ইসলামে ইস্তেকামতের গুরুত্ব

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ২৬ ২০১৯, ১৬:২১

মুফতি আহমদ যাকারিয়া: এস্তেকামত শব্দটি আকারে ছোট হলেও তার মর্মার্থ আর ভাবার্থ অত্যন্ত ব্যাপক। তার অর্থ হলো মানব জীবনে আকিদা, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, লেনদেন, ব্যবসা বানিজ্য, অর্থ প্রদান, অর্থ উপার্জন, তথা মানবীয় নীতি নৈতিকতার সব ক্ষেত্রে আল্লাহ্ প্রদর্শিত নির্ধারিত সীমারেখার ভেতরে থেকে সঠিক পথে নিজেকে পরিচালনা করা। জীবনের কোন ক্ষেত্রে আল্লাহ্ প্রদর্শিত নির্ধারিত সীমারেখার বাইরে গিয়ে নিজের পক্ষ থেকে কিছু যোগ করা, আল্লাহর হুকুম পালনে অবহেলা করা এসবই হলো “ইস্তেকামত” পরিপন্থী।

পৃথিবীতে যত অনাচার আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে বা হচ্ছে এর মূল হলো মানুষ ইস্তেকামত’র বৈশিষ্ট্য থেকে সরে যাবার কারণে। ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি ইস্তেকামত না থাকার কারনে মানুষ আজ বিদআ’তে লিপ্ত হচ্ছে অনায়াসে। আর বেদআ’তে পা দেবার পর সে কুফুরি ও শিরকি কাজে লিপ্ত হতে পরোয়া করে না এটাই বাস্তবতা।

রাসুল সাঃ যেভাবে বাতলে দিয়েছেন আল্লাহ্ পাকের সত্তা ও গুণাবলি সম্পর্কে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র হ্রাস-বৃদ্ধি বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যদি হয় তাহলে সেটা হবে স্পষ্ট ভ্রষ্টতা। নবী-রাসুলগণ সম্পর্কে ইসলামে যতটুকু সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে ঠিক ততটুকু করা তারচেয়ে এগিয়ে তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধার সীমারেখা অতিক্রম করে তাদেরকে মানবীয় সমাজ থেকে উচ্চতর জ্ঞান করা, কিংবা তাদেরকে খোদায়ী গুণাবলি ও ক্ষমতার অধিকারী মনে করা স্পষ্টত “ইস্তেকামত” পরিপন্থী। ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা এহেন বাড়াবাড়ি করার কারণেই পথহারা হয়েছে।

ইবাদত করার জন্য আল্লাহ্ যে নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসুল যে পথ প্রদর্শন করেছেন সে অনুযায়ী চলার মধ্যেই মানবের কল্যাণ নিহিত রয়েছে, আর এসব নির্দেশে কোনরূপ কমবেশি বা অবহেলা করা, ধর্মীয় বিধানে নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু যুক্ত করার দ্বারা শয়তান মানুষকে “ইস্তেকামত” থেকে সরিয়ে দেয়। এসব অযথা কর্মকাণ্ডে সে ধারণা করে যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে অথচ সে যে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আল্লাহর বিরাগভাজন লোকে পরিণত হচ্ছে এটা সে ঠাহরই করতে পারছে না।

অতএব প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য হচ্ছে যে, যখন সে কোন কার্য সম্পাদন করার ইচ্ছে করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত হিসেবে তখন তার উচিত হলো পুর্ণ সতর্কতার সাথে তাহকিক করে নেওয়া যে, এ কাজ রাসুল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম এভাবে করেছেন কিনা? তারা যেভাবে করেছেন ঠিক ওভাবে করার মধ্যেই সফলতা।

অনুরূপভাবে আদান-প্রদান, আচার- ব্যবহার, স্বভাব-চরিত্র তথা জীবনের সবক্ষেত্রে কুরআন নির্দেশিত পন্থা আর রাসুল প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করা কর্তব্য। এমনি ভাবে মানুষ বন্ধুত্ব, নিরহঙ্কার, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, কপটতা, ধৈর্য, ক্রোধ, লোভ-লালসা, মিতব্যয়িতা, দানশীলতা, বৈরাগ্য সাধনা, আল্লাহর হুকুম পালনে দৃঢ়তার সঙ্গে চলাচল করা সহ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠা সব কিছুকেই বাস্তবতার নিরিখে রাসুল সাঃ বাস্তবে রূপায়িত করে একটা সুন্দর সুষ্ঠু ও সঠিক মধ্যপন্থার পত্তন করেছেন। নবী সাঃ মুসলমানদেরকে জীবনের সবক্ষেত্রে কিভাবে চলতে হবে সে ব্যাপারে এক নজিরবিহীন মধ্যপন্থা শিখিয়ে গেছেন। এগুলোর পরিপূর্ণ অনুসরণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষ সত্যিকারের মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে। রাসুল সাঃ এর এই অনুসৃত পদ্ধতি সম্পর্কে অনবগত থাকা ও ইস্তেকামতের সঠিক প্রয়োগ ও পরিচর্যা না হওয়ার কারণে সামাজিক বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। জীবনের সকল ক্ষেত্রে দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলার অপর নামই হলো “ইস্তেকামত”।

রাসুল সাঃ পরিপূর্ণ মানুষের বাস্তব উপমা হিসেবে এ ধরাধমে আগমন করেছিলেন। ইস্তেকামতের উপর অটল থাকা ছিলো তার জন্মগত স্বভাব। তথাপি রাসুল সাঃ কে কুরআনে ইস্তেকামতের উপর অটল থাকার আদেশ করেছেন আল্লাহ্ পাক। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, মানব জীবনে ইস্তেকামতের গুরুত্ব কতটুকু।

পৃথিবীতে ইস্তেকামতের গুণে গুণান্বিত হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। মোতাকাদ্দিমীন উলামায়ে কেরাম এ জন্যই বলেন যে, কারামতের চেয়ে ইস্তেকামতের মর্যাদা উপরে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জীবনের সব ক্ষেত্রে সব কাজে ইস্তেকামত অবলম্বন করে আর তাতে যদি তার জীবনে তার দ্বারা কোন অলৌকিক ঘটনা সংগঠিত বা প্রকাশিত নাও হয় তদুপরি ওলীগনের মধ্যে তার মর্যাদা সবার উপরে থাকবে।

সুতরাং সিদ্ধান্ত আপনার; আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে জীবনের সব ক্ষেত্রে ইস্তেকামতের উপর চলার তাওফীক দান করুন।