আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে কেবল ইসলাম ও আ*ফ*গান স্বার্থই প্রাধান্য পাবে: মাওলানা মুত্তাকী
একুশে জার্নাল ডটকম
এপ্রিল ০৫ ২০২৩, ১৭:২৩
৩য় বিশ্বের দেশ হয়েও আফগানিস্তান উন্নত বিশ্বের মতো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকী।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোনো দেশের বিকাশ ও উন্নয়নে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক সম্পর্ক ও দেশের স্বার্থ এর উপর নির্ভরশীল।
মাওলানা মুত্তাকী বলেন, যেকোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত হয় নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে। স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো নিজ স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করে। পক্ষান্তরে ৩য় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলো উন্নয়নের জন্য যেহেতু উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কাছে দায়বদ্ধ বা তাদের অধীনস্থ থাকে তাই তাদের পররাষ্ট্রনীতিও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর স্বার্থকে কেন্দ্র করে প্রণীত হয়।
তিনি বলেন, পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের স্বার্থের তোয়াক্কা না করে স্বাধীনভাবে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছে ৩য় বিশ্বের এমন দেশের সংখ্যা খুব কমই পাওয়া যাবে। কিন্তু আল্লাহ পাকের শুকরিয়া, প্রচুর সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের গৌরব অর্জন করেছে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান।
এছাড়া মার্কিন মদদপুষ্ট সরকারের ২০ বছরের অর্জনকে মাত্র ১ বছরেই পেছনে ফেলার ক্ষেত্রেও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ গত ২০ বছর যাবত সাম্রাজ্যবাদী দখলদার আমেরিকার অধীনস্থ ছিলো। তাই বিশ্ব পরাশক্তি ও সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা ছিলো সাবেক সরকারের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু বর্তমান তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার পররাষ্ট্রেরনীতি এমনভাবে সাজিয়েছে যে, শুধুমাত্র ইসলাম ও আফগান স্বার্থই প্রাধান্য পাবে ইমারাতের পররাষ্ট্রনীতিতে।
বৈদেশিক সম্পর্কের সেকাল আর একালের পার্থক্য তুলে ধরতে গিয়ে মাওলানা মুত্তাকী বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদেরই দিকনির্দেশনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সুসম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছিলো মার্কিন মদদপুষ্ট আফগান সরকার।
স্বাধীনতার পর প্রথমে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছি। পরবর্তীতে আফগান সংযুক্ত সীমান্ত উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। ভ্রাতৃপ্রতিম অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠা করেছি।
ইরান, উজবেকিস্তান, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় কূটনৈতিক মিশন পাঠিয়েছি। তারা সেখানে নিয়মতান্ত্রিক কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া অন্যান্য দেশে প্রেরিত কূটনৈতিক মিশনগুলোও ইমারাতে ইসলামিয়ার দিকনির্দেশনায় তাদের কাজ পরিচালনা করছে এবং সর্বদা যোগাযোগ রাখছে।
৩য় বিশ্বের দেশ হয়েও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে শুধু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকিনি বরং মজবুত অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। আগের তুলনায় বহুগুণে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পেরেছি, যা তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি বিরাট সাফল্যও বটে। কেননা কোনো বহিরাগত অর্থনৈতিক নির্ভরতা ব্যতীত ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছি আমরা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পণ্য রপ্তানিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার। বিদেশে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১৩ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে উন্নীত করে আফগানিস্তানের অতীত রপ্তানির রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে তারা।
আমদানির তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধির কর্মকৌশল অবলম্বন করে দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি।
স্বনির্ভরতা বাড়াতে ‘কুশতিপা খাল’ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে কৃষকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে গম উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন এবং বাইরের দেশ থেকে গম আমদানির প্রয়োজন দূর হয়ে যাবে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী ‘কুশতিপা খাল’ নির্মাণ হলে গম উৎপাদন বহুগুণে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে গম রপ্তানির সক্ষমতা অর্জিত হবে আফগানিস্তানের।
এছাড়াও ‘সোনার চেয়ে দামি’ লিথিয়ামের খনিও আবিষ্কৃত হয়েছে দেশটিতে, যাকে ‘এ শতাব্দীর স্বর্ণ’ ও ‘ দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের প্রধান উপাদান’ বলে মনে করা হয়।
দখলমুক্ত হওয়ার মাত্র ১ বছরের মাথায় ৩য় বিশ্বের অনুন্নত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি উন্নত বিশ্বের মতো করে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্র : আল ইমারাহ