আমাদের উচিৎ উলামাদের মধ্যে ঐক্যের সূত্র অনুসন্ধান এবং ঐক্যের আবেদন সৃষ্টি করা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ২২ ২০২০, ০০:১২

সৈয়দ মবনু 


যেখানে মানুষ, সেখানেই সংকট-সংঘাত থাকবে। প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)-এর ছেলেদ্বয় হাবিল এবং কাবিল থেকেই তা শুরু হয়ে যায়। অতঃপর তা থামেনি এবং থামবেও না। কারণ এটা মানুষের ফিতরতি বৈশিষ্ট্য। মুসলামনদের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানবগোষ্ঠি বলে খ্যাত হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রা.), যারা হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সহবত পেয়েছিলেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিশ্বাস বা আকিদা, সাহাবারা সকল সমালোচনার উর্ধ্বে। আমিও তা বিশ্বাস করি। তবে তাদের সময়ও সংকট-সংঘাত ছিলো। সংকট এবং সংঘাত মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। সংকট এবং সংঘাত মানুষের মধ্যে বিভিন্ন কারণে হয়। কখনও থাকে সত্য-মিথ্যার মধ্যখানে, কখনও স্বার্থিক কারণে, কখনও ভুল বুঝাবুঝি থেকে। যেখানেই দুই পক্ষ মুখোমুখি দাঁড়ায় সেখানেই ন্যায়-অন্যায় থাকে। পক্ষ যদি সত্য-মিথ্যা এবং স্বার্থগত কারণে হয় তবে অন্যায়কারি পাপিষ্ট। আর যদি ভুল বুঝাবুঝি থেকে হয় তবে অন্যায়কারিকেও পাপিষ্ট বলা যাবে না। যেমন হযরত রাসুল (স.)-এর ইন্তেকালের পর যখন হযরত ওমর (রা.), হযরত উসমান (র.) এবং হযরত আলী (রা.)-এর সময় সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সংঘাত হয়, সেগুলো ছিলো ভুল বুঝাবুঝি থেকে। সেখানে উভয় পক্ষে ছিলেন সাহাবীরা এবং তারা নিজেদের বিষয়গুলোকে সত্য এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই মনে করতেন। এই সকল সংঘাতেও ন্যায়-অন্যায় ছিলো, কিন্তু তা নিয়তের দিকে অসৎ উদ্দেশ্য না হওয়ায় পাপ বলে গণ্য হবে না বলে আহলে সুন্নাতের ফকিহরা মনে করেন। বাকী আল্লাহ ভালো জানেন এবং চূড়ান্ত ফায়সালাকারী স্বয়ং আল্লাহ।

অতঃপর প্রত্যেক যুগেই সাধারণ মানুষের কাছে, আলেম-উলামাদের কাছে সংকট-সংঘাত ছিলো। অন্যরা কিংবা সাধারণ মুসলিম তো করেছেই, তাবেয়ী, তবে তাবেয়ী এবং উলামায়ে কেরামের এমন একটা যুগও পাওয়া যাবেনা যেখানে সংকট-সংঘর্ষ হয়নি। সংকট-সংঘর্ষ কেউ নিয়মতান্ত্রিক কিংবা স্বৈরতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন, আর কেউ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি যদি ইতিহাসের পাতায় সাহাবী, তাবেয়ী, তবে তাবেয়িদের যুগের সংকট-সংঘাতের কথাগুলো বাদ দিয়ে আমাদের সময়ের কথা বলি, তবু কম হয়নি।

মানুষ ফিতরতি কারণে অনৈক্য হবে, সংকটে আটকে যাবে, সংঘর্ষে জড়াবে। কিন্তু আমাদের উচিৎ ঐক্যের মূল সূত্র অনুসন্ধান করা এবং সবার মধ্যে ঐক্যের আবেদন সৃষ্টি করা। ঐক্যের আবেদন তৈরির ক্ষেত্রে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রত্যেকে নিজ অবস্থান থেকে কোরআন-হাদিস এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়সমূহে গভীর জ্ঞান অর্জন করা। আল্লাহর জাতি এবং সিফাতি নামগুলোর তাজাল্লি এবং দ্বিপ্তির কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা অর্জনের পাশাপাশি ইসলাম ও বিশ্বের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, প্রচলিত সমাজের মানুষের ভাবনার শ্রেণীবিভাজন ইত্যাদি সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা। এতটুকু জ্ঞান অর্জিত না হলে কেউ চাইলেও ঐক্যের পথে যেতে পারবে না। মূর্খতাবশত বর্তমানে মুসলমানেরা, বিশেষ করে আলেম-উলামা ঐক্যের কথা মুখে বলেন, মনে মনে ভাবেন, কিন্তু পারস্পরিক কথাবার্তায়, চালচলনে, সভা-সমিতির বক্তৃতায়, ওয়াজে, বিভিন্ন বই-পুস্তকে, প্রচারপত্রে নিয়মিত বিভেদের কথাই বেশি বলেন। যে হারে মুসলিম উম্মাহের মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা-প্রয়াস চালানো প্রয়োজন ছিলো সেই হারে তা সম্ভব হচ্ছে না মুসলিম সমাজের শতধাবিচ্ছিন্ন আকিদা, দল, উপদল ইত্যাদি কারণে। দলাদলির কারণে আজ নিজেদের মধ্যে দাংগা-লড়াই এবং একেঅন্যের প্রতি প্রচন্ড রকমের ঘৃণা প্রতিমূহুর্ত প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে মুসলিম উম্মাহ আজ দেশে দেশে জরাগ্রস্থ এবং নির্যাতিত।

যারা মানুষকে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন আল্লাহকে তাদের জন্য উচিৎ হলো ঐক্যের পথে কাজ করা। কারণ ঐক্যই হলো যেকোন জাতির শক্তি এবং শান্তির মূল উৎস। ঐক্যের জন্য সবচে বেশি কাজ করার কথা হকপন্থী লোকদের, বিশেষ করে জ্ঞানী-গুণি এবং আলেম-উলামাদের। তারা যদি সচেষ্ট এবং আন্তরিক হন তবে বিষয়টি সহজ হয়ে উঠবে। আমরা ঐক্য চাই, আমরা শান্তি চাই। আমরা ঐক্য চাই, আমরা শান্তি চাই।