ইসলামী সংগীত, নাশীদ কিংবা গজল
একুশে জার্নাল
সেপ্টেম্বর ০৮ ২০১৮, ১২:৪৯
সাইফ সিরাজ : বিষয়টা নিয়ে দেখছি বেশ সরগরম ফেবু পাড়া। সেই সঙ্গে এই সরগরমের আগুনে ঘি ঢালছেন কিছু লোক; যারা তীব্র চেষ্টা করে যাচ্ছেন পপুলারিটির জন্য কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছেন কোয়ালিটির বাজারে। সেই সঙ্গে পোষাক ভিডিওগ্রাফী আর শিল্পীদের স্খলন নিয়েও কথা বলছেন অনেকেই। এই কথা যারা বলছেন তাদের অতীত বা বর্তমানও খুব ইখলাস আর ইসলাহে ভরপুর এমনটাও মনে হচ্ছে না তাদের ভাষা আর সমালোচনার পদ্ধতি দেখে। যদিও ইসলামী সংগীত, ভিডিওগ্রাফি, সাউন্ড ইফেক্ট, শিল্পিদের পোশাক ইত্যাদি নিয়ে বহু কথা বলার আছে। বলার যোগ্য লোকও আছেন। বাট যারা বলছেন তাদের অধিকাংশই সমাধান হেদায়েতের চেয়ে নিজের ক্ষোভ আর সক্ষমতা প্রকাশই করছেন শতভাগ। ইনিয়ে বিনিয়ে এক ওকে খুঁচা দিচ্ছেন। বিরোধ বাড়াচ্ছেন। দিন শেষে নিজেও ইনফ্রিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগছেন।
প্রিয় ভাই, এই দেশটা খুব ছোট। এই দেশের আলেমদের সংখ্যাটাও মোট জনসংখ্যার চেয়ে খুব ছোট। সেই আলেমদের মধ্যে ইসলামী সংগীত চর্চাকারী অংশটা আরও ছোট। চর্চাকারীদের মধ্যে কোয়ালিটি নিয়ে কাজ করার অংশটি আরও আরও ছোট। সেই ছোট অংশের মধ্যে ইসলাহ, ইখলাস আর আত্মনিয়ন্ত্রিত অংশটি একেবারে নাই এর কাছাকাছি। এমতাবস্থায় একটি ফতোয়া দিয়ে, খুঁচিয়ে, টার্গেট করে, বকাবাদ্যি করে ফলাফল লাভের আশা করা বৃথাই। বরং ক্ষতস্থান বড় হবে সুস্থতার পথ দীর্ঘ হবে।
ফতোয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞগণ কথা বলবেন। আমার একটা উপলব্ধি শুধু বলবো। ফতোয়ার ভাষা আর ইলামেন্ট মিলিয়ে ফতোয়াটি ক্ষোভাক্রান্ত মনে হয়েছে। ওয়াল্লাহু আলামু। তবে এই ধরণের ফতোয়ার ফলে মানুষের ইসলাহের চেয়ে বিগড়ানো বেশি হবে। ফতোয়ার প্রচারের পদ্ধতি আর প্রচারকদের ভাষাই তার জন্য যথেষ্ট।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত। ফলে যতটা প্রতিক্রিয়া একজন শ্রোতা হিসেবে দিতে পারতাম ততটা দিতে পারছি না। তবে, পোশাক, আচরণ, আমল এই তিনটা বিষয়ে নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছি। ফলাফলও পাচ্ছি। নবরবির ইউসুফ বিন মুনীর, কলরবের বদরুজ্জামান, আহমদ আব্দুল্লাহ, আরিফ আরিয়ানদের সঙ্গে নিয়মিতই কথা বলছি আরেকটু পজেটিভ চেঞ্জের ব্যাপারে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পোশাক নিয়ে সিনিয়র একজনকে কানে কানে শাসনের অনুরোধ করেছি।
আর এই যে ঠিক ইত্যাদি। আচ্ছা ওয়াজ মাহফিলতো আরোও আগেই ফতোয়া পাওয়ার হকদার।
প্রিয় শিল্পীগোষ্ঠী ও শিল্পি ভায়েরা, এই বিতর্ক আর ফতোয়াটাকে আপনারা আপনাদের জন্য একটা রিমেন্ডার হিসেবে নেন। চেঞ্জ সামথিং ইয়োসেল্ফ। ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন ইসলাম, ইখলাস, ইসলাহকে ধারণ করুন। নইলে আরোও বড় ফতোয়ার অপেক্ষায় থাকুন।
সবশেষে, জুনায়েদ জামশেদ রাহ: মিউজিক ছেড়ে ঘরে বসে আছেন। ভাবছেন কী করবেন! সংসার চলবে কেমন করে! মাওলানা তারিক জামিল ও আল্লামা তাকী উসমানির নিকট মাশওয়ারা করতে গেছেন। তাঁরা বললেন, সিস্টেম বদলে দিন। আগে গান গাইতেন। এখন নাশীদ গাইতে থাকুন। এপরপরেরটা তো ইতিহিস। এই জুনায়েদ জামশেদের হাত ধরেই ইসলামী সঙ্গীতে আধুনিকতা আসলো। সাউন্ড ইফেক্ট আসলো। অটোটিউন আসলো।
আল্লাহ আল্লাহ্, মুহাব্বাত কেয়া হে নাশীদগুলোর সাউন্ড ইফেক্ট শুনলে বোকা বনে যেতে হয়। এলাহী তেরে চৌকাঠ পর, মুহাম্মদ কা রওজা, মিঠা মিঠা পেয়ারা পেয়ারা মেরে মুহাম্মদ কা নাম এই নাশীদগুলোর সাউন্ড ডিজাইন আন্তর্জাতিক মানের। তালয়াল বাদরু আলাইনা তে তো দফই ব্যবহার করেছেন। জুনায়েদ জমশেদের জন্য স্বয়ং তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ লিরিক লিখেছেন। খাজা আজিজুর রহমান মাযযুব রাহ: আলাইহের “বহুত দিনো মেরে সেরকাশি থে; ম্যায় তাওবা কারতা হু মেরে বারী” ফাহাদ শাহ গেয়েছেন। শুনলেই আপনা আপনি তাওবা চলতে থাকে মনোজগতে। হযরতের দরবারেও নাকি এই নাশীদ গাওয়া হতো।
যে জুনায়েদ জামশেদ রাহ: এর কথা বললাম তিনি এই দেশে আলেমগণের দাওয়াতে এসেছেন। পাকিস্তানের শীর্ষ দুই ব্যক্তিত্বের অধীনে থেকেই নাশীদ চর্চা করেছেন।
সো, শিল্পিদের কাছে অনুরোধ এই অঙ্গণটাকে পবিত্র রাখুন। আর বিতার্কিকদের কাছে অনুরোধ মাথা ব্যথা ভালো করতে গিয়ে মাথাটাই কেটে ফেলবেন না।
আল্লাহ আমাদের সহীহ আকল এবং বুঝ দান করুন।
-সাইফ সিরাজ
কবি, গীতিকার।