ইস্তাম্বুলের উল্টোরথ ও ইসলামপন্থার ভবিষ্যৎ
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ২৬ ২০১৯, ১৭:৪০

মুফতী হারুন ইযহার
আরব্য জায়নবাদী সউদী আমিরাতের বদমাইশরা ইস্তাম্বুলে এরদোগানের কাফেলার পরাজয়ে পুলকিত।বিশ্বব্যাপী এরদোগান সমর্থক শিবিরেও হতাশার ছাপ লক্ষণীয়।আমার মনে হয় না মহাদুর্ঘটনা কিছু ঘটে গেছে। একবিংশ শতকের টার্কিশ মাথা অনেক পরিপক্ব হয়ে গেছে। সে যেকোনো প্রতিকূলতাকে হজম করে নেয়ার মত ভালোই ক্যাপাবিলিটি ও ক্যাপাসিটি অর্জন করেছে।
অনেক কিছু শেখার আছে। ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব লাগে, এটা আল্লাহ্প্রদত্ত।শায়েখ উসামা বিন লাদেনের ছিল।হয়তো শাইখ আইমানের একটু কম। ফলে ছয় নাম্বার আঙ্গুল গজালো আই এস নামে।এরদোগানের কারিশমা আছে। ইলদিরিমের প্রতিভা,পরিশ্রম সব ছিল। সম্মোহনকারী ম্যাজিক ছিলনা।নেতৃত্ব জয় করা হয় বুকের মন দিয়ে মাথার একরোখা বুদ্ধি দিয়ে নয়।
এবার আসেন কাজের কথা বলি, যেগুলো বলা হয়না। শেষ পর্যন্ত সিস্টেমে থেকেই লড়াই করে যাবো, সংস্কার চালিয়ে যাবো,জয়ী হলে বলবো জয়ী হয়েছি, পরাজয় হলে বলবো গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে,গণতন্ত্রের স্থির বিন্দু বাইরে গিয়ে কিছু নয় – এমনসব ধারণা আত্মপ্রবঞ্চনা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।নিজেকে সর্বদা চালাক যে ভাবে, সে পরাজয় রুখতে পারেনা।
আপনি আল্ কুরআনের ‘মাকর’ শব্দ সম্বলিত সবগুলো বাক্য নিয়ে ভাবুন!
দুটো কথা বলা আছে। এক. আপনার বিরুদ্ধে কুফরী চক্রান্ত হবেই হবে এবং তা ভয়াবহ হবে।
দুই. কাউন্টার ঐশ্বরিক প্রতিচক্রান্ত দ্বারা গায়বিভাবে আপনি সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন।
মানহাজ ঠিক থাকলে শেষতক বিজয়ের আশা করা যায়। গলদ মানহাজের খারাপ পরিণাম অনিবার্য।
ইখওয়ান আর জামাআতের পুরো মানচিত্র দেখা হয়ে গেছে, টেকসই বিজয়ের আর কোন সম্ভাবনা নেই বিদ্যমান মানচিত্রের ভেতর থেকে। তবে এর জন্য এদেরকে আমি পরিপূর্ণ বাতিল বলতে পরবো না। তারা একটা খত্বায়ে ইজতিহাদী করেছেন। তারা মা’জূর। তারা বিশ শতকের জিহাদের জনক – সেই হামাস, হিযবুল মুজাহিদীন, হিযবে ইসলামি এবং আর এস ও।
তো কথা হলো, একে পার্টির মানচিত্র পুরোটা দেখা হয়নি, পুরো রূপকল্প পড়া হয়নি। তবে মনে হয় ইখওয়ান আর জামাআতের মত স্থির মানচিত্রের বদলে তারা রূপান্তরশীল ম্যাপ নিয়ে এগোচ্ছে, ওদের তুলনায় এরা মনে হয় ডায়নামিক।
আমি একটু সময় নিচ্ছি। একে পার্টিকে হুটহাট তাকফির করছিনা বিধায় আমার উপর অনেকে নাখোশ।
গণতন্ত্রের ভূত দ্বারা আক্রান্ত থেকে তুর্কিস্তান যদি বিকল্প জানালাগুলো খোলা না রাখে তবে বিপদ আছে। আসলে যেটা বিকল্প বলছি সেটাই যে আসল পন্থা কিনা তা সময় বলে দেবে।
সাম্রাজ্যবাদী ত্বাগুতের দৃঢ় ও নির্মম কাঠামোর মধ্যে থেকেই এ কাঠামোতে একটা মেরুকরণ তৈরি হবে যুদ্ধ ছাড়া – এটা ইতিহাস বিবর্জিত চিন্তা।
আমি আরো স্পষ্ট করে বলি তুর্কিস্তানের সাথে খোরাসানের আত্মীয়তা না ঘটলে ভবিষ্যৎ তুরস্কের খবর ভাল কিছু হবেনা।
মোল্লা ওমরকে আল্লাহ্ কাবুলের রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দিয়েছেন। ফলাফল বিশাল ইতিবাচক হয়েছে। মুরসীকে আল্লাহ পাক রাজপ্রাসাদ থেকে জেল হয়ে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
জামায়াত নেতৃবৃন্দকে আল্লাহ্ গণতন্ত্রের কোলাহল থকে আখেরাতের নির্জনতায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। ইখওয়ান জামাআত গায়বী কুদরতের বার্তাগুলো ধরতে পারলে ফলাফল খুব ইতিবাচক হবে।
আফসোস!তাদের অনেকে গোঁ ধরে আছে।মূলধারা নামক মুলা গলার ফাঁস হওয়ার পরও তার প্রেম আর নেশা ত্যাগ করা যাচ্ছেনা।
আল্লাহ তা’আলা তুর্কী ভাইদেরকে ইখলাস দান করুন।তাদের মানহাজকে বিশুদ্ধ করে দিন!
তাদের ভাবিষ্যৎ কাজের মানচিত্র সঠিক ও নিখুঁত করে দিন।খেলাফতের হৃত গৌরব তাদেরকে আবার ফিরিয়ে দিন।তাদেরকে খোরাসান এবং শামের আরো নিকটবর্তী করে দিন।
তাদেরকে ই’দাদের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন।
‘মন্দের ভাল’ থেকে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সাহাবাওয়ালা আদর্শে উত্তীর্ণ করে দিন। আমিন।
লেখক: মুহাদ্দিস, লালখান বাজার মাদরাসা চট্টগ্রাম।