আলেমদের জানাজার দৃশ্য দেখে এক প্রফেসরের প্রতিক্রিয়া

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ০৯ ২০২১, ২১:৪০

মাদরাসা শিক্ষকদের জানাজার ছবিগুলো দেখলে মনে হয় তাদের শিক্ষকতাই সার্থক। ফেসবুকে দেখি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে তাদের ছাত্ররা আবাবিল পাখির মত ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে। এক বেলার মধ্যেই জানাজা হয়ে উঠে মহাসমাবেশের জায়গা!

নেই কোন পারিশ্রমিক বা ওস্তাদকে খুশি করে পার্থিব কিছু অর্জনের জায়গা! শুধু শ্রদ্ধা আর গুরুভক্তির এ এক অন্যন্য ধারা! এ ধারা একদিনে তৈরি হয় না। একজন ওস্তাদের ঘামের গন্ধও ছাত্রের চেনা থাকে!

বিপরীতে, এ করোনাকালে বহু গুনী ও প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গত হয়েছেন। অনেক দূরের তো দূরের কথা, হয়তো একই শহরে চাকরি করছে কোন ডেস্কে। কিন্তু তার ছাত্ররা অন্যান্য আট দশ দিনের মতোই ঘুরছে!

ব্যক্তিগতভাবে আমি কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েছি। শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কত শিক্ষক গত হয়েছেন। আমি ক’জনের জানাজায় উপস্থিত হয়েছি? আমার মত একই অভিজ্ঞতা প্রায় সবারই! একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয়ে অনেকটা নিশ্চিত যে এইরকম জনাকীর্ণ জানাজা কপালে জুটবে না। সবার লোভ সব জায়গায় না, সবার লাভও সব জায়গায় না! শিক্ষকের জন্য শিক্ষার্থীদের অশ্রুজল অমূল্য এক জিনিস-এটা এমনেই অর্জন করা যায় না, এমনিতে আসেও না!

আমরা স্কুলে পড়েছি কিন্তু জানিনা মাদরাসার এই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়েছে কিনা-কবি কাজী কাদের নেওয়াজ এর শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি? কিন্তু এই দৃশ্য আমাকে মনে করিয়ে দেয় বাদশা আলমগীরের গলায় সেই লাইনটি- ‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির’।

বিঃদ্রঃ একটা জানাজা দিয়ে শিক্ষকতার সারাজীবনের অর্জনকে খাটো করছি না, কিন্তু নিজ ব্রেইন চাইল্ডের কাঁধে চড়ে বা তাদের ধ্বনিতে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার লোভ সামলানোও অপ্রত্যাশিত না! প্রচলিত পড়াশোনায় কোথাও একটা মিসিং লিংক আছে। জেনারেল ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে আত্মার বন্ধনটা কোথায় জানি একটু স্যালো!

 

লেখক: ফখরুল ইসলাম হিমেল।।

প্রফেসর ও বিশ্লেষক

সহকারী অধ্যাপক, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ঢাকা