আরবী ভাষার আরেক নাম “লুগাতুদ দোয়াদ”
একুশে জার্নাল ডটকম
ফেব্রুয়ারি ১১ ২০২০, ১৪:১৭

মহিউদ্দীন ফারুকী
আরবী ভাষা কুরআন ও হাদিসের ভাষা। ইলম ও মাআরেফের ভাষা। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভাষা। কুরআন নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এই ভাষাকে সম্মানিত করেছেন। স্থায়ীত্ব দান করেছেন। তাই অন্যান্য অনেক ভাষার বিলুপ্তি ও বিকৃতি ঘটলেও আরবী ভাষায় কোনো বিকৃতি ঘটেনি। বরং কুরআন ও হাদিসের সংশ্রবে, সাহাবায়ে কেরাম ও উলামায়ে কেরামের প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত এই ভাষা উৎকর্ষ লাভ করেছে।
মূলত আরবী ভাষা সেই প্রাচীন ভাষাগুলির মধ্যে একটি যা সেমেটিক ভাষা বংশের অন্তর্ভূক্ত। সাম বিন নূহ (আ.) এর দিকে ইঙ্গিত করে এই ভাষাবংশকে সামিয় বা সেমেটিক ভাষা বলে অভিহিত করা হয়। সেমেটিক ভাষাবংশের মধ্যে রয়েছে কেনানীয়, নাবতিয় ব্যাবিলনীয় এবং আবিসিনিয়ার ভাষা।
আরবী ভাষাকে বিভিন্ন নামে অবিহিত করা হয়।লুগাতুল কুরআন, লুগাতুল হাদীছ, লুগাতুত দোয়াদ ইত্যাদি। অনেকেই আরবি ভাষা বুঝাতে “দোয়াদ” হরফটি ব্যবহার করে থাকেন। আমাদের মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যার লোগোতেও “দোয়াদ” হরফটি রয়েছে। যার কারণে অনেকেই জানতে চান লগোতে “দোয়াদ” কেন? অথবা আরবি ভাষাকে “লুগাতুদ দোয়াদ” বলা হয় কেন?
মূলত আরবি ভাষার বিশিষ্ট ভাষাবিদ, সাহিত্যিক আছমাঈ, সিবাওয়াইহ, খলীল ইবনে আহমাদ ফারাহিদীসহ আরো অনেকেই দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে এবং তৃতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে আরবি ভাষাকে “লুগাতুদ দোয়াদ” নামে অভিহিত করেছেন। এর কারণ হিসেবে ভাষাবিদরা উল্লেখ করেছেন যে, এই হরফটি আরবির বিশেষ হরফ। অন্য কোনো ভাষায় এই উচ্চারণের হরফ নেই। অনারবরা ইসলামে প্রবেশ করে আরবি ভাষার প্রায় সব হরফই বলতে পারতো। কিন্তু “দোয়াদ” হরফটি কেউ সঠিকভাবে, সহজে উচ্চারণ করতে পারছিল না। এর মাধ্যমে অনারবদের পার্থক্য করা যেত। সিবাওয়াইহ রহ. বলেন, “يعد حرف الضاد ضمن الأصوات غير المستحسنة ولا الكثيرة في اللغة من
ترتضى عربيته ولا يستحسن في قراءة القرآن ولا في الشعر،
আসমাঈ বলেন, قال الأصمعي: ليس للروم ضاد،
এভাবে এই শব্দটি একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থান ধারণ করে। এই বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি লক্ষ্য করে আরবি ভাষাবিদরা এই ভাষাকে “লুগাতুদ দোয়াদ” নামে আখ্যায়িত করেছেন।
পরবর্তিতে লেখক, সাহিত্যিক, কবিরা ব্যাপকভাবে তাদের রচনায় আরবি ভাষা বুঝাতে “লুগাতুদ দোয়াদ” ব্যবহার করতে শুরু করেন। শুধু এই হরফের বিষয়ে সাহিব ইবনু আব্বাদ رسالة الفرق بين الضاد والظاء للصاحب بن عباد রচনা করেছেন। ইবনে কুতাইবা রচনা করেছেন أرجوزة ابن قتيبة في التميز بين
الضاد والظاء.
অন্যদিকে কবিতায় সর্বপ্রথম মুতানাব্বীই এই হরফটি ব্যবহার করেছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি বলেন:
لا بقومي شرفت بل شرفوا بي +وبنفسي فخرت لا بجدودي
وبهم فخر كل من نطق الضـــاد+ وعوذ الجاني وغوث الطريد
অনেক ভাষাবিদ এমন বৈশিষ্ট আছে বিধায় আইন এবং জোয়াকেও আলাদাভাবে উল্লেখ করেছিলেন। তবে সে বিষয়টি ব্যাপকভাবে সাড়া পায়নি এবং গৃহীত হয়নি। তাই বলা যায় “দোয়াদ” শব্দটি প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে বিশেষ বৈশিষ্টপূর্ণ গৃহীত হয়েছে। এরপর থেকে সকলেই এই শব্দটিকে ব্যাপকভাবে আরবী ভাষার পরিচয় প্রদানে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।
আধুনিক যুগের কবি সাহিত্যিকরা এই হরফটির ব্যবহার তুলনামূলকভাবে একটু বেশী করেছেন। আমিরুম শুআরা আহমাদ শাওক্বী আরবী ভাষাকে “লুগাতুদ দোয়াদ” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন: إِنَّ الَّذي مَلَأَ اللُغاتِ مَحاسِنًا *** جَعَلَ الجَمالَ وَسَرَّهُ في الضادِ
বিশিষ্ট সাহিত্যিক খলীল মুতরান আরবদেরকে ‘দোয়াদ’ এর সন্তান বলে তিনি বলেন: ” وفود بني الضاد جاءت إليك وأثنت عليك بما وجب. ইসমাঈল সবরী বলেন: “أيها الناطقون بالضاد هذا منهل صفا لأهل الضاد.” লেবানিজ কবি হালীম দামুস বলেন: “لغة إذا وقعت على أكبـادنا كانت لنا بردًا على الأكباد
ستظل رابطـــة تؤلف بيننا فهي الرجاء لناطق بالضاد.”
এভাবে আরও অনেক কবি সাহিত্যিক আরবি ভাষার আলোচনায় এই হরফের ব্যবহার করেছেন।
বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে, অথবা লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনকি আরবি ভাষার নাম বলার সময় “লুগাতুদ দোয়াদ” জরুরিভাবে উল্লেখ করেন। এরই সূত্র ধরে মারকাযুল লুগার লগোসহ অনেক আয়োজনে, অনুষ্ঠানে এই হরফটি ব্যবহার করা হয়।
মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ
সলমাশি, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।