উন্নয়ন বঞ্চিত মুকিতলা কৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: জরাজীর্ণ টিনসেড ভবনে চলছে পাঠদান

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ২৩ ২০১৮, ১৯:০৪

একুশে জার্নালঃ কৈলাশটিলার পাদদেশে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে অবস্থিত গোলাপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুকিতলা কৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্টার ১২ বছর পর প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণ হলেও প্রায় ১৯ বছরেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া পায়নি এখনো। কবে পাবে তাও জানেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ! প্রতিষ্টাতা কর্তৃক ২০০০ সালে তৈরি করে দেয়া একটি টিনসেড ঘর যেটা বর্তমানে একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। সেই ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ টিনসেড ভবনে কোনমতে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আর ২০১২ সালে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সাম্পান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২ রুম বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করে দেয়া হলেও সরকারিভাবে ভবন নির্মাণের কোন ছোঁয়া লাগেনি স্কুলটিতে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দ ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বরাবরে বারবার ধর্না দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ৩৩ শতক জমির উপর প্রতিষ্টিত হয় স্কুলটি। ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা শিক্ষিকা ধারা পাঠদান কার্যক্রম চলছেই ভালোভাবে। ১৩৮ জন ছাত্রছাত্রীর এ স্কুলে নেই বাউন্ডারী ও দপ্তরি কাম প্রহরী এবং ওয়াশরুম। বাথরুম একটি থাকলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে নামমাত্র। কক্ষ সমস্যার কারণে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীর ক্লাস পাশের মাদরাসার একটি রুমে করতে হচ্ছে। ২০১৩ সালে স্কুলটি সরকারীকরণ হয়েছে, এরপূর্বের বছরগুলো প্রতিষ্টাতা আলহাজ আলতাব আলীর পরিবারের মাধ্যমে সকল খরচাদি বহন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদেরকে লেখাপড়ায় উৎসাহ যোগাতে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হচ্ছে । বৃত্তিপ্রাপ্ত ও প্রতি ক্লাসের ১ম ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীদের নগদ আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। উৎসাহের জন্য তাদের প্রত্যেকের মা’কেও উপহার দেয়া হয়। এসব উপহার-অনুদান প্রতিষ্টাতা আলহাজ্ব আলতাব আলীর ছেলে লন্ডন প্রবাসী হাবীবুর রহমান প্রতিবছর দেন বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি “স্কুলটি পরিদর্শনে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রনান্ত কুমার পাল জানান” আমাদের স্কুলের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে ভবন সমস্যা। পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে কোনমতে পাঠদান করাতে হচ্ছে। তারপরে ডেস্ক ব্রেঞ্চ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই, বাউন্ডারী ও নৈশপ্রহরী এবং ওয়াশরুম বাথরুম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সমস্যায় অামরা জর্জরিত। শিক্ষা অফিস বরাবরে কয়েকবার আবেদন করেছি। আমাদের স্কুলে সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সৈয়দ মিসবাহ, বদরুল ইসলাম সুয়েব প্রমুখ বিশেষ ব্যক্তি পরিদর্শন করেছেন। তাদের কাছে আমাদের দাবীর কথা তুলে ধরেছি। কিন্তু আদৌ কোন কাজ হয়নি। তাছাড়া সিলেট ৬ আসনের সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হুসেন লেচু মিয়া পরিদর্শন করে এক লক্ষ টাকা, লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের বিশিষ্ট শিক্ষানূরাগী প্রয়াত আহমদ সেলিম চান মিয়া দু’বারে ৪০ হাজার টাকার অনুদান দিয়েছিলেন। এদিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সাম্পান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে দুইরুম বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন তৈরি করে দেয়া হয়। সাম্পান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমাদের স্কুলে ৮টি ও সরকার কর্তৃক ১টি কম্পিউটার দেয়া হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে সেই রুমের একটিতে অফিস ও অন্যটিতে কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্কুলের অনেক প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ব্যক্তি বিশেষরা দান করেছেন। লেখাপড়ার মান শতভাগ ভাল অবস্থানে রয়েছে। আমার দাবি আমাদের স্কুলের সমস্যার কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন সদয় দৃষ্টি দেন। স্কুলের শুভাকাংখি ও গোলাপগঞ্জের বাতিঘর বইয়ের লেখক খাইরুল ইসলাম বলেন, স্কুলটির লেখাপড়ার মান অত্যন্ত ভালো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে স্কুলটি বঞ্চিত থাকায় পাঠদানে ব্যঘাত ঘটছে। স্কুলের একজন শুভাকাংখি হিসেবে কর্তৃপক্ষের সুনজর কামনা করছি।

প্রতিষ্টাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আলতাব আলী বলেন, ২০০০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্টা করি। তখন আমার এ মুকিতলা কৈলাশ এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো না। বেশীরভাগ ছেলে মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। তাদের এই বঞ্চনার কথা চিন্তা করেই স্কুলটি প্রতিষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমার এ প্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়া করে অনেকেই এখন সরকারি বেসরকারি চাকুরী করছেন। নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পেরেছেন। এজন্য আমি মহান রবের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হলেও প্রায় ১৯ বছর হয়ে গেলো, স্কুলটি কোন উন্নয়নের চোখ দেখতে পাচ্ছে না। আমি বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতিকল্পে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। স্কুলের লেখাপড়ার গুণগত মানও ভাল, প্রতিবছরের শতভাগ সফলতা দেখে আমি খুশি।