আল্লাহর পথ সর্বদাই খোলা, সুতরাং কখনো হতাশ হবেন না

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ০৯ ২০১৯, ১৩:২০

 

নোমান আলি খান

এখন আপনাদের এমন একটা বিষয়ের কথা বলবো যা আমাদেরকে আল্লাহর নিকট তাঁর রহমতের নেয়ামত ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত রাখে। বিষয়টা একজন মানুষের কাছে কতটুকু প্রত্যাশা করা হয় তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিছু কিছু মানুষ মনে মনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যায় –

“আমি সারা জীবন ধরে অসংখ্য পাপে নিমজ্জিত ছিলাম। আল্লাহ মনে হয় আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না।”

কোনো কোনো মানুষ এমনকি এতদূর পর্যন্ত চলে যায় যে সে বলে বসে, “আল্লাহ আমাকে ঘৃণা করে।” আমি নিজে তাদের বলতে শুনেছি, “আল্লাহ আমাকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ আমার উপর খুবই রাগান্বিত। কারণ আমি বহু অপকর্ম করেছি। আমি জানতাম – আল্লাহ এই এই কাজগুলো করতে নিষেধ করেছেন কিন্তু তারপরেও আমি সেগুলোই করেছি। শুধু একবার নয়, বহুবার এই খারাপ কাজগুলো করেছি। সুতরাং আল্লাহর ভালো মানুষের তালিকায় আমি নেই। আমার নামাজের কোনো দাম নেই।”

মানুষ যখন নিজের সম্পর্কে এরকম ধারণা পোষণ করে, তখন সে কী করে জানেন? “আমি তো খুবই খারাপ মানুষ। আপনি কি আমার জন্য একটু দো’আ করতে পারবেন? কারণ আমি ইতোমধ্যে দো’আ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি, এখন আপনাকে আমার জন্য দো’আ করতে হবে। কারণ আমি আশা করছি, আল্লাহ অন্তত আপনার দো’আ কবুল করবেন। এতে হয়তো আমার একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। কারণ তিনি আমার কথা শুনবেন না। আপনার তো আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়। তাই দো’আটা আপনিই করুন।”

আপনাদেরকে একটু পেছনে নিয়ে যাই। নূহ (আ) কাদের কাছে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন? নূহ (আ) কি এমন মানুষদের নিকট এই প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন যারা সারা রাত মসজিদে কাটাতো? প্রতিবছর হজ্জ্ব পালন করতে যেত? রোজা রাখতো এবং অন্য আরো সৎ কাজ করতো?

নূহ (আ) ক্ষমা পাওয়ার এই প্রস্তাব তুলে ধরেন ইতিহাসের অন্যতম একটি বিদ্রোহী সম্প্রদায়ের প্রতি। যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদ্রোহী ছিল, আল্লাহর বিরোধী ছিলো। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যদি শুধু ক্ষমা চাও তবে আল্লাহ তোমাদের শুধু ক্ষমা করবেন তা-ই নয় বরং তিনি তোমাদের জন্য আকাশের ধনভাণ্ডার খুলে দিবেন, উন্মুক্ত করে দিবেন অবারিত সম্পদরাজি।

অন্য কথায়, নিজেকে ধ্বংসের কাতারে ফেলবেন না। নিজের সম্পর্কে এভাবে বলবেন না যে, “আমি অনেক দূরে হারিয়ে গেছি। ক্ষমা চাওয়া আমার জন্য নয়, অন্য কারো জন্য সেটা হতে পারে। আমার ক্ষমা চাওয়া অর্থহীন। আমি চরম পর্যায়ের খারাপ। আমার ব্যাপারে আর কোনো আশা নেই। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। যদি কিছু হয় তা হবে আমার মায়ের দো’আতে অথবা অন্য নেক কারো দো’আতে।”

আপনি অমনটি করবেন না কেন? কারণ আপনার মনের এমন অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে শয়তান। মানুষের মনের হতাশাজনক পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে শয়তান, আর এর মাধ্যমে তাকে শির্কে নিমজ্জিত করে, যা সবচেয়ে বড় পাপ ও জুলুম। এই হতাশা শির্কের একটি দরজা। কেন জানেন? তখন মিথ্যা ধর্ম আসে এবং আপনাকে বলে – “আপনি তো অনেক বড় পাপী! আপনার পক্ষে ক্ষমা পাওয়া সম্ভব নয়। যীশুকে বলুন আপনাকে ক্ষমা করে দিতে। আপনি যীশুর সাথে সম্পর্ক ভালো করুন, তিনি আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো করে দিবেন। আল্লাহ এবং আপনার মাঝখানে যীশু এসে দাঁড়াবে।”

অথবা তারা অন্য কাউকে মাঝখানে দাঁড় করাবে। বলবেঃ
“অমুক নেক পীর আছে, তার কাছে যাও, তার কবরে যাও, তার কবরের কাছে কিছু ভালো খাবার রাখো, তাহলে তিনি আল্লাহকে বলবেন আপনার সমস্যার সমাধান করে দিতে। কারণ আপনি তো ভয়ঙ্কর রকমের পাপী। আপনি এখন আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারেন না, তিনি এখন আপনার উপর খুবই নাখোশ। কিন্তু ঐ পীর, তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তাই আপনি তার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আপনার দরখাস্ত পেশ করুন।” এভাবে শির্কের দরজা খুলে যায়।
অন্য কথায়, আল্লাহর সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগের মূল বিষয়টি আমাদেরই করতে হবে।

ঈমানের মানেই হলো এই সরাসরি যোগাযোগ। তাওহীদের মানেই হলো এই সরাসরি যোগাযোগ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-ও এই একই কথা বলে। আর এই সব কিছুর মূল কথা হলো – আপনার যা প্রয়োজন তা সরাসরি আল্লাহর নিকট পেশ করে প্রার্থনা করুন। আমি আমার নিজেকেসহ আপনাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যে বিষয়টি আমাদের সকল প্রয়োজন পূরণ করবে তা হলো – আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।

অন্যকে আল্লাহর সামনে আনা বন্ধ করুন। হতাশ হবেন না, আল্লাহ আপনার কথা যেকোনো অবস্থাতেই সরাসরি শুনেন। তিনি এমন নন যে কাউকে তাঁর দ্বীনের ও পাপীদের ঠিকাদারি দিয়ে রেখেছেন ভালো করার জন্য। তাঁর কাছেই ফিরে আসুন, ক্ষমা চান, প্রার্থনা করুন আপনার উজ্জ্বল দ্বীন-দুনিয়ার জন্য।

বইঃ প্রশান্তির খোঁজে – উস্তাদ নোমান আলী খান