ইসলামি শরীয়তে ধর্ষক প্রতিরোধের উপায় ও পন্থা
একুশে জার্নাল
ফেব্রুয়ারি ২৫ ২০২৫, ১০:১৯

মাওলানা উসামা সিরাজ
প্রশ্ন:
ক. ধর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য ধর্ষণ করতে উদ্যত ব্যক্তিকে স্বয়ং আক্রান্ত নারী বা তাঁর পরিবারের কেউ কি হত্যা করতে পারবে?
খ. ধর্ষণের মুহূর্তে ধর্ষিতা বা তার পরিবারের লোকজনের অক্ষমতার কারণে অন্য কেউ কি ধর্ষককে হত্যা করতে পারবে?
গ. ধর্ষণ পরবর্তীকালে ধর্ষণকারীকে ধর্ষিতার পক্ষ থেকে বিচারবহির্ভূতভাবে কেউ হত্যা করতে পারবে?
উত্তর: (ক)
শরীয়তে আবশ্যক হল, একজন নারী ধর্ষণের সম্মুখীন হলে নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় সাধ্যমত সর্বাত্মক উপায়ে ধর্ষককে প্রতিহত করবে। এমনকি ধর্ষককে খুন করে হলেও তাকে প্রতিহত করতে হবে।
হাদিসে এসেছে—
عن سعيد بن زيد رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من قُتل دون ماله فهو شهيدٌ، ومن قُتل دون دمه فهو شهيدٌ، ومن قُتل دون دينه فهو شهيدٌ، ومن قُتل دون عرضه فهو شهيدٌ» (رواه أبو داود والترمذي وقال: حديث حسن صحيح).
হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, ‘যে নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হল সে শহীদ। যে নিজের জান রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হল সে শহীদ। যে নিজের দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হল সে শহীদ। যে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হল সে শহীদ’। [নাসাঈ: ৭/১১৬, হা. ৪০৯৫। আবু দাঊদ: ৪/২৪৬, হা. ৪৭৭২। তিরমিযি: ৪/৩০, হা. ১৪২১। ইমাম তিরমিযি বলেন, হাদিসটি হাসান-সহিহ।]
রাসূল ﷺ অন্যত্র বলেন—
«من قُتل دون مظلمته فهو شهيدٌ» (رواه أحمد والنسائي وهو حديث صحيح كما قال العلامة الألباني في صحيح الجامع).
‘যে জুলুম প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হল সে শহীদ’। [মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৯৬, হা. ২৭৭৯, সুনানে নাসাঈ: ৭/১১৭, হা. ৪০৯৬। শাইখ আলবানী রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ।]
ধর্ষণের শিকার নারী যদি ধর্ষককে হত্যা করে ফেলে, তবে সেই নারীর উপর কোন কিছু আরোপিত হবে না
ইমাম ইবনে মুনযির রহ. ইমাম শাফেয়ী রহ. এর বরাতে উল্লেখ করেন—
مَنْ أُريد مالُه أو نفسُه أو حريمُه ولم يمكنه الدفعُ إلا بالقتل، فله ذلك، وليس عليه قَودٌ ولا ديةٌ ولا كفارةٌ.
]سبل السلام: 3/507[
অর্থাৎ, যার ধনসম্পদ অথবা প্রাণ কিংবা সম্ভ্রম লুট করার চেষ্টা করা হয়, আর হত্যা করা ব্যতীত আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার কোন উপায় না থাকে তাহলে তার সেই অধিকার আছে। এতে তার উপর কোনরকম দণ্ড, রক্তপণ কিংবা কাফফারা আবশ্যক হবে না। [সুবুলুস সালাম: ৩/৫০৭]
ইমাম নববী রহ. বলেন—
أما الصائل فكل قاصدٍ من مسلمٍ وذميٍّ وعبدٍ وحرٍّ وصبيٍّ ومجنونٍ وبهيمةٍ يجوز دفعه، فإن أتى الدفع على نفسه، فلا ضمانَ بقصاصٍ ولا ديةٍ ولا كفارةٍ ولا قيمةٍ] وقال: وَيَجُوزُ لِغَيْرِ الْمَصُولِ عَلَيْهِ الدَّفْعُ، وَلَهُ دَفْعُ مُسْلِمٍ صَالَ عَلَى ذَمِّيٍّ، وَأَبٍ صَالَ عَلَى ابْنِهِ، وَسَيِّدٍ صَالَ عَلَى عَبْدِهِ؛ لِأَنَّهُمْ مَعْصُومُونَ مَظْلُومُونَ. وقال: وَفِي الْحَدِيثِ الصَّحِيحِ: «مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ». فَلَهُ الدَّفْعُ فِي كُلِّ هَذِهِ الصُّوَرِ، وَإِنْ أَتَى الدَّفْعُ عَلَى الصَّائِلِ، فَلَا ضَمَانَ فِيهِ، وَلِلْأَجْنَبِيِّ دَفْعُهُ كَذَلِكَ حِسْبَةً، [ روضة الطالبين7/391].
‘আক্রমণকারী মুসলিম, জিম্মি, গোলাম, স্বাধীন, শিশু-কিশোর, চতুষ্পদ প্রাণী যে-ই হোক না কেন তাকে প্রতিরোধ করা বৈধ। প্রতিরোধে যদি আক্রমণকারীর প্রাণহানি ঘটে তাহলে এতে কোনরকম কিসাস, রক্তপণ, কাফফারা কিংবা অর্থ জরিমানা আবশ্যক হবে না। তিনি বলেন, যার উপর আক্রমণ করা হয়নি তারও প্রতিরোধ করার সুযোগ আছে। যেকেউ চাইলে জিম্মির উপর আক্রমণকারী মুসলিমকে, সন্তানের উপর আক্রমণকারী পিতাকে, গোলামের উপর আক্রমণকারী মুনিবকে প্রতিহত করতে পারবে। কারণ, এরা প্রত্যেকেই সুরক্ষা পাবার উপযুক্ত মজলুম। সহিহ হাদিসে আছে¸ ‘যে নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হল সে শহীদ’। অতএব, এ সকল ক্ষেত্রে প্রতিরোধের বৈধতা আছে। প্রতিরোধে যদি আক্রমণকারীর প্রাণহানি ঘটে তাহলে এতে কোন জরিমানা নেই। কোন অপরিচিত ব্যক্তিও এ সকল ক্ষেত্রে সওয়াবের আশায় প্রতিরোধ করতে পারবে। [রওযাতুত তালেবীন: ৭/৩৯১]
ইবনে কুদামা হাম্বলি রহ. বলেন—
ومن صال عليه آدميٌ أو غيره فقتله دفعاً عن نفسه لم يضمنه؛ لأنه قتله بالدفع الجائز، فلم يجب ضمانه .] الشرح الكبير -5/455 [
কারো উপর কোন মানুষ কিংবা অন্যকিছু আক্রমণ করলে সে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে আক্রমণকারীকে হত্যা করে ফেললে এর কোন জরিমানা নেই। কারণ সে তাকে বৈধ প্রতিরোধের মাধ্যমে হত্যা করেছে। অতএব, এর কোন জরিমানা আবশ্যক হবে না। [আশ শারহুল কাবীর: ৫/৪৫৫]
আল-মাউসু’আতুল ফিক্বহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যা-এ আছে—
وإنْ قتلَ المصولُ عليه الصائلَ دفاعاً عن نفسه ونحوها، فلا ضمان عليه -عند الجمهور- بقصاصٍ ولا ديةٍ ولا كفارةٍ ولا قيمةٍ، ولا إثم عليه، لأنه مأمورٌ بذلك.) الموسوعة الفقهية الكويتية: 28/106(
যদি আক্রমণের শিকার ব্যক্তি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে আক্রমণকারীকে হত্যা করে ফেলে, তবে এতে কোন কিসাস, রক্তপণ, কাফফারা এবং অর্থমূল্যের কোন জরিমানা নেই। এমনকি এতে কোন গোনাহও নেই। এটাই জুমহুর তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত। কারণ আক্রমণের শিকার ব্যক্তি এক্ষেত্রে এরূপ প্রতিরোধের ব্যাপারেই আদিষ্ট। [আল-মাউসু’আতুল ফিক্বহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যা: ২৮/১০৬]
সহিহ বুখারিতে আছে—
عن المغيرة قال: قال سعد بن عبادة: لو رأيت رجلا مع امرأتي لضربته بالسيف غير مصفح. فبلغ ذلك رسول الله – صلى الله عليه وسلم – فقال: تعجبون من غيرة سعد؟ والله لأنا أغير منه، والله أغير مني، ومن أجل غيرة الله حرم الفواحش ما ظهر منها وما بطن.
হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা রা. থেকে বর্ণিত, সা’দ ইবনে উবাদা রা. বলেন, আমি যদি কোন পুরুষকে আমার স্ত্রীর সাথে দেখি তাহলে অবশ্যই তাকে তলোয়ার দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবো। হযরত মুগিরার এ কথাটি রাসূল ﷺ জানতে পেরে বললেন, তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদা দেখে আশ্চর্য হচ্ছো? আল্লাহর শপথ! আমি তার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। আর আল্লাহ আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। এই আত্মমর্যাদার কারণেই তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতা হারাম করেছেন। [সহিহ বুখারী: ৯/১২৩, হাদিস নং ৭৪১৬]
সাদ ইবনে উবাদা রা. এর উক্তি শুনে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মন্তব্য লক্ষণীয়। তিনি সাদ রা. কে কোনরকম নিষেধ করেন নি, এবং তার কথার কোন ধরনের নিন্দাও করেন নি। বরং তিনি জোরালোভাবে তার মনোভাবের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন।
উত্তর: (খ)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন—
لا يقفن أحدكم موقفاً يقتل فيه رجل ظلماً، فإن اللعنة تنزل على من حضره حين لم يدفعوا عنه، ولا يقفن أحد منكم موقفاً يضرب فيه رجل ظلماً فإن اللعنة تنزل على من حضره حين لم يدفعوا عنه.
‘তোমাদের কেউ যেন এমন জায়গায় অবস্থান না করে, যেখানে কোন ব্যক্তিকে জুলুমবশত হত্যা করা হয়। কারণ, যারা সেখানে উপস্থিত থেকেও তাঁর প্রতিরোধ না করে, তাদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হয়। তোমাদের কেউ যেন এমন জায়গায় অবস্থান না করে, যেখানে কোন ব্যক্তিকে জুলুমবশত প্রহার করা হয়। কারণ, যারা সেখানে উপস্থিত থেকেও তাঁর প্রতিরোধ না করে, তাদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হয়’। [আল-মু’জামুল কাবীর, তাবারানী (১১/২৬০)।]
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ এবং তালহা বিন সা’দ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত—
مَا مِنَ امْرِئٍ يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ تُنْتَهَكُ فِيهِ حُرْمَتُهُ وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ، وَمَا مِنَ امْرِئٍ يَنْصُرُ مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ يُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ وَيُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ، إِلَّا نَصَرَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ نُصْرَتَهُ
‘যে ব্যক্তি এমন স্থানে অপর মুসলিমের সাহায্য পরিত্যাগ করে, যেখানে তার সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা থেকে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে’। [সুনানে আবু দাঊদ (৪/২৭১), মুসনাদে আহমাদ (২৬/২৮৮)।]
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেন—
يا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّكُمْ تَقْرَؤُونَ هَذِهِ الْآيَةَ {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَّنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ} [المائدة: 105] وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابِهِ
হে লোকসকল, তোমরা এ আয়াত পাঠ করে থাকো (অর্থ: হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব। যদি তোমরা নিজেরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। সুরা মায়েদা: ১০৫) অথচ আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে ইরশাদ করতে শুনেছি— ‘মানুষ যদি কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তাকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অতি শীঘ্রই তাদের সকলকে তার ব্যাপক শাস্তিতে পাকড়াও করবেন’। [সুনানুত তিরমিজি : ২১৬৮; সুনানু আবি দাউদ : ৪৩৩৮, মুসনাদে আহমাদ : ১/২০৮]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন—
وَأَمَّا قِتَالُ الدَّفْعِ فَهُوَ أَشَدُّ أَنْوَاعِ دَفْعِ الصَّائِلِ عن الحرمة والدين فواجب إجماعاً، فالعدو الصائل الذي يفسد الدين والدنيا لا شيء أوجب بعد الإيمان من دفعه، فلا يشترط له شرط، بل يدفع بحسب الإمكان.
প্রতিরক্ষার লড়াই হল সম্ভ্রম ও দ্বীনের উপর আক্রমণকারী প্রতিরোধের সবচে গুরুত্বপুর্ণ প্রকার। এ লড়াই সকলের ঐক্যমত্যে অপরিহার্য৷ কারণ, যে আক্রমণকারী শত্রু মুসলমানদের দীন ও দুনিয়া উভয়টি ক্ষতিগ্রস্ত করে, ইমান আনার পর তাকে প্রতিহত করার চেয়ে বড় কোনো অপরিহার্য বিষয় নেই৷ তাই তা ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোনো শর্ত নেই; বরং সাধ্যমতো তাদের প্রতিহত করা হবে৷
[আল-ফাতাওয়াল কুবরা লি-ইবনে তাইমিয়া : ৫/৫৩৮]
উত্তর: (গ)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন—
لو فرض عجز بعض الأمراء عن إقامة الحدود والحقوق أو إضاعته لذلك: لكان ذلك الفرض على القادر عليه، وقول من قال: لا يقيم الحدود إلا السلطان ونوابه، إذا كانوا قادرين فاعلين بالعدل، كما يقول الفقهاء: الأمر إلى الحاكم إنما هو العادل القادر فإذا كان مضيعاً لأموال اليتامى؛ أو عاجزاً عنها لم يجب تسليمها إليه مع إمكان حفظها بدونه، وكذلك الأمير إذا كان مضيعاً للحدود أو عاجزاً عنها لم يجب تفويضها إليه مع إمكان إقامتها بدونه، والأصل أن هذه الواجبات تقام على أحسن الوجوه، فمتى أمكن إقامتها من أمير لم يحتج إلى اثنين ومتى لم يقم إلا بعدد ومن غير سلطان أقيمت إذا لم يكن في إقامتها فساد يزيد على إضاعتها فإنها من “باب الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر”.
‘যদি কখনো কোন শাসক ইসলামি দণ্ডবিধি ও অধিকার বাস্তবায়নে অক্ষম হয়ে পড়েন, কিংবা শাসক স্বয়ং ইসলামি দণ্ডবিধি অকার্যকর করেন তাহলে সেই ফরয কর্তব্য ন্যস্ত হবে এ বিষয়ে সক্ষম ব্যক্তির উপর। যারা বলেন, ‘হুদুদ তথা ইসলামি দণ্ডবিধি একমাত্র শাসকবর্গ কিংবা তাদের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিবর্গ কার্যকর করবে’—তাদের এই বক্তব্য সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন শাসকবর্গ এ বিষয়ে সক্ষম হবেন এবং ন্যয্যভাবে বিচার করতে পারবেন। যেমন, ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ‘ক্ষমতা প্রয়োগ শাসকের দায়িত্বে’—সেই শাসক হল ন্যায়পরায়ণ, শরীয়া আইন বাস্তবায়নে সক্ষম শাসক’। এখন যদি স্বয়ং শাসক এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকেন, কিংবা সেই সম্পদ রক্ষা করতে অক্ষম হন, তাহলে তাদের ধনসম্পদ তার কাছে অর্পণ করা আবশ্যক হবে না, যদি তিনি ব্যতীত তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। তদ্রুপ শাসক যদি ইসলামি দণ্ডবিধি অকার্যকর করেন, কিংবা তা কার্যকর করতে অক্ষম হন, তাহলে সে দায়িত্ব তার কাছে অর্পণ করা আবশ্যক হবে না, যদি তিনি ব্যতীত তা কার্যকর করা সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে মূলনীতি হল, এসকল আবশ্যকীয় বিধানসমূহ সর্বোত্তম উপায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। সুতরাং যখন এগুলোর বাস্তবায়ন কোন একজন শাসকের পক্ষে সম্ভব হবে তখন আর দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যখন শাসক ব্যতীত অন্য কিছু লোকের মাধ্যমেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে (শাসকের পক্ষে সম্ভব হবে না) তখন সেভাবেই বাস্তবায়ন করা হবে, যদি এভাবে দণ্ডবিধি বাস্তবায়নে এমন কোন বিশৃঙ্খলা না হয় যা দণ্ডবিধি অকার্যকর করার চেয়েও গুরুতর। কারণ, ইসলামি দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন ‘আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের অন্তর্ভূক্ত’। [মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৪/১৭৬]
শরীয়তের বিধিবিধান বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ হারিয়ে যাওয়ার কালে এবং মুসলিম প্রধান দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনী কর্তৃক সেদেশের মুসলিম মা-বোনদের গণধর্ষণের যুগে উলামায়ে কেরামের ফতওয়া সাপেক্ষে, সম্ভব হলে তাদের তত্ত্বাবধানে ধর্ষককে হত্যা করা বৈধ হবে। যেহেতু সন্দেহ বশত কাউকে হত্যা করা হারাম, তাই ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত যেকাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত হত্যা করা যাবে না যতক্ষণ না এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে না।
শহীদ জাস্টিস শাইখ আব্দুল কাদের আওদাহ রহ. লিখেছেন—
“ولقد بحث الفقهاء هذه المسألة فخرجوا من بحثها مجمعين على أن إقامة عقوبات الحدود واجبة على ولي الأمر، فإذا أهمل إقامتها كان من واجب كل فرد أن يقيمها دون أن يعتبر مرتكباً لجريمة، فإذا أقامها سقط الواجب بإقامتها عن غيره، ومعنى هذا أن الفقهاء يعتبرون إقامة الحدود من الفروض التي تلزم جميع الأفراد حاكمين ومحكومين، ولا تسقط عنهم إلا إذا أقيمت، ولا يجوز فيها عفو ولا إباحة. وأجمع الفقهاء أيضاً على أن العقوبات المقررة لجرائم القصاص والدية حكمها حكم الحدود، فهي واجبة الإقامة ما لم يعفو المجني عليه أو وليه عن العقوبة، فإذا أهمل ولي الأمر إقامتها كان للمجني عليه أن يقتص لنفسه، وكان لولي دم المجني عليه أن يقتص من الجاني دون أن يعتبر القصاص في هذه الحالة جريمة. واتفق الفقهاء على أن ولي الأمر ليس له أن يحل ما حرم الله، ولا أن يبيح ما أمر بمنعه، أياً كان نوع العقوبة المقررة على الفعل المحرم”. [التشريع الجنائي الإسلامي: 1/ 258]
‘ফুকাহায়ে কেরাম এ মাসআলায় বিস্তর গবেষণা করে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, হুদুদ তথা শরয়ী দণ্ডবিধি কার্যকর করা শাসকবর্গের উপর ওয়াজিব। এখন যদি শাসক সেই দায়িত্ব বাস্তবায়নে অবহেলা করেন তখন প্রত্যেকের উপর তা বাস্তবায়ন করা আবশ্যক হয়ে যায়। এবং তা বাস্তবায়নকারী কোন অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে না। যে কেউ তা বাস্তবায়ন করলেই অন্য সকলে সেই দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এর অর্থ হল, ফুক্বাহায়ে কেরাম হুদুদ-কেসাস কার্যকর করাকে এমন সকল ফরয বিধানের অন্তর্ভুক্ত মনে করেছেন যেগুলো শাসক-জনগণ সকলের জন্যই অবধারিত। যা কেবলমাত্র কার্যকর করার মাধ্যমেই নিষ্পন্ন হতে পারে। এখানে কোনরকমের ক্ষমা ও মার্জনার অবকাশ নেই। ফুক্বাহায়ে কেরাম এ বিষয়েও একমত হয়েছেন যে, কিসাস ও দিয়ত আবশ্যক হয় এমন অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডসমূহের বিধান হুদুদের বিধানের মতই। স্বয়ং ভিক্টিম কিংবা তার পরিবারের লোকেরা ক্ষমা করা পর্যন্ত এ বিধান কার্যকর করা ওয়াজিব থাকবে। সুতরাং শাসক যদি তা কার্যকর করতে অবহেলা করে তাহলে ভিক্টিমের এই অধিকার আছে যে, সে নিজের কিসাস নিজেই গ্রহণ করবে। এমনকি ভিক্টিমের অভিভাবকের এই অধিকার আছে যে, সে আসামি থেকে কিসাস করবে। এই পরিস্থিতিতে কিসাস গ্রহণ কোন অন্যায় বলে গণ্য হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম এই ব্যাপারে একমত যে, কোন শাসকের এই অধিকার নেই যে, আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করবে, কিংবা আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন তার বৈধতা দিবে। হারাম কাজের ব্যাপারে নির্ধারিত শাস্তির ধরন যেমনই হোক’ (তা পরিবর্তনের কোন অধিকার কোন শাসকের নেই)।
সূত্র:
]التشريع الجنائي الإسلامي: 1/ 258، وانظر: الإقناع ج4 ص244، الأم ج6 ص171، حاشية البناني ج8 ص118، شرح فتح القدير ج4 ص112- 113، 160- 161[.
وهناك قواعد فقهية مستقرة تقضي بأن الحاكم وكيل عن الأمة وإذا لم يقم بواجبه ففعل المجتمع مُمَثَّلا في علمائه وقادة الرأي فيه،
ونحن نعلم أن حربا كاملة قامت بسبب كشف عورة امرأة، ولا نقول اغتصابها، فقد أورد ابن هشام في سيرته عن أبي عون قال: كان من أمر بني قينقاع أن امرأة من العرب قدمت بجلب لها، فباعته بسوق بني قينقاع وجلست إلى صائغ هناك منهم، فجعلوا يريدونها على كشف وجهها، فأبت، فعمد الصائغ إلى طرف ثوبها فعقده إلى ظهرها، فلما قامت انكشفت سوأتها; فضحكوا بها، فصاحت، فوثب رجل من المسلمين على الصائغ فقتله، وكان يهوديا، فشدت اليهود على المسلم فقتلوه، فاستصرخ أهل المسلم المسلمين على اليهود فأغضب المسلمون، فوقع الشر بينهم وبين بني قينقاع. [السيرة النبوية: 3/ 314. ط. دار الجيل، والبداية والنهاية: 5/ 319-320. ط. هجر]. وفيه إشارة إلى أن المجتمع بأسره يجب أن ينتفض لمنع الرذيلة والدفاع عن عرض المسلمات.
লেখক পরিচিতি: মাওলানা উসামা সিরাজ। শিক্ষক, আরবী ভাষা ও সাহিত্য। লেখক, গবেষক। [email protected]