আফগানে তুরস্ককে তালেবানদের কেন স্বাগত জানানো উচিত
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ২৪ ২০২১, ২১:৩৪

সৈয়দ শামছুল হুদা: বর্তমান সময়কে বলা হয় গ্লোবালাইজেশনের যুগ। ইচ্ছে করলেই কোন অঞ্চল, কোন এলাকা, কোন জনপদ এককভাবে, স্বাধীনমতো দেশ চালাতে পারে না। যে কোন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র অঞ্চল, যোগাযোগ ব্যবস্থার শত বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও এখন কেউ একা একা চলতে পারে না। পারবে না। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ই হু দী রা নুতন যে বিশ্বব্যবস্থা জাতিসংঘ নামক অবকাটামোর মাধ্যমে গড়ে তুলেছে এর বাইরে থাকা কোনভাবেই সম্ভব না। যে সব অঞ্চলকে মনে করা হয় ওরা নিজেরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, অমুক দেশ তমুক দেশকে পাত্তাই দেয় না, এর পেছনে আসলে বড় কোন দেশের অদৃশ্য আশীর্বাদ আছে। ধরুন, উত্তর কোরিয়া এত হুমতাম কীভাবে করে? কেন করে? অথবা মায়ানমার এত বড় অপরাধ করা সত্ত্বেও তার কেন কিছুই হচ্ছে না? সব কিছুর পেছনেই খুঁজলে দেখা যাবে, বড় কোন শক্তির ছত্রছায়াতেই তারা টিকতে পারছে। বড় ভাইয়ের আশীর্বাদ ছাড়া ছোট কারো পক্ষে এককভাবে হুঙ্কার দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব না। আজকের ই স রা ই লকে দেখতে মনে হয় ক্ষুদ্র একটা রাষ্ট্র, আরবরা চাইলেই গলাটিপে মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু পারে না। কেন পারে না? কারণ ওর পেছনে গোটা ইউরোপ, আমেরিকার আশীর্বাদ আছে। যত খুন- খারাপিই ওরা করে, তার সবকিছুর দায়ভার ই স রা ই লে র সাথে সাথে ঐ তথাকথিত সভ্যতার ধ্বজাধারি শক্তিদেরও কিছুটা বহন করতে হবে।
এবার আসুন, আফগানের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি। আফগানে তুরস্কের উপস্থিতি নিয়ে এরদোয়ানের দরকষাকষি দেখে আমার হাসিই পাচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, আমি ওখানে যেতে চাই না, আপনারাই আমাকে ওখানে জোর করে পাঠাতে চান, তাহলে আমার কিছু শর্ত আছে। ন্যাটোজোটের সম্মেলনে জো বাইডেনের সাথে এমন দরকষাকষিটাই করলেন এরদোয়ান। আমি আফগানে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে রাজি, কিন্তু আমার ক’টি শর্ত, এস-৪০০নিয়ে কিছু কইতে পারবা না, আর ৩৫-যুদ্ধবিমান আমাকে সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি আফগানে আমার সাথে পাকিস্তান ও পুল্যান্ডকে দিতে হবে। মরলে আমি একা মরমু ক্যান, ইউরোপ থেকে একটা আর এশিয়া থেকে একটা নিয়াই মরমু। আসল বিষয় হচ্ছে, তুরস্ক নিজের থেকেই আফগানে থাকতে চাচ্ছে।
এবার তা লে বা ন দের প্রসঙ্গে আসি, আমার দেশের অনেকেই তা লে বা নদের একটি অংশে সুরের সাথে সুর মিলিয়ে তুরস্ককে ন্যাটো জোট হিসেবে দেখতে চাইছে। তুরস্ককেও খুনীদের অংশ মনে করছে। এর পেছনে যে পাশের দেশ সোনাবন্ধুর উস্কানী আছে এই দিকটি তারা খতিয়ে দেখছে না। কারণ কাবুলে তুরস্ক ঘাটি গাড়লে ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব আরো শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে আফগানে তুরস্ক, পাকিস্তান মিলে যদি কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দেয়, তাহলে আফগানে আমাগো বন্ধু রাষ্ট্রের নোংরা কূটনীতি অনেকটাই সীমিত হয়ে আসবে। ফলে পাকিস্তানে আর আত্মঘাতি হামলার চিত্র অনেকটাই বন্ধ হয়ে আসবে।
তা লে বা ন দের লাভ-ক্ষতি: তা লে বা ন দের সামনে এখন এটি একটি সুযোগ। তারাও ইউরোপিয়ানদের সাথে তুরস্কের মতো দরকষাকষি করতে পারে এই মর্মে যে, আমরা ন্যাটো জোটের অংশ তুরস্ককে মানবো না, যদি না আমাদের এই এই শর্ত মানা হয়। তার মধ্যে থাকতে পারে, আফগানে আমরা যে পদ্ধতির সরকার চালাবো, তাতে ইউরোপ-আমেরিকা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমাদেরকে এটা মনে রাখতে হবে যে, ন্যাটো সদস্য হিসেবে তুরস্কের সেনাবাহিনী যেই মেজাজ নিয়ে তারা আমেরিকার সাথে আফগানে ঢুলেছিল, সেই মেজাজ আর এখন তুর্কি সেনাবাহিনীর নেই। তুর্কি সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে ইসলামী শক্তির অনুকূলে গড়ে উঠছে।
তা লে বা ন রা তুরস্ককে প্রকাশ্যে শত্রু রাষ্ট্র ঘোষণা করে ভেতরে ভেতরে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মধ্যে যদি সম্প্রীতি গড়ে তুলতে পারে, তাহলে ভঙ্গুর দশায় নিপতিত আগামী দিনের তা লে বা ন সরকারের জন্য তুরস্ক হয়ে উঠতে পারে মহা আশীর্বাদ। তুরস্ক তা লে বা ন দেরকে তাদের মতো করে রাষ্ট্র গঠনে কোন প্রকার বাধার সৃষ্টি করবে না এটা বিশ্বাস রাখতে পারেন। তবে, তাদের যেহেতু কোন প্রকার নৌ-যোগাযোগ নেই, কাবুল বিমানবন্দরই অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। সেহেতু বিশ্বের সবগুলো শক্তির সাথে একটি সুন্দর বুঝাপড়ার মাধ্যম হতে পারে তুরস্ক।
আফগান সরকার চাইলেই এখন বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একা চলতে পারবে না। তাকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহন করতে হবে। বিশ্বব্যাপি তাকেও যাতায়াত করতে হবে। বিশ্বের নানা শক্তির সাথে তাকে চুক্তি করতে হবে। কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন, ইরান প্রমুখ শক্তির সাথে তাকে শক্তহাতে সকল বিষয় ডিল করতে হবে। এমন অবস্থায় তুরস্ককে তলে তলে আপন করে নিয়ে বাহ্যিকভাবে তুরস্ককে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে দেখতে থাকে তাহলে তা লে বা ন দের সুন্দর এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনে একটি সহায়ক শক্তি পাবে। তারা
এর মাধ্যমে পাকিস্তানের সর্বাত্মক সহায়তা পাবে। তুরস্কের পাবে। আমাদের বাংলাদেশের কিছু ভাই মনে করে, এরদোয়ান হলো, তা লে বা ন দের প্রতিপক্ষ। তাকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া ঠিক না। এটা এক ধরণের একগুঁয়েমি। বিশ্বায়নের এই যুগে একা থাকার কোন সুযোগ নেই। একা চলার কোন সুযোগ নেই। তাই তুরস্ককে তা লে বা ন দের সাদরে গ্রহন করা উচিত। এতে একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে তারা সত্যিকার বন্ধুর সুপরামর্শ পাবে, আন্তরিক সহযোগিতা পাবে।