আমরা মানুষ হবো কবে!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ২৬ ২০১৯, ১৪:১৬

 

কিছু দিন আগে ও বিশ্বাস করতাম সকল ধর্ম বর্ণের উর্ধ্বে দেশ ও মানবতা। এখন সেই বিশ্বাসের ছিঁটে ফোটা ও অবশিষ্ট নেই।

ধর্ম ও বর্ণের জাঁতাকলের পিষ্ঠে অকালে ঝরে পড়া যুবকের নাম তাবরেজ আনসারি বয়স ২৪ বছর।​
মাত্র তিন বছর বয়সে তার​ মা না ফেরার দেশে চলে যান। তারপর ১০ বছর বয়সে বাবাকে ও হারায় দুঃখী​ তাবরেজ আনসারি।​
মাত্র ১০ বছর বয়সে গ্যারেজে ওয়েল্ডিং এ কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে কর্ম যুদ্ধে বিলিয়ে সংসার নামক জীবনে আলোর সুন্দর স্বপ্ন দেখেন একটূ ভালো ভাবে বাঁচার জন্য।​
বাবা মা বিহীন কষ্টে গড়া সংসারে আজ থেকে মাত্র দেড় মাস আগে বিয়ে করে​ নতুন বউ ঘরে এনেছিল তাবরেজ আনসারি।

নব বঁধুকে নিয়ে কর্মস্থল পুনেতে যাওয়ার জন্য গত ২৪জুন ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দ সোমবার টিকিটও কেটে রেখেছিল। কিন্তু সে যাওয়া আর হলনা…
তাবরেজ আনসারির বাড়ি বিজেপি শাসিত ঝাড়খন্ডে যেখানে গত চার বছরে প্রায় ১২ জন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তাবরেজ আনসারির নাম জানার পর মুসলিম হওয়ার কারনে টানা ১৮ ঘণ্টা পেটানো হয়েছে তাকে। এমনকি জয় শ্রীরাম,জয় হনুমান বলতে ও​ বাধ্য করা হয়েছে। টানা ১৮ ঘণ্টা পেটানোর পর অজ্ঞান হয়ে গেলে পুলিশ এসে তাকে উল্টো সাইকেল চুরির মিথ্যে গ্রেফতার করে। মারাত্নকভাবে আহত হওয়ার পরেও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অবশেষে​ চারদিন পর নিষ্পাপ দুঃখী মানুষটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

বিজেপি,পুলিশ রাষ্ট্র মিলে তাকে হত্যা করেছে।​ মনে আছে ৮ বছর বয়সী আসিফার কথা? আসিফাকে অপহরন করে একটা মন্দিরে রেখে টানা আট দিন ধরে ধর্ষণ করে বিজেপি/আরএসএস এর কর্মীরা। নির্মম নির্যাতনে মারা যাবার পর আসিফার লাশ ফেলে রেখে যায় নরপশুরা।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে- নির্যাতনে আসিফার নখগুলি কালচে বর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ঠিক তার শরীরে ও আঙ্গুলে অসংখ্য নীল ও লাল দাগ ছিল। এই শিশুটির সাড়া শরীরেই ছিল হিংস্র কামড়ের দাগ। মানুষ নামের পশুগুলি তার সারা শরীর পাথর দিয়ে থেথলে দেয়। তার গলার হাড়,পাঁজরের হাড়সহ সারা শরীরের হাড় ও অস্থিমজ্জা ছিল ভাঙ্গা।
আসিফাকে হত্যার আগেও এক পুলিশ অফিসার সবাইকে রিকুয়েস্ট করেছিল,তাকে শেষবারের মত ধর্ষণের সুযোগ দিতে!
মানুষ বলে মুসলিম হত্যার ইস্যুতে বিজেপি,উগ্র হিন্দু,পুলিশ ও রাষ্ট্রযন্ত্র সবসময় একাট্টা। জানিনা এর সত্যতা কতটুকু কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান।

তাবরেজ,আসিফা উভয়ের ক্ষেত্রেই পুলিশ অপরাধীদের বাঁচাতে আপ্রান চেষ্টা করেছে। এমনকি অপরাধীদের পক্ষে মিছিলও হয়েছে। ইন্ডিয়ান মুসলিমদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে।

কিন্তু এসব ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের ইসলামী দল কিংবা উলামাদের তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়েনা। তারা একটা প্রতিবাদ মিছিলও করেনা। বড় বড় ভাষন ধারীরাও মুখে কুলুপ এঁটে থাকে!​

আমাদের সমাজে মঞ্চ কাঁপানো লক্ষ লক্ষ বক্তা আছে নিজের জন্য শুধু আত্মনিবেদন করেন। কিন্তু আসিফার মা-বাবা কিংবা তাবরেজের নববধূর চোখের পানি মুছে দেবার মত একজন মোহাম্মদ বিন কাসিম নেই!

তাই বিবেক এর কাছে ভারাক্রান্ত মনে একটা ই জিজ্ঞাসা – ” আমরা মানুষ হবো কবে ” !!!”

——————–
খোরশেদ আলম বিপ্লব।
লেখক ও সাহিত্যিক।
ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৬জুন, ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দ।