ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আগাগোড়া সব জায়গায় ইসলামকে ধারণ করা চাই
একুশে জার্নাল ডটকম
ফেব্রুয়ারি ১৭ ২০২৫, ১৮:৪৮

বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে জুলাই পরবর্তী করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি’২৫ সোমবার, দুপুর দুইটা থেকে ইবির বটতলায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইবি সভাপতি মুহাম্মদ নোমান আহমদ এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মুহতারাম আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক।
প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ডঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্ট্যাডির ডিন প্রফেসর ডঃ আ ব ম সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী, প্রফেসর ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মাদ সাদেক আহমদ ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুহাম্মাদ দিদারুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, বিগত ষোল বছরে বাংলাদেশে অনেক অন্যায় অবিচার হয়েছে। এই জুলুম গুম খুনের শিকার অনেক মানুষ হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, অসংখ্য মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। একজন গুমের শিকার হলে তার পরিবার কিভাবে দিন কাটায় সেটা কল্পনা করা যায় না। একজন গুমের শিকার হলে তার মা বিশ্বাস করতে চায় না, তার ছেলে আর ফিরবে না। রাতের আঁধারে বাইরে কোনো পাতার আওয়াজ হলেও ধারণা করে, এইতো মনে হয় খোকা আসছে। গুম করার এই মর্মান্তিক দৃশ্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ জাতির কাছে উন্মোচন করেছেন। আমরা এই গুমের রাজ্যে আবার ফিরে যেতে চাই না।
তিনি আরো বলেন, বিগত এই শাসনামলে সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে ইসলাম। আর যারা রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম চায় তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে আরো বেশি। তাদের শুধু জানে মেরে ফেলা হয়েছে তা নয়, তারা হত্যা করার আগে চরিত্রহনন করার চেষ্টা করেছে। এই আওয়ামী লীগকে যদি ক্ষমা করে দেওয়া হয়, এই দেশ এই জাতি যদি তাদেরকে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস আবার নতুনভাবে পর্যবেক্ষণে আনতে হবে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে বৃটিশ দের বিরুদ্ধে ১৯০ বছরের সংগ্রামের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তিন তিনটি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে। প্রথম আধিপত্যবাদ ছিল, বৃটিশ আধিপত্যবাদ। তারপর পশ্চিম বঙ্গের আধিপত্যের পূর্ব বাংলাকে লড়াই করতে হয়েছে। তখন পূর্ব বাংলার উত্থানকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য তারা সহিংস আন্দোলন করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের আধিপত্যবাদের সাথে লড়াই করেই পূর্ব বঙ্গের ইসলাম মুসলমান ও বাংলাদেশের উত্থান হয়েছে। সর্বশেষ আমরা পশ্চিম পাকিস্তানী খানপাঠানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
‘লাহোর প্রস্তাব পাশ হলে সাতচল্লিশেই বাংলাদেশ গঠন হতো’ উল্লেখ করে আরো বলেন, ৪৭, ৭১ আর ২৪ এর বিপ্লবের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা প্রস্তুত করতে হবে। হীনমন্যতায় ভুগলে চলবে না। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেরে বাংলা ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সাতচল্লিশে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছে। লাহোর প্রস্তাবে ম্যাকানিজম করা না হলে তখনই আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হতো। ভিন্ন ভিন্ন দুটো অংশকে জুড়ে দিয়ে এক রাষ্ট্র হওয়ার কথা না। তখনই ভিন্ন রাষ্ট্র হলে পরবর্তীতে আর একাত্তরে পাকিস্তানিদের সাথে লড়াই করা লাগত না। লাহোর প্রস্তাব পাশ হলে সাতচল্লিশেই বাংলাদেশ গঠন হতো। সেই বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। সেখানে রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে থাকতো ইসলাম। সেখানের সংবিধান হতো কুরআন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাধান্য থাকে, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোই থাকে। তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আগাগোড়া সবজায়গায় ইসলামকে ধারণ করা চাই। যদি ইসলামকে ধারণ না করা যায় তাহলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামের স্বার্থকতা থাকে না। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, ঠিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার স্বার্থকতা নাই।
প্রধান আলোচক হিসেবে মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন বলেন, জুলাই আগস্টে আমরা সংগ্রাম করেছি বৈষম্য দূর করার জন্য ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যুগ যুগ ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরাও জুলুম বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন করেছেন। কিন্তু এত আন্দোলন সংগ্রাম করার পরও সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হচ্ছে না । এর অন্যতম কারণ হলো, আমাদের ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা। এই শিক্ষাব্যবস্থা সমাজের মধ্যে বৈষম্যের বীজ বপন করে তাই। ছাত্র মজলিস দীর্ঘদিন যাবত দাবী করে যাচ্ছে, দেশের মাটি মানুষের জন্য উপযুক্ত একটি স্বাধীন শিক্ষাব্যবস্থার। ভিনদেশীদের চাপিয়ে দেওয়া এই শিক্ষাব্যবস্থা কখনো বৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা গঠন করতে পারে না।
উক্ত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইবি শাখার আহবায়ক শাহেদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত, জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ উল্লাহ শেখ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক এইচ এম সুইট প্রমুখ।