আসল সংখ্যা জানা অসম্ভব; নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ১২ ২০২০, ১৫:৫২

ডা.রাইক রেদোয়ান;
বাংলাদেশে ৪৯২টা উপজেলা আছে। প্রতিদিন আমরা টেস্ট করছি ১২,০০০ এর মত (এখন, আগে তো ১০০০ অ হয়েছে মাত্র একদিনে)। তার মানে প্রত্যেক উপজেলাতে ২৪টা করে টেস্ট করা হচ্ছে গরে।
এখানে আরো অনেক কিন্ত আছে। আমরা জানি ঢাকায় অনেক বেশি টেস্ট হচ্ছে, চট্টগ্রামেও। এর মানে অনেক অনেক উপজেলা আছে যেখানি প্রতিদিন কোন টেস্টই হচ্ছেনা।
তাই প্রতিদিনের সংখ্যায় একটা গ্যাপ আছে। চট্টগ্রামে মাঝখানে একদিনে ৫০% এরো বেশি পজিটিভ আসে। তার মানে টেস্ট বাড়ালেই সংখ্যা বাড়বে। তাছাড়া কবরস্থানে অনেক বেশি কবর দেয়া হচ্ছে প্রতিদিন, যেটা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ইকোনমিস্ট এ বলল গতকাল যে নারায়নগঞ্জের সরকারি কবরস্থানে মাসে ২৫০ দাফন হয়। কিন্ত মে মাসে ৫৭৫ হয়েছে, যার মধ্যে ৭০ জন কোভিড। একদম হালকা ভাবে হিসাব করলেও বলা যেতে পারে যে কম হলেও আরো ১০০-১৫০ জন কোভিড ছিল যাদের টেস্ট হয়নাই বা টেস্ট নেগেটিভ এসেছে। নিজের বন্ধু সার্কেলেই দেখেছি একদিনে ৩০-৩৫ মৃত্যুর খবর শুধু ঢাকার হাসপাতালের মধেই যাদের টেস্ট নেয়া যায়নি।
তাছাড়া যুক্তরাজ্যে এক গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে ওখানে থাকা জাতিদের মধে বাঙালিদের মৃত্যুর রিস্ক প্রায় দ্বীগুন সাদা দের তুলনায়। এটার অনেক কারন আছে যেগুলা এক লিখায় উল্লেখ করা সম্ভব না। কিন্ত বোঝাই যাচ্ছে ব্যাপারটা ভাল না।
তার উপর SARS-CoV2 ভাইরাসের টেস্ট গুলা কিন্ত তেমন ভাল না। গতকাল এক ডাক্তারের পোস্টে দেখলাম তার ওয়ার্ডে ৭১% ফলস নেগেটিভ- সব উপসর্গ ও রক্ত পরিক্ষার চিহ্ন থাকলেও রোগীর কোভিড টেস্ট নেগেটিভ। এমনকি আইসিইউতেও ভর্তি হয়ে গিয়েছে রোগী নেগেটিভ। যুক্তরাজ্যেই আমাদের প্র্যাক্টিসে আমরা ধরতাম ৬০-৬৫% সেন্সিটিভিটি। এছাড়াতো আছেই যে অনেকেই টেস্ট করাবে না কারন মানুষ কি বলবে ইত্যাদি।
তাই যখনি কেউ ঢং করে বলবে ‘আরে এটা কিছুই না’, ‘হাচি কাশির জ্বর’ বা ‘মৃত্যুর হার মাত্র ১%’, তাদের কে একটু প্রশ্ন করবেন যে তারা কখনো কোন হাসপাতালে গিয়েছে কিনা। বসার জায়গা নাই, শুয়ার জায়গা নাই, এক রোগীর অক্সিজেনে একাধিক ভাগ বসানো লাগছে।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। ভাল করে বারবার হাত ধুবেন। বাসার বাইরে মাস্ক এমন ভাবে পড়বেন যেন নাক ঢাকা থাকে। কথা বলার সময়ও নামাবেন না। অকারনে বাসা থেকে বের হবেন না। এর পড়েও হতে পারে। জ্বর, কাশি এবং অন্যান্য উপসর্গ হলে দয়া করে বাসায় থাকেন। আলাদা রুমে থাকেন। হাসপাতাল বা টেস্ট করা ছাড়া অন্য কোন কাজে বের হবেন না।
এই যুদ্ধে ধৈর্য্য ধরে আগাতে হতে হবে অনেকদিন। হাসপাতাল ব্যবস্থা টোটালি কলাপ্স করেছে, এবং প্রতিরোধ করাই একমাত্র উপায়। হয়ে গেলে অধিকাংশ মানুষ ভাল হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ, কিন্ত কে হবে আর কে হবেনা, সেটা বলা বড়ই মুশকিল। ১৭ বছরের মেয়েও মারা গিয়েছে, ৮৫ বছরের বুড়াও বেচে গিয়েছে। সবাই সবার জন্যে দুয়া করবেন।
অনুলিখন :ডা.রিফাত আল মাজিদ