আল্লামা বাবুনগরীর ভাগ্নে আল্লামা আনোয়ার শাহ ‘র অব্যাহতি; কিছু কথা কিছু ব্যথা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ০৩ ২০২০, ২১:৪৯

এইচ. এম. জুনাইদ

আমার প্রাণপ্রিয় উস্তাদ, বিশিষ্ট আরবী ভাষাবিদ আল্লামা আনোয়ার শাহ আল-আযহারী হাফিজাহুল্লাহু। আজ শুনতে পেলাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে কোন কারণ ছাড়াই হুজুরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাথে আরো দুজন উস্তাদকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এমন দুঃসংবাদে জাতি আজ নির্বাক। ব্যথিত ও মর্মাহত।

হঠাৎ অব্যাহতি পাওয়া তিনজন উস্তাদের একজন হলেন মাওলানা সাঈদ আহমদ সাহেব দা.বা.।তিনিও উচু মাপের একজন আলেম।লেখক,গবেষক। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করে পাঠক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। হুজুরকে নিয়েবিস্তারিত পরে লিখবো ইনশাল্লাহ।

আনোয়ার শাহ সাহেব,মাওলানা সাঈদ আহমদ সাহেবদের মতো যোগ্য উস্তাদের এভাবে অব্যাহতি দেওয়া বড়ই দুঃখজনক বিষয়। এভাবে চলতে থাকলে উম্মুল মাদারিসের সুনাম সু-খ্যাতি বিনষ্ট হচ্ছে,হবে।

আনোয়ার শাহ আযহারী সাহেব মিশর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন। হাটহাজারী মাদরাসার উচ্চতর আরবী সাহিত্য বিভাগের তত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। যতটুকু জানি হাটহাজারী মাদরাসায় আরবী সাহিত্য বিভাগ আযহারী সাহেব হুজুরের মাধ্যমেই সূচনা হয়েছে।এর আগে হাটহাজারী মাদরাসায় স্বতন্ত্র আরবী সাহিত্য বিভাগ ছিলো না।

আমি গত বছর হাটহাজারী মাদরাসায় উচ্চতর আরবী ভাষা সাহিত্য পড়েছি।সে সুবাধে আনোয়ার শাহ সাহেব হুজুরকে খুব কাছ থেকেই দেখেছি। তিনি তুখোর মেধা ও বহুগুণের অধীকারী একজন যোগ্য ও দক্ষ উস্তাদ। আরবী ভাষা সাহিত্যে হুজুরের রয়েছে অসাধারণ পাণ্ডিত্য। আরবী ভাষা ও নাহু-সরফে হয়রতের সমান পারদর্শীতা দেখেছি।

আরব কান্ট্রিগুলো থেকে কোন মেহমান হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শনে আসলে আযহারী সাহেব মেহমানদের নিকট হাটহাজারী মাদরাসার ইতিহাস,ঐতিহ্য ও অবদান তুলে ধরেন। দারুল হাদীস মিলনায়তনে হাজার হাজার ছাত্র উস্তাদের সামনে আরবী শায়েখ মেহমানদের শানে অনর্গল আরবী ভাষায় মানপত্র পাঠ করতে আনোয়ার শাহ সাহেব হুজুরকে আমি বহুবার দেখেছি।মানপত্র তিনি নিজেই রচনা করেন। হুবহু আরবদের স্টাইলে বিশুদ্ধভাবে আরবী বলে উপস্থিত মজলিসকে মুগ্ধ করতে দেখেছি আমি।

ক’বছর আগে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসের খতীব শায়েখ আবু ওমর ইয়াকুব আব্বাসী সাহেব হাটহাজারী মাদরাসায় এসেছিলেন এবং বাদ মাগরিব মাদরাসার মাঠে বয়ান করেছিলেন তিনি। হাজার হাজার মানুষের বিশাল মজমায় খতীব সাহেবের শানে আরবী ভাষায় মানপত্র পাঠ করেছিলেন আল্লামা,আনোয়ার শাহ আযহারী সাহেব। অনর্গল বিশুদ্ধ আরবীতে মানপত্র পাঠ শুনে খতীব সাহেব বারবার আনোয়ার শাহ সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এবং খুশীতে হাসছিলেন। আমি স্টেইজের কাছ স্বচক্ষে দেখেছি। আরবীতে কতটুকু পারদর্শিতা থাকলে বায়তুল মুকাদ্দাসের খতীবের মতো মহান ব্যক্তিকে মুগ্ধ করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

আনোয়ার শাহ সাহেব হুজুর মিশর আল-আযহার থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে ফিরে হাটহাজারী মাদরাসায় আরবী ভাষার একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে হাটহাজারী মাদরাসার সাথে আরব কান্ট্রিগুলোর একটি সু-সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। যার সুবাদে আল আযহারের শায়েখগণ সহ আরব মেহমানগণ বিভিন্ন সময়ে হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শনে আসতেন। এবং এরই ধারাবাহিকতায় হাটহাজারী মাদরাসার ফাযেল বহু ছাত্র মদীনা ইউনিভার্সিটি ও আল আযহার সহ বিভিন্ন জামেয়ায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে বর্হিবিশ্বে হাটহাজারী মাদরাসার সুনাম করেছে।

আযহারী সাহেব আমার শায়েখ ও মুরশিদ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহুর হাতেগড়া ছাত্র ও স্নেহধন্য আপন ভাগ্নে। আযহারী সাহেব হুজুর বংশীয়ভাবেও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন একটি সম্রান্ত বুজুর্গ পরিবারের সন্তান। তিনি মুর্শিদে আজম আল্লামা শাহ আব্দুল মজিদ শাহ সাহেব রহ. এর নাতি।

আমার উস্তাদ আযহারী সাহেব হুজুর মায়ের দিক দিয়ে কত উচু বংশের তা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহুর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। বাবুনগরী হুজুরের খান্দান এশিয়ার মধ্যে বিরল ইলমী একটি খান্দান।

আল্লামা আনোয়ার শাহ সাহেব হুজুর
কঠোর মেহনত আর পরিশ্রম করে হাটহাজারী মাদরাসার আরবী সাহিত্য বিভাগকে একটি প্রশংসনীয় অবস্থানে তুলেছেন। এমন একজন যোগ্য উস্তাদ হাটহাজারী মাদরাসার জন্য রওনক।তাঁর মাধ্যমেই সর্বত্র হাটহাজারী মাদরাসার আদব বিভাগের সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। দারুল উলুম হাটহাজারীর আদব বিভাগের একজন প্রাক্তন নগণ্য শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জোর দাবী জানাচ্ছি- আল্লামা আনোয়ার শাহ সাহেব হুজুরকে পুনরায় নিয়োগদান করে হাটহাজারীর আদব বিভাগের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখা হোক।

আযহারী সাহেব হুজুরের নগণ্য ছাত্র
এইচ. এম. জুনাইদ
উচ্চতর আরবী সাহিত্য বিভাগ দারুল উলুম হাটহাজারী।
৩/৮/২০২০ ইং]