ইউরোপের তিন দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ১৬ ২০২০, ১০:১০

ইউরোপের যে তিনটি দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি হয়েছে তারা সবাই জানিয়েছে যে গত একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। ইতালিতে ৩৬৮ জন মারা গেছে। সব মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৯ জনে। স্পেনে একদিনে ৯৭ জন মারা যাওয়ার পর প্রাণহানির সংখ্যা হয়েছে ২৮৮ জন। আর ফ্রান্সে একদিনে ২৯ জন মারা গেছে। সব মিলিয়ে মোট প্রাণহানি হলো ১২০ জন মানুষের।

যুক্তরাজ্যেও একদিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ১৪ জন মারা যাওয়া মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।

প্রাদুর্ভাবের কারণে ইউরোপের সরকারগুলো নাগরিকদের চলাচল সীমিত করেছে এবং সীমান্তেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

সোমবার সকাল থেকে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক এবং লুক্সেমবার্গের সাথে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে জার্মানি। স্পেনের সাথে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দিয়েছে পর্তুগাল।

নাগরিকদের চলাচল সীমিত করেছে চেক রিপাবলিক সরকার। দেশটি ঘোষণা দিয়েছে যে, জনগণ কাজে যাওয়া ও ফেরা, খাবার বা ওষুধ কেনা এবং জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতে পারবে। এছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের চলাচলে স্থানীয় সময় রবিবার মধ্যরাত থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

সোমবার থেকে এক সাথে পাঁচজনের বেশি মানুষের সমাগম নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রিয়া। ২৯ মার্চ পর্যন্ত পাব বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ইউরোপের অনেক দেশেই স্কুল বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, চীনে শুরু হওয়া মহামারির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ইউরোপ।

ভাইরাস সংক্রমণে চিত্র কেমন?

এই সংকট বিষয়ে ধারণা দিতে, সুইজারল্যান্ড বলেছে যে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮০০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। যা নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২২০০ জনে। দেশটিতে ১৪ জন মারা গেছে।

এই প্রাদুর্ভাবের সবচেয়ে বেশি ইতালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৪৭ জন এবং মিলানের ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শুধু লম্বার্ডি এলাকাতেই মারা গেছে ১২১৮ জন।

গত সোমবার পুরো দেশ অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেয় ইতালি সরকার। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে নাগরিকদের চলাচলেও। খাবার আর ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব কিছু বন্ধ থাকবে। এর আগে স্কুল, ব্যায়ামাগার, জাদুঘর, নাইটক্লাব এবং অন্যান্য স্থান বন্ধ করে দেয়া হয়।

শনিবার, ৭৭৫৩ জন আক্রান্ত থাকা স্পেন এবং ৫৪০০ জন আক্রান্ত থাকা ফ্রান্স, এই দেশ দুটি নিজেরাই আলাদাভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

কাজ কিংবা খাবার ও ওষুধ কেনা ছাড়া সব ধরনের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্পেনের সরকার।

ফ্রান্সে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, সিনেমা এবং বেশিরভাগ দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে।

ব্যাপকহারে সমন্বিত পদক্ষেপ ও সম্পদ দিয়ে মহামারিকে রুখে দিতে সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন।

তিনি বলেছেন, কোনো একক দেশে আলাদাভাবে উৎপাদনের পরিবর্তে জোটবদ্ধ ভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম যেমন ভেন্টিলেটর, পরীক্ষার কিট এবং মাস্কের উৎপাদন বাড়াবে এবং পরে সেগুলো অন্য দেশে সরবরাহ করা হবে।

জোটভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য দেশে এসব পণ্যের রপ্তানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংকট মোকাবেলায় বিশ্বের বাকিরা কী করছে?

এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এক লাখ ৬২ হাজার ৬৮৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে যার অর্ধেকের বেশিই আক্রান্ত হয়েছে শুধু চীনে (৮১,০০৩)। প্রায় ৬০৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছে যার মধ্যে ৩০৮৫ জনই চীনে মারা গেছে।

বুধবার থেকে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশের নাগরিকদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দেশটিতে ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, তার দেশ এখন স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া মোকাবেলায় কাজ করছে। সেই সাথে দেশ জুড়ে ‘জাতীয় দুর্যোগ অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন তিনি।

মহামারির প্রভাব থেকে মার্কিন অর্থনীতিকে রক্ষায় ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিমানবন্দরে ইউরোপ থেকে ফিরে আসা মার্কিনিদের স্ক্রিনিং নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা।

২৬টি ইউরোপীয় দেশ থেকে আমেরিকান ছাড়া অন্য নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ড।

করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকায় ৬২ জন মারা গেছে এবং ৩২৪৪ জন সংক্রমিত হয়েছে।

-বিবিসি