজে থেকেই পেতে থাকবেন। এভাবে পাঠক তার পড়াশুনা, বোঝাপড়া, ভাবনা ও কল্পনাকে একটি মানহাজে নিয়ে আসতে পারবেন। এর ফলাফল হবে যেমন উপকারী ও সুখকর তেমনি তৃপ্তিকর ও আনন্দকর। পাঠকের মন ও মননে এতে দারুণভাবে জারণ ঘটবে। তিনি ক্রমশঃ একজন বিদগ্ধ সমঝদার হয়ে উঠবেন। তার জীবনশৈলী রূপে রসে উপলব্ধির সৌকর্যে ও মাধুর্যে বর্ণাঢ্য হয়ে অন্যদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে উঠবে।

অবশ্য পাঠকের এই পড়াশুনার পথ পরিক্রমায় তিনি যে বিন্দুর পর বিন্দু বপন করে একটি অর্থময় ও তাৎপর্যময় জীবনরেখাচিত্র আঁকবেন তা যেন কখনো খুব বেশি একঘেয়ে বা একসুরো না হয়ে যায়। সেই রেখাচিত্রকে তিনি যেন বিচিত্র ও বিভিন্ন মানস বৈভবে সুষমিত করে ঐকতানের মত স্তরে স্তরে উচ্চ থেকে উচ্চতর ধ্বনি প্রতিধ্বনির সুশৃঙ্খল সুডৌল প্রপঞ্চে পরিণত করতে পারেন। তার এই পথ পরিক্রমা যেন জীবনগ্রাফে এমন সব জ্যামিতিক অবয়ব আর আকৃতি প্লট করতে থাকে যা কখনো মনে হবে বৃত্তাকার, কখনো মনে হবে উপবৃত্তাকার বা কখনো মনে হবে অধিবৃত্তাকার। মোদ্দা কথা কখনোই তিনি যেন পূর্বনির্ণয়সম্ভব বা পূর্বধারণাসম্ভব কোন কিছুর নেহাত পুনরুৎপাদকে পরিণত না হন। অর্থাৎ তিনি যেন একরৈখিক, বিরক্তিকর ও বিস্বাদকর কোন যাত্রার তীর্থপথিক না হয়ে ওঠেন।

পুঁজি পূজারী এই পণ্যসম্ভোগী বস্তুসভ্যতায় আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আবহ হিশেবে অন্তর্চেতনা লালন করতে না পারলে পণ্যভাগাড়ের অজস্র বিপুল বিভ্রান্তিকর নাম না জানা প্রলোভনে পা পিছলে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই পণ্যাসক্ত পৃথিবী আমাদের সামনে একটি বুফে রেস্তোরাঁর মত অজস্র রসনার পদসম্ভার সাজিয়ে আমাদের রিপুকে প্রলুব্ধ করছে — সেসব চেখে দেখার জন্য এবং পণ্যমত্ততায় স্বকীয়তা হারাবার জন্য।

এসব থেকে একজন পাঠক কিভাবে নিজেকে সুরক্ষা দিতে পারে যদি না তিনি একটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আবহে নিজেকে স্নাতক ও জারিত করে না তোলেন?