ইফার মাদরাসা শিক্ষকদের বেতনহীন মানবেতর জীবন-যাপন
একুশে জার্নাল
জুন ২৪ ২০২০, ০৯:৩২

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা: গত ১১ মে পরিকল্পনা কমিশন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবিত পাঁচ বছর মেয়াদি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ৩ হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ প্রকল্প থেকে দারুল আরকাম মাদ্রাসাকে বাদ রাখা হয়। এতে চরমভাবে হতাশায় পড়েন শিক্ষকরা। উক্ত বিষয়ে যুগান্তর, ইনকিলাব সহ কয়েকটি জাতীয় পত্র-পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্প যাতে দ্রুত পাশ হয় সে জন্য জাতীয় সংসদ সদস্য, ইফার গভর্নংবডি সদস্যও সুপারিশ করেছেন বলে জানা যায় একাধিক সূত্রে।
মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প থেকে দারুল আরকাম মাদ্রাসাকে বাদ দেয়ায় অনেকটা হতাশা ও উদ্বিগ্ন মাদ্রাসা শিক্ষকরা।
একদিকে করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির প্রাদূর্ভাবে কষ্টে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রায় ৬ মাস যাবত বেতন- সম্মানী/ ভাতা না পেয়ে চরমভাবে হতাশায় ভুগছেন যা একাধিক শিক্ষক ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম /এফবি তে প্রকাশ হওয়া অনেক পোষ্ট / মন্তব্য থেকে কয়েকজন শিক্ষকদের লেখা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হল
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাফেজ মাওলানা মো. সাখাওয়াত হোসেন (এমএসএস), দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা, ফরিদপুর। উনি লেখেন>
“দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক অভিপ্রায় (স্বদিচ্ছায়) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প সময়ে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। তাই আমি আশা করি, শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব দ্রুত ভালো একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তা করে প্রায় ২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী, ২০২০ জন শিক্ষক, অভিভাবক, জমিদাতা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং হাজার হাজার রেজাল্ট প্রত্যাশীদের মুখে হাঁসি ফোটাবেন।”
মো. মোবারক হোসেন, দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা, ময়মনসিংহ। উনি লেখেন>
“অনেক স্বপ্ন নিয়ে দারুল আরকামে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ছিলাম, স্বপ্ন কি বাস্তবে রূপ নেবে না ?”
হাফেজ মাওলানা ছানাউল্লাহ,পাঁচানী দারুল আরকাম মাদ্রাসা, মতলব উত্তর, চাদঁপুর। উনি লেখেন>
“এই মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যার দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ‘দারুল আরকাম মাদ্রাসা’ জাতীয়করণ হওয়া প্রাণের দাবী।”
মুফতী আলমাস হোসাইন, দারুল আরকাম মাদ্রাসা, ঢাকা। উনি লেখেন>
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষকগণ দীর্ঘ ৬মাস যাবৎ বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীপন-যাপন করছে।”
হাফেজ মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, এ কে এম দারুল আরকাম মাদ্রাসা, চাখার, বানারীপারা, বরিশাল। উনি লেখেন>
“মুজিব মানে আর কিছু নয় মুজিব মানে মুক্তি” এই মুজিব বর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদরাসা স্হায়ী করণে এবং শিক্ষকদের ০৬ মাসের বেতন ভাতা প্রদানে প্রধান মন্ত্রী ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
হাফেজ মাওলানা হোজায়ফা আল মাহমুদ, দারুল আরকাম মাদরাসা, ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর। উনি লেখেন>
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিশুদের কান্না দেখার মত কেউ নেই।”
মো. জিল্লুর রহমান, চরমজিদ দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসা, সুবর্ণচর, নোয়াখালী। উনি লেখেন>
“প্রধান মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকগণ করোনার মধ্যে ৬মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।”
হাফেজ মাওলানা ফয়জুল হাসান, গদীরাশী দারুল আরকাম মাদ্রাসা, জকিগঞ্জ, সিলেট। উনি লেখেন>
“বর্তমান করোনা মহামারীর সময় দাঃ আঃ শিক্ষকদের দীর্ঘ ৬ মাস বেতনহীন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তা খুবই দুঃখ জনক। দ্রুত প্রজেক্ট পাশ করে অথবা লোন হিসেবে হলেও শিক্ষকদের সম্মানী দেয়ার জন্য কতৃপক্ষের কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি।”
হাফেজ মাওলানা নাঈম, হেলেঞ্চাপাড়া দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, শাজাহানপুর বগুড়া। উনি লেখেন>
“প্রথমেই (দাশিকস) কেন্দ্রীয় কমিটিকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।আপনারা এগিয়ে যান সফলতা আসবেই, ইনশাআল্লাহ্। প্রত্যেক শিক্ষক ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য দোয়া আছে, থাকবে এবং আপনাদের এই প্রচেষ্টা মহান প্রতিপালক সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে ক্ববুল করবেন ইনশাআল্লাহ্। শুকরান।”
এদিকে জানা যায়, গত (২১জুন) সকাল দশটায় দারুল আরকাম মাদরাসরা শিক্ষক কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ (দাশিকস) এর সভাপতি মুফতী মহিউদ্দীন আমিনীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)র হেড অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন এবং দাবি-দাওয়া সম্বলিত লিখিত আবেদন পেশ এবং তা অফিস নিবন্ধিত হয়।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন দারুল আরকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ (দাশিকস)-এর সাধারন সম্পাদক মাওলানা মো. আনাস মাহমুদ ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাফেজ মাও. হাবিবুর রাহমান।
সূত্রে জানায়, ডিজি মহোদয় হোম কোয়ারেইন্টাইনে থাকায় উনার (ডিজি) একান্ত সচিব জনাব মশিউর রহমান স্যারের সাথে মতবিনিময় হয়। আমাদের দাবিগুলো পুনরায় লিখিত আকারে পেশ করা হয়। পরিকল্পনা বিভাগের ডাইরেক্টর ম্যাডাম হাজেরা খাতুন বলেন, আপনাদের ফাইল সম্পন্ন হয়েছে। ডিজি স্যারের কাছেও এককপি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে কাট-সাট করার পর অতি দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, ইনশাআল্লাহ ।
সমন্বয় বিভাগ ও বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের ডাইরেক্টর মহিউদ্দীন মজুমদার স্যারের সাথে মতবিনিময়ের পর স্যার অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত বলেন, আপনাদের ফাইল প্রস্তুত। অচিরেই প্রকল্প পাশ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রতিনিধি দল আরো জানায়, আমরা একে একে পরিকল্পনা বিভাগ, সমন্বয় বিভাগ ও মসজিদ মিশনসহ বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকগণের সাথে সাক্ষাৎ করি। প্রকল্প পাস, সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে স্যারদের সাথে এক মত বিনিময় করা হয়।
সম্মানিত সকল পরিচালক স্যারগণ শিক্ষক প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেন যে, মহাপরিচালক মহোদয় অনুমোদন করলে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই মন্ত্রনালয়ে ফাইল জমা হবে, ইনশাআল্লাহ এবং সকলেই যেহেতু এই প্রকল্পের বিষয়ে আন্তরিক তাই খুব দ্রুত প্রকল্পটি পাস হবে ইনশাআল্লাহ।