ইয়াবা লোড-আনলোডে নদীর পাড়ে জেটি, ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ১২ ২০২০, ১৭:৪১

কায়সার হামিদ মানিক, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার: স্থল পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেশি থাকায় বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি ইয়াবার চালান প্রবেশ করে সাগরপথে। দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় চালানগুলো আনলোড হলেও বেশিরভাগই উঠে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনায়। বাঁকখালীর নুনিয়াছড়া, মাঝিরঘাট, ৬ নাম্বার, খুরুশকুল, এসএমপাড়া, গোদারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান তোলার জন্য অর্ধ শতাধিক জেটি করা হয়েছে। জেটিকে কেন্দ্র করে ইয়াবার গোডাউনও গড়ে তুলেছে কারবারিরা ।

বুধবার (১১ নভেম্বর) শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকা থেকে ৬০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান জব্দ করেছে পুলিশ। ওই চালানটি সাগরপথে এনে নদীরপাশের একটি গোডাউনে রাখা হয়েছিল। চালানটি পৌঁছে দেওয়ার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, নুনিয়াছড়া বড় কবরস্থান এলাকায় বাঁকখালী নদীর পাশে একটি বাড়ি ভাড়া নেয় ইয়াবা ব্যবসায়ী সেলিম-আমিন সিন্ডিকেট। ওই বাড়িটি তারা ইয়াবা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে। বাড়ির সাথে লাগোয়া নদীতে একটি জেটিও করা হয়েছে। সাগরপথে ইয়াবা এনে ওই জেটি ব্যবহার করে ইয়াবাগুলো গোডাউনে সংরক্ষণ করে চক্রটি। পরে সেখান থেকে মাছ ধরার জালে মোড়িয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।

মাছ ধরার জালে মোড়িয়ে পাচারের সময় বুধবার ৬০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান জব্দ করে পুলিশ। এসময় দুইজনকে আটক করা হয়। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে বুধবার (১১ নভেম্বর) রাতেই কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামীকে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, নুনিয়াছড়া এলাকায় ইয়াবার চালান মজুদের খবর পেয়ে বুধবার (১১ নভেম্বর) অভিযান চালায় সদর মডেল থানা পুলিশ। অভিযানে নুনিয়াছড়া বড়কবর স্থান এলাকার মমতাজ মিয়ার বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ইয়াবাগুলো মাছ ধরার জালে মোড়ানো ছিল।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে জানান, তিন জন ব্যক্তি নুনিয়াছড়ার মমতাজ মিয়ার টিনশেড বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। ওই বাড়িতে তারা ফিশিং বোটের জাল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখতেন।

বাড়ির মালিক মমতাজ মিয়া কক্সবাজার পৌরসভার স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের ভগ্নিপতি। মিজান বলেন, মমতাজ মিয়ার বাড়িটি যৌথভাবে ভাড়া নিয়েছিল নতুন বাহারছড়া ৬নং নাম্বার এলাকার মোহাম্মদ সেলিম ওরফে সেলিম বহদ্দার, গিয়াস উদ্দিন ও আমিন। সেখানে তারা ফিশিং বোটের জালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখতেন। মূলত তারা এসবের আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা চালায়। ইয়াবার চালান উদ্ধারে তিনি পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন বলে দাবী করেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, যে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে তারা ব্যবহার করতেন সেটি বাঁকখালী নদীর একেবারে কিনারায় অবস্থিত। ওই বাড়ি থেকে সরাসরি ফিশিং ট্রলারে উঠার জন্য অবৈধভাবে একটি কাঠের জেটিও করা হয়েছে। অন্যান্য ফিশিং ট্রলারগুলো নুনিয়াছড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং এর আশপাশে নোঙর করে মাছ ধরার জালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিলেও সেলিম এবং তার সিন্ডিকেটের ট্রলারগুলো সমস্ত মালামাল লোড-আনলোড করে এই অবৈধ জেটি থেকে।

বুধবার অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে। তিনি জানান, অভিযান চলাকালীন আটক ফিরোজ আলমের মোবাইলে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সেলিম, গিয়াস ও আমিন নামে তিনজনের মোবাইল থেকে অন্তত ২০টি কল আসে। তারাই ঘরটি ভাড়া নিয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ফিরোজ তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাড়ির ভেতর ইয়াবাগুলো ছিল মাছ ধরার জালে মোড়ানো। সুমনের টমটমটি ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিলেন ফিরোজ। জালের ভেতর করে ইয়াবার চালানটি নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা ওই বাড়িতে গিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, সিন্ডিকেটের প্রধান সেলিম এক সময় মাছ ধরার ট্রলারের ড্রাইভার ছিলেন। ইয়াবা চক্রে জড়িয়ে দিনদিন অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ড্রাইভার থেকে সেলিম বহদ্দার (মালিক) নামে পরিচিত।

জানা গেছে, প্রায় ৮ মাস আগে সাগরপথে এনে ৬ নাম্বার এলাকায় আনলোড করার সময় প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি ইয়াবার চালান লুট করে সেলিম, গিয়াস, নুরু ও লালু। ওই চালান লুট করার পর তারা কিছুদিন পলাতক ছিলেন। এখন আবার সক্রিয়।

সূত্রমতে, টেকপাড়া মাঝিরঘাট এলাকায় আবু ছৈয়দ কোম্পানীর বরফ কলের পাশে বাঁকখালী নদীতে একটি অবৈধভাবে জেটি করা হয়েছে। এই জেটি ব্যবহার করেও নিয়মিত ইয়াবার চালান লোড-আনলোড হয়। কক্সবাজারের সবচেয়ে আলোচিত ১ কোটি ইয়াবা লুট হয়েছিল এই জেটিতে।এই ইয়াবা লুটে জড়িত থাকার অপরাধে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারায় টেকপাড়া এলাকার জজ বাবুলের ছেলে মিজান।