আমি -বনশ্রী বড়ুয়া

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ২৭ ২০১৯, ১৫:২১

 

কি নামে ডাকবো তোমায়?কি লিখব তাও জানি না,,তারপরও তোমাকেই লিখছি,,জানি এ চিঠি তুমি কখনোই পড়বে না।
নিত্যকার মত সেদিনও স্কুলেই যাচ্ছিলাম, বাসে উঠে বসলাম, তখনো কয়েকটা সিট খালি।হেল্পারের চিৎকারে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ চিৎকার রুপান্তরিত হল ভয়াবহ এক তান্ডবের পর্যায়ে।কোনভাবেই বাসের হেল্পার তোমাকে গাড়িতে উঠতে দেবে না,,তুমিও নাছোড়বান্দা উঠেই ছাড়লে।সবাই তোমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন তুমি চিড়িয়াখানায় আটকে থাকা কোন পশু।তোমার গাঢ় লিপস্টিক ,, বাড়াবাড়ি রকমের মেকাপ,,সুউচ্চ বুক,, দোলানো কোমর কাউকেই কাছে টানলো না বরং সকলেই তোমাকে দুরে সরতে বলল।

আমার পাশের সিটটা খালিই ছিল।এসেই ধপ করে বসে পড়লে।সবার মতন আমিও খানিক জড়সড় হয়ে গেলাম। নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে চাইলাম।ইচ্ছে করছিল বাস থেকেই নেমে যাই।চারপাশে তখন তোমাকে নিয়ে মাতামাতি,,,,তোমার থেকে চোখ সরিয়ে অনেকে তখন আমাকেও দেখছে।আমার অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে।অনেকে আবার মুচকি মুচকি হাসছেও,,,,

তোমার খোঁপায় বেলীর মালা ঝুলছে,,,,বেলীর সুঘ্রাণ বরাবরই আমাকে অন্য একটা আবেশে মাতিয়ে রাখে।প্রিয়তার গায়ের গন্ধ মনে করিয়ে দে।এই মুহুর্তে সব কেমন যেন এলোমেলো লাগছে,,দেখতে আমারই মতন নারী শরীরের অবয়ব তোমার,,,তারপরও কেন এই অস্থিরতা। হঠাৎ করেই পুরুষ কন্ঠের কে যেন বললঃ আপনি কি খুব অস্বস্তি ফিল করছেন?

এমন সুন্দর কন্ঠে কে বলল কথাটা, খুঁজতেই তুমি আমার দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার বললেঃ আপনি চাইলে আমি উঠে যাব আপনার পাশ থেকে,,,

ধাক্কা সামলাতে সময় লাগলো কিছুটা।খুব লজ্জিত বোধ করছিলাম।নীতিবাক্যের ফুলঝুড়ি যার মুখে সারাক্ষণ থাকে সেই আজ নত হয়ে আছি লজ্জায়,,
চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, সমস্যা নেই,,বসতে পারো।
মনটা হঠাৎ করেই বড্ড কৌতুহলী হয়ে পড়ল আমার।জানতে চাইলাম, কোথায় যাচ্ছো?তুমি অবাক হলে আমার প্রশ্ন শুনে,,হয়ত কেউ কখনো তোমাকে এভাবে প্রশ্ন করেনি,,,,।
বললে,মা’কে দেখতে যাচ্ছো। আমি আবারো অবাক হলাম।হকচকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে ফেললাম,
মা!!তোমার মা আছে?
মৃদু হেসে বললে,, কেন?আমার বুঝি মা থাকতে নেই?
বুঝলাম বোকার মত প্রশ্ন করেছি,,আমার নত হয়ে যাওয়া চাহনি দেখে তুমি নিমিষেই বুঝে নিলে আমার চোখের ভাষা,,বুঝতে পারলে কি বলতে চাইছি,,তারপর যা বললে আমি ভাবতে পারছি না,,এতটা কষ্ট বুকে চেপে মানুষ কি করে বাঁচে?জন্মের কিছুদিন পরেই মা’কে ছেড়ে গেছো,,তারপরের জীবন আরো ভয়াবহ।তোমার জীবনের সেই ভয়াবহতার কথায় কেঁপে উঠেছি বারবার।চোখে জল এল অজান্তেই।তুমি বলেছো কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত দু’মুঠো ভাতের জন্য,,,বাঁচার জন্য।
তোমার সাজসজ্জার আড়ালে সেই তোমাকে দেখলাম যার ভিতরে অফুরান স্নিগ্ধতার বাস।তোমার জীবন যুদ্ধের গল্পে নিজেকে বড় তুচ্ছ মনে হচ্ছিল,,,,জীবনের এমন অধ্যায় আগে দেখা হয়নি আমার।
কথায় কথায় বাস স্টপে এসে দাঁড়িয়েছে বাস,,নামার সময় হল,,,
চারপাশের উৎসুক চোখগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,,,খেয়াল করলাম সবাই তোমাকে নয় আমাকেই হা করে দেখছে।
ওদের চোখগুলো নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না,নেমে এলাম তোমার সাথে,,সম্ভব হলে আরো একটাবার দেখা করতে চাইলাম,,,তুমি হেসে উড়িয়ে দিলে।
যাওয়ার সময় শুধু বললেঃ ভুলে যাবেন চলতি পথের এই দু’হাজার একশ সেকেন্ডের কথা,,জীবনের বিড়ম্বনা বাড়াবেন না,,,ভাল থাকবেন।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলে,,,তোমার কন্ঠস্বরের যাদু আমাকে এখনো আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
জানি আর কখনো হয়ত দেখা হবে না,,কিন্তু খুব চাইছি আরো একটিবার আমাদের দেখা হোক।প্লিজ একবার দেখা করো আমার সাথে,,,প্লিজ,,প্লিজ,,,।
আমার ভেতরের দম্ভকে ভাঙার একটা সুযোগ দাও,,
আমি মানুষ হতে চাই,,,আমি সবাইকে মানুষ ভাবতে চাই,,,