আমি এক সিলেটি বাবা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০৫ ২০১৮, ১১:২৪

একুশে জার্নাল: ছোট খাট একটা চাকরি করি। গত মাসে বড় মেয়ে কে বিয়ে দিয়েছি, প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে। আজ ইফতারি দিয়েছি জামাইয়ের বাড়িতে, প্রায় ১৫০০০ টাকা খরচ করে। একটু আগে মেয়ের ফোন।
বাবা কেমন আছেন?
-অয় মা ভাল। তুই ভালা আছিস নি?
আছি বাবা ভালা।
-ইলা মাথরে কেনে?? তোর শ্বাশুর রা খুশি হইছে নি?
এরা কিছু কইছে না। ফুফু(জামাইয়ের ফুফু) কইছে ইফতারি একটু কম হইছে।
-(তখন আমার চোখের পানি টলটল করছিল)আচ্ছা মা কইছ,পরের বার থেকে আরো বাড়াইয়ায় দিমু।
বাবা হুন। তুমি আমাদের বাড়িত ঈদর কাপড় দিবায় নি?
-অয় মা দিমু। কেনে?
তুমি কাপড় দিওনা। খালা(জামাইয়ের খালা) কইছে কাপড় দিলে সবর পছন্দ হইত নায়। কাপড় না দিয়া টাকা দিলাইও । ৩০,০০০ টাকা দিলে, সবর হই যাইব।
-আচ্ছা মা। তুই চিন্তা করিছ না। আমি এখন ও বাঁচিয়া আছি।
(আমার বোঝতে দেরি হলনা,এতক্ষনে মেয়ের চোখের অনেক জল গড়িয়ে পড়েছে)
আচ্ছা বাবা, এখন রাখি।
-আচ্ছা মা ভালা থাক।
রাতে ছোট ছেলে নামাজ থেকে আসল।
বাবা তুমি আছ?
-অয় আছি। কেনে বেটা?
হ্যা, ঈদের পর ২য় সপ্তাহে সেমিস্টার ফাইলান।আমার টিউশনির কিছু টেকা আছে।আপনি ২০ হাজার দিলে হইব।
-আচ্ছা দেখি। খাইয়া ঘুমাই যা।
না বাবা, লেট হইলে এক্সাম দিতে পারতাম নায়।
ঈদের পরে আবার কোরবান, মেয়ের বাড়িতে কাপড় দিতে হবে। কাপড়ের যে দাম, কমপক্ষে ২০০০০ টাকা ত লাগবে। আবার নিজের জন্য গরু লাগবে। মেয়ের বাড়িতে গুস্ত পাটাতে হবে।
এইখানে শেষ নয়,,আরো রয়েছে মেয়ের বাড়িতে দেওয়ার বিভিন্ন মৌসমে বিভিন্ন আয়োজন।
এই সব চিন্তা করতে করতে না খেয়ে শুয়ে পড়েছি। সাদিয়ার মা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছিল,কিছু না বলে শুয়ে পড়েছি।
মাথায় একটা বিষয় কাজ করছে। টাকা!!টাকা!! আর মেয়ের সুখ।
এইভাবে রাত ১২ টা। সবাই কান্না কাটি করছে।আমার ছোট মেয়ে আর আমার প্রিয় স্ত্রী সব চেয়ে বেশি কাঁদছে। শুনলাম বড় মেয়ে ও ইতি মধ্যে পৌছে যাচ্ছে। সবার দিকে চেয়ে থাকলাম। ঠিক ২ মিনিট পর আর কিছু জানিনা।
এইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমার মত অনেক বাবা।বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত ছেলে মেয়ে। হয়ত অনেকে এখন ও জানে না, তাদের বাবার মৃত্যুর রহস্য।
আপনারা বলেন?
আমার মত মধ্যবিত্ত বাবার পক্ষে এত কিছু সম্ভব?
তারা তা বোঝেনা কেন?
বোঝেও এইভাবে হত্যা করছে কেন বাবাদের?
[লিখতে গিয়ে নিজে ও কান্না করে দিয়েছি।এইভাবে প্রতিনিয়ত আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রিয় বাবাদের।।
আমাদের সিলেটের এই কু-প্রচলন কি পরিবর্তন হবেনা??
হচ্ছেনা কেন??
হচ্ছেনা কেন??
চলুন আমরা জেগে উঠি।
ধ্বংস করি এই অপসংস্কৃতি।

হাজার হাজার গরিব বাবাকে বাঁচাই দুশ্চিন্তা আর লাঞ্ছনা থেকে।