‘আপনি দেশের মালিক, বলে দিন কী চান’ : জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ১৮ ২০২৪, ০১:৩৩

জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকে সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ উল্লেখ করলেও এর পাশাপাশি রাষ্ট্রসংস্কারের কাজকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, জাতিকে যেন সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা পূরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা না হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে সংস্কারের সুপারিশ তুলে ধরার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্ল্যাটফর্মে যান। আপনার মতামত খোলাখুলিভাবে তুলে ধরুন। আপনি দেশের মালিক। আপনি বলে দিন আপনি কী চান, কীভাবে চান।’

রোববার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে তিনি এ ভাষণ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদের এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন আমরা শুরুতে গঠন করেছিলাম, তারা এরই মধ্যে তাদের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনারা তাদের কার্যক্রমের আপডেটও দেখছেন। কয়েকটি সংস্কার কমিশন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। আমার অনুরোধ, আপনারা এই প্ল্যাটফর্মে উৎসাহ সহকারে আপনাদের মতামত জানাতে থাকুন।’

নির্বাচন নিয়ে মতামত জানানোর পাশাপাশি সংস্কার নিয়েও সবাইকে কথা বলার আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সব বক্তব্য বিনা দ্বিধায় বলতে থাকুন। সবার মনের কথা তুলে ধরুন। আমার অনুরোধ, সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘমেয়াদি জীবনী শক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী তৈরির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংস্কার পাশাপাশি চলবে উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দল ও দেশের সব মানুষের মতামত অপরিহার্য, সে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনি আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।’

‘আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাব। তবে কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার কাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করব। আমরা চাইব, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা তৈরি করতে পারি, যা যুগযুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন,’— বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকে নীতির কাঠামোয় আনার জন্য, এবং রাজনীতির জন্য নতুন পরিবেশ সৃষ্টির নিবিড় আকাঙ্ক্ষা থেকে। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।’

সংস্কারে ঐকমত্য হতে সময় লাগতে পারে উল্লেখ সেই সময়টুকু দিতেও সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘(নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি) অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে আলাপ চলতে থাকবে। নির্বাচন ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার ব্যাপারে ঐক্যমত্য গঠনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে। দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রশ্ন তুলতে থাকতে থাকব, কী কী সংস্কার নির্বাচনের আগে আপনারা করে নিতে চান। নির্বাচনের আয়োজন চলাকালীন কিছু সংস্কার হতে পারে। সংস্কারের জন্য নির্বাচনকে কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুদিন পরে চলে যাব। কিন্তু আমাদের মাধ্যমে জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হলো, সে সুযোগ যেন কোনোভাবেই হাতছাড়া করে না দিই, এ ব্যাপারে দৃঢ় থাকার জন্য আমি দলমত, নারী-পুরুষ, ধর্ম, তরুণ-বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক নির্বিশেষে সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি আপনারা আমার এই আবেদন গ্রহণ করবেন।’

ভাষণে সরকারের ১০০ দিনের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের গুম-খুনের বিচারের প্রত্যয় জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক বিভিন্ন তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন।