উলিপুরে পুকুরের উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রতিবাদে স্মারকলিপি প্রদান
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ২৪ ২০২০, ১৯:২৯

রোকন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি;
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর বাজারে স্বর্ণময়ী সরোবর (কাচারি পুকর) এর উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণের বিরুদ্ধে নানাবিধ কারন উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
২৪ জুন বুধবার জেলা প্রশাসককে দেয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, উলিপুর উপজেলা প্রশাসন উলিপুর বাজার সংলগ্ন ঐতিহাসিক স্বর্ণময়ী সরোবরের (কাচারী পুকুর) সৌন্দর্য্যবর্দ্ধনের জন্য পুকুরের এপার-ওপার সংযোজিত করে একটি ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পুকুরটি ঐতিহাসিক বিধায় এটির সৌন্দর্য্যবর্দ্ধনসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগকে আমরা সবসময়ই স্বাগত জানাই। কিন্তু সৌন্দর্য্যবর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে মাত্র পৌনে তিন একরের এই পুকুরটির উপর অনাঙ্ক্ষিত ব্রীজ নির্মাণের ব্যাপারে নানাবিধ কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। উল্লিখিত পুকুরটির পশ্চিম পাড়ে একটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এছাড়াও পুকুরটির পূর্ব পাড়ে উলিপুরের সবচেয়ে বড় মসজিদ খ্যাত ‘উলিপুর মসজিদুল হুদা’ এবং পাশেই উলিপুর মসজিদুল হুদা নূরানী ও হাফিজি মাদরাসা অবস্থিত। দক্ষিণ দিকে উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয় অবস্থিত। উলিপুর পৌরসভার আশে পাশে কোনো পার্ক নেই। তাছাড়া উলিপুর পৌরসভা সংলগ্ন সমস্ত রাস্তাগুলি অত্যন্ত ব্যস্ত রাস্তা। ফলে স্বাস্থ্যোদ্ধারকারী বিভিন্ন বয়সী মানুষ সকাল-সন্ধ্যা এই পুকুরটির চারপাশে হাটাচলা করে থাকেন। উলিপুর উপজেলা প্রশাসন কতৃপক্ষ কর্তৃক পুকুরটিতে ব্রীজ নির্মাণ করা হলে এখানে সব সময় ব্যাপক জনসমাগম ঘটবে। এতে পুকুরটির চারপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিরূপ পরিবেশের সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরের উপর এ ধরনের একটি স্পট নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে পারে। লোক সমাগমের কারণে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার ব্যাপক আংশকা রয়েছে। এছাড়াও ব্রীজটি নির্মাণ করা হলে পাশে থাকা উলিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কোমলমতি শিশুদের পড়াশুনার পরিবেশ বিঘ্নিত সহ বিভিন্ন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্যোদ্ধারকারী বিভিন্ন বয়সী অসংখ্য মানুষের চলাচলে ব্যঘাত সৃষ্টি হবে। পুকুরটির পূর্ব দিকে মসজিদুল হুদায় নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। একই দিকে অবস্থিত উলিপুর মসজিদুল হুদা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।
এছাড়াও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার আশংকার ব্যপারে উল্লেখ করা হয়, পুকুরটিতে প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। পুকুরটিতে প্রায় শত বছরব্যাপী যেভাবে দূর্গাপুজার প্রতিমা বিসর্জন করা হয় তা অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। বাংলাদেশের অন্য কোন জেলা বা উপজেলায় এ ভাবে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয় কিনা তা আমাদের জানা নেই। পুকুরের উপর এমন একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হলে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন বিঘ্নিত হবে এবং ব্রীজের নীচ দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনূভুতিতে বিরাট ক্ষতের সৃষ্টি করবে। পুকুরের উপর ব্রীজ নির্মাণ হলে আমাদের উলিপুরের এই অসাম্প্রদায়িক ঐতিহাসিক তাৎপর্য্যও ভুলুন্ঠিত হবে। তাছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক তথা আমাদের দেশের মহাদূর্যোগে অর্থনৈতিক মন্দার দুঃসময়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে অর্থ ব্যয় না করে পুকুরের উপর ব্রীজ নির্মাণের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত একটি অযৌক্তিক আয়োজন। উলিপুর বাজারে উল্লেখযোগ্য জলাধার শুধুমাত্র এই পুকুরটি। ফলে উলিপুর বাজারে কখনো অগ্নিদূর্ঘটনা ঘটলে অগ্নিনির্বাপনের জন্য উল্লিখিত পুকুরটি একমাত্র ভরসা। সার্বক্ষণিক জনসমাগমের কারণে অগ্নিনির্বাপনেও বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। পুকুরটির উপর ব্রীজ নির্মাণ হলে ব্রীজের উপর থেকে দর্শনার্থীরা ও পথচারীরা চিপস-চানচুরের প্যাকেট, পলিথিন, বিড়ি-সিগারেটের টুকরোসহ বিভিন্ন ময়লা ফেলবে যা রোধ করতে পারার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। ফলে পুকুরটি আক্ষরিক অর্থেই একটি ময়লা আর্বজনার ভাগাড়ে পরিণত হবে। ফলে পুকুর এলাকাটি একটি দুর্গন্ধময় এলাকায় পরিনত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।
দুপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কুড়িগ্রাম খবরের সম্পাদক এস এম ছানা লাল বকসী, পুজা উদযাপন পরিষদের জেলা সাধারন সম্পাদক বাবু রবী বোস বিশিষ্ট আইনজীবী প্রদীপ রায়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু, উলিপুর উপজেলা বাসদের সমন্বয়ক রাজনীতিক সাঈদ আখতার আমিন, বাংলা ডট রিপোর্ট এর কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক চন্দন কুমার সরকার, সমাজকর্মী সুদীপ্ত দেব ধ্রুব প্রমুখ।