ঈদুল আজহা: তাৎপর্য ও মাসাইল

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০৮ ২০২২, ১৮:২২

মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দিন আহমদ: মুসলিম মিল্লাতের আনন্দ-উৎসবের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে এ মাসের দশম তারিখ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় একটি দিন । এই তারিখে জড়িয়ে আছে ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধান কুরবানীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।

মুসলিম জাতির জনক হযরত ইবরাহীম (আ:) আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য নিজের একমাত্র পুত্র হযরত ঈসমাঈল (আ:) এর গলায় ছুরি চালিয়ে তাঁর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রমাণ করেছিলেন । আর মহান আল্লাহ পাক ইশক, মুহব্বতের ও কুরবানীর পরীক্ষায় ইবরাহীম (আ:) কে উত্তীর্ণ করে ঈসমাঈল (আ:) কে প্রাণে বাঁচিয়ে দিলেন।

তাঁর স্থানে কুরবানী করিয়ে দিলেন একটি প্রাণী; সাথে সাথে হযরত ইবরাহীম(আ:)এর মাথায় পরিয়ে দিলেন (اني جاعلك للناس اماما) এর তাজ বা মুকুট ।

আর ইবরাহীমের এ অভূতপূর্ব আনুগত্যের নিদর্শনকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতের মধ্যে স্মরণীয় করে রাখতে প্রবর্তন করলেন ঈদুল আজহা বা কুরবানীর ঈদ ।তবে হযরত আদম (আ:) দুনিয়াতে আগমন করার পর পৃথিবীতে মানুষের বসবাস যখন থেকে শুরু হয়, তখন থেকে কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হালাল প্রাণী জবাহ করার রীতি চালু ছিল । সর্বপ্রথম কুরবানী করেছিলেন হযরত আদম(আ:) এর পুত্রদ্বয় হাবীল এবং কাবীল।

ইরশাদ হচ্ছে; অর্থাৎ যখন তারা উভয়ে এক একটি কুরবানী পেশ করল । ( সুরা মায়েদা আয়াত: ২৭)

তখনকার নিয়ম অনুযায়ী আসমান থেকে আগুন এসে যেটিকে জ্বালিয়ে দেয়া হতো, মহান আল্লাহ দরবারে তা গৃহীত বা কবুল হয়েছে বলে প্রমানিত হইত ।

ইরশাদ হচ্ছে; ওই কুরবানী, আগুন যাকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল (আল ইমরান আয়াত ১৮৩)

উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য কুরবানী নিয়ম নীতি এ থেকে পুরোটাই আলাদা। অর্থাৎ এখনকার উম্মতের কুরবানী কবুল হওয়ার আলামত আসমান থেকে আগুন এসে জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়। বরং এ উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক কুরবানীর গোশত ও গণীমতের মালকে হালাল করে দিয়েছেন । আর কুরবানী কবুল হওয়ার নির্ভর করে ব্যক্তির নিয়ত পরিশুদ্ধতার উপর ।

এরশাদ হচ্ছে, আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুগুলির রক্ত,গোশত পৌছয় না,বরং তাঁর কাছে পৌছে শুধুমাত্র তোমাদের তাকওয়া। (সুরা হজ্ব আয়াত : ৩৭)।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন”তখন তার গোশত থেকে নিজেরাও খাও ও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হজ্ব আয়াত: ৩৬)

নবী কারীম (সা:) এক হাদীসে ইরশাদ করেছেন- তোমরা খাও, জমা করে রাখ এবং দান-খয়রাত কর। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭২;)

ঈদুল আজহা কখন ?

পবিত্র ঈদুল আজহা বা কুরবানীর ঈদ উদযাপিত হয় যিলহজ্ব মাসের দশম তারিখ । সে হিশেবে বাংলাদেশে আগামী ১০ জুলাই ২০২২ ইংরেজী (১০ জিলহজ্ব ১৪৪৩ হিঃ) রবিবার ঈদুল আজহা পালন হবে।

তাকবীরে তাশরীকের হুকুম

যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ তারিখ আছর নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামায আদায় করার পর পুরুষের জন্য উচ্চ আওয়াজে আর নারীদের জন্য নিম্ন আওয়াজে একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। এ হুকুম নারী, পুরুষ, মুকিম, মুসাফির,শহর ও গ্রামে জামাতে কিংবা একাকী নামায আদায়কারী সকলের উপর প্রযোজ্য । এরই উপর ফতোয়া । (ফতোয়ায়ে শামী ১/৭৮৪, দারুল উলুম ৫/২১৯)

তাকবীর হল এই যে,الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله الله اكبر الله اكبر وللله الحمد

ঈদুল আজহার নামাযের পর তাকবীর বলাতে কোন সমস্যা নেই। (দুররে মুখতার ১/৮০০)

কাযা নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া

কাযা নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে—

  • আদায়কৃত নামাযটি আইয়ামে তাশরীকের সময়কার হওয়া ।
  • আইয়ামে তাশরীকের মধ্যেই তা আদায় করা ।
  • চলতি বছরের নামায হওয়া। পূর্ববর্তী বছরের কাযা নামায না হওয়া ।

ঈদের নামাযের সময়

ঈদের নামাযের সময়: সূর্য এক বা দুই বর্শা পরিমাণ উচ্চতায় উঠা থেকে শুরু করে যাওয়াল তথা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকে ।( বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪২, মাআরিফুল হাদিস ৩/৪০৩,দুররে মুখতার ১/৭৯১)

ঈদের নামাযের স্থান :

ঈদের নামায স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা মাঠে পড়ারই বিধান। ঈদের জামাত মাঠে আদায় করা সুন্নত। ওজর ছাড়া মাঠ বর্জন করা সুন্নাতের খেলাফ। তবে কোন ওজরের কারণে মসজিদে আদায় করাতে কোন সমস্যা নেই।(সহীহ বুখারী হাদীস : ৯৪৬-৯৫৬,মিশকাত শরীফ হাদিস : ১/১৩৪২,উমদাতুল কারী কিতাবুল ঈদাইন ৬/২৮১ ,৫/১৭১,মাযাহেরে হক ২/২৯৪)

ঈদের নামায যার উপর ওয়াজিব

যে ব্যক্তির উপর জুমআর নামায ওয়াজিব তার উপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব।ঈদের নামাযের পর খুতবা দেয়া সুন্নত। ঈদের নামাযের পূর্বে খুতবা পড়ে নিলে মাকরূহের সাথে নামায আদায় হবে।(বাদায়েউস সানায়ে২/২৩৭,২৪০,২৪১,আলমগীরী ৩/৬৩,কিতাবুল ফিকহ ১/৫৪৮)

নেসাবের মেয়াদ

কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।(বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)

কুরবানীর সময়

মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। (মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)।

ঋণ করে কুরবানী করা

ওয়াজিব না হলে করজ করে কুরবানী করা ভালো নয়। তবে করজ করে কুরবানী করে নিলে,তা আদায় বলে বিবেচিত হবে। এবং এতে সাওয়াবও পাওয়া যাবে ।(ইমদাদুল মুফতিয়ীন ২/৬১)

ঋণ দাতার ঋণের টাকার উপর কুরবানী

যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে ঋণ হিশেবে টাকা দেয় ঐ টাকার মালিক সেই যে ঋণ দিয়েছে।সুতারাং উক্ত টাকা যদি একক বা অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলিয়ে নেসাব পরিমান তথা সারে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য হয় এবং ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা থাকে তাহলে ঋণ দাতার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।তবে যদি ঐ ঋণ দাতার কাছে উপস্থিত নগদ অর্থ এ পরিমাণ না থাকে যার দ্বারা কুরবানীর পশু ক্রয় করা যায় অথবা কুরবানীর দিন সমূহের মধ্যে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি এই পরিমাণ টাকা দিতে রাজি না হয় তাহলে ঐ ঋণ দাতার উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। (বাহরুর রায়িক ১০/২৫৪)

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে?

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)

ত্রুটিযুক্ত পশুর কুরবানীর হুকুম

কুরবানীর পশু যদি শিংবিহীন , শিংভাঙা এবং শিংয়ের খোসা পতিত হয় তাহলে এর দ্বারাও কুরবানী করা দুরস্ত আছে । তবে যদি শিং মূল থেকে ভেঙে অথবা উপড়ে যাওয়ার কারণে তার আঘাত মগজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়,তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। ( ফাতাওয়া রহীমিয়া ৬/১৬১)

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

(উল্লেখ্য যে, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। (কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬)

হালাল পশুর যে অঙ্গ খাওয়া হারাম

যে সকল পশুর গোশত খাওয়া হালাল,সেগুলোর নিম্নোক্ত সাতটি অঙ্গ খাওয়া হারাম । (১) শরীরের ভিতরে প্রবাহিত রক্ত । (২) পেশাবের রাস্তা বা লিঙ্গ । (৩) অণ্ডকোষ । (৪) পায়খানার রাস্তা । (৫) শরীরের গাঁট । (৬) পেশাবের থলি । (৭) পিত্ত । ( বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬১)

পশু যবাহে কিবলামুখী করা

ফুকাহায়ে কেরামের বাহ্যিক কথা দ্বারা বুঝা যায়, যবাহকারীর মুখ কেবলার দিকেকরা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ । অকারণে এর অন্যথা করা মাকরূহ । পশু চিৎ করে কিবলামুখী করে শোয়ায়ে সেটির উপর নিজ পা রেখে যবাহ করা মুস্তাহাব। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৫৯, মাসাইলে কুরবানী ১৫৭)

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজন ব্যক্তি কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না।

আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। (সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮)

সাত শরীকের কুরবানীর হুকুম

সাতজন মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন; কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯)

 

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।(তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২)

আকীকার গোশতের হুকুম

কুরবানীর ন্যায় আকীকার গোশতেরও একি হুকুম । অর্থাৎ কুরবানীর গোশত যেভাবে নিজে এবং গরীব ধনী সকলেই খেতে পারে আকীকার ক্ষেত্রেও সেই হুকুম প্রযোজ্য। ( ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৪/২৯৬)

কুরবানী গোশত বণ্টন পদ্ধতি

কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজে, একভাগ আত্মীয় স্বজন ও একভাগ গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া মুস্তাহাব বা উত্তম ।সুতারাং কেউ যদি তিন ভাগ না করে নিজেরাই সব খেয়ে ফেলে,তাতেও কোন গুণাহ বা সমস্যা নেই । (দুররে মুখতার ৬/৩২৮, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৪/৩৩৫)

মৃত ব্যক্তির নামেকৃত কুরবানীর গোশতের হুকুম

মৃত ব্যক্তির নামে নফল কুরবানী দিলে কুরবানীদাতা কুরবানীকৃত পশুর গোস্ত খেতে পারে। কোন সমস্যা নেই। তবে যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর জন্য অসিয়ত করে যায়। তাহলে তার নামে কুরবানী দিলে সেই কুরবানীর গোস্ত গরীবদের জন্য দান করে দেয়া আবশ্যক। কুরবানীদাতারা খেতে পারবে না। ( রাদ্দুল মুহতার ৯/৪৭২ , বাহরুর রায়িক ৩/১০৫,হিন্দিয়া ৬/২৯৫,ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-২৬/৩৮২)

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয। (ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০)

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮)

নারীর মোহর এবং কুরবানী

স্ত্রীর নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই ; কিন্তু স্বামীর দেয়া প্রাপ্য মোহরের পরিমাণ নেসাবের চেয়ে বেশি । তবে সে ওই মোহর এখনই স্বামীর কাছ থেকে পাচ্ছে না । এমতাবস্থায় উক্ত স্ত্রী সাহেবে নেসাবের মালিক বলে বিবেচিত হবে না এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবেনা ।(ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩)

কুরবানীর পশু যবেহ করে টাকা গ্রহণ করা

কুরবানীর পশু স্বহস্তে যবেহ করা উত্তম । কিন্তু কেউ যদি কোন কারণে যবেহ করতে না পারে,তাহলে অন্যের সাহায্য নিতে পারে । সেক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তির জন্য কুরবানীর পশু যবেহ করে তার বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ আছে । তবে এই বিনিময় কুরবানীর গোশত বা চামড়া দ্বারা দেয়া যাবেনা । তবে কেউ যদি দিয়ে দেয় তাহলে কুরবানী সহীহ হলেও নাজায়েয কাজ করার ফলে গুণাহগার হবে । এর জন্য তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে ।( কিফায়াতুল মুফতি ৮/২৪৫)

রাতে কুরবানী করা

রাত্রিতে কুরবানী করার বিধান হল, যিলহজ্জ মাসের একাদশ ও দ্বাদশ রাত্রিতে কুরবানী করা জায়েজ আছে। কিন্তু যেহেতু রাতে কুরবানী করলে সুন্দরভাবে যবেহের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটার আশংকা আছে,তাই রাতে কুরবানী করা মাকরূহে তানযিহী।

উল্লেখ যে, শরীয়তের নিয়ম হিশেবে রাত আগে আসে, দিন পরে আসে । তাই ঈদের পূর্বে রাত্রে এবং ১২ই যিলহজ্জ দিবাগত রাতে কুরবানী করলে তা আদায় হবে না । ( বাদায়িউস সানায়ে ৭/৫১০, হিদায়া ৪/৪৪৬)

কুরবানীর পশুর মূল্য দান করা

কোন সাহেবে নেসাব যদি কুরবানীরপশু যবেহ না করে গরীব মিসকীনদেরকে দান করে দেয়,তাহলে তার কুরবানী আদায় হবে না । বরং কুরবানী না করলে ওয়াজিব তার যিম্মায় থেকে যাবে ।অবশ্য কেউ যদি কোন মারাত্মক উযরের কারণে বা মাসআলা না জানার কারণে কুরবানীর তিন দিনে কুরবানী না করে থাকে তাহলে তাল জন্য কুরবানীর পশুর টাকা বা ক্রয়কৃত কুরবানীর পশু অবিলম্বে গরীব মিসকীনদের জন্য সদকা করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া শামী ৬/২২৫, হিদায়া ৪/৪৪৭)

এ বৎসরের কুরবানী আগামী বৎসর করা

কুরবানীর কাযা নেই । শরয়ী কোন কারণে কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী না করতে পারেন তাহলে তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে । পরবর্তী বছর দুইটি কুরবানী করলে বিগত বছরের দায় এড়ানো যাবে না। (ফাতাওয়া রহীমিয়া ৩/১৮০)

একই পশুতে ওয়াজিব ও নফল কুরবানী করা

একই পশুতে ওয়াজিব এবং নফল কুরবানী জায়েজ আছে । ( ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৪/২৮৮)

কোন শরীকের হারাম মিশ্রিত মাল হলে?

শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগী যবেহ করা

যে সকল জীব জন্তুর দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ নয়, কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানীর নিয়্যত ছাড়া শুধু গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে ঐগুলো যেমন হাঁস মুরগী ইত্যাদি যবেহ করাতে কোন অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়া আলমগীর ৫/৩০০)

গর্ভবতী পশু কুরবানী করা

গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০

আল্লাহ পাক যেন আমাদের সবাইকে ঈদুল আজহার ফজলিত ও কুরবানীর হুকুম আহকাম সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করেন। আমীন।

লেখক: শিক্ষাসচিব, জামেয়া ফারুকিয়্যাহ সিলেট।