আন্তর্জাতিকীকরণের পথে ইবি: আধুনিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. আসকারী
একুশে জার্নাল
জুন ৩০ ২০২০, ২০:২৬

শাহরিয়ার কবির রিমন, ইবি প্রতিনিধি: স্বপ্নের বাস্তবায়ন একপ্রকার স্বপ্নেই হয়ে থাকে। মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে; কিন্তু স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন খুব কমই ঘটে। এই কঠিন কাজটি নিয়ে প্রান্তিক জনপদের এক প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। যেখানে একজনের স্বপ্নের ফেরি করতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে প্রতিনিয়ত সেখানে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ফেরি করে একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী।
উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রপটই পরিবর্তন করে দিয়েছেন ড. রাশিদ আসকারী। রং-তুলির আঁচড়ে স্বপ্নের ক্যানভাসে এঁকে এঁকে সফলতার চিত্রায়ন করে চলেছেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ বছরের ইতিহাসে যে নামটি এখন পর্যন্ত সবথেকে সফল উপাচার্যের খেতাব পেয়েছে তা হয়তো আগামী শতবছরেও জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিগত সাড়ে তিন বছরে প্রতিদিন নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন ড. রাশিদ আসকারী। চমকপ্রদ সব পরিকল্পনার মাধ্যমে নমনীয় গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ধারা। চিত্রপটে যুক্ত করে চলেছেন উন্নয়নের অসাধারণ সব চিত্র। উন্নয়নের ধারাকে একটি সুষম গতি দিয়েছেন ড. আসকারী; যে ধারাতে এক সুতোয় কাজ করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ সকলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে এক নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেছেন তিনি, যে উদ্দীপনা সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীকে স্বপ্ন দেখায় একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রান্তিক জনপদে গড়ে উঠা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলা অনেকের কাছে প্রথমদিকে পাগলের কারবার মনে হলেও এখন তা অনেকটাই দৃশ্যমান। অবকাঠামোগত দিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে চলেছে বর্তমান প্রশাসন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ইবিতে এবারই প্রথম ৪১ বছরের ইতিহাসে ১৫৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার সর্ববৃহৎ বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টের আওতায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে বর্তমান ইবি প্রশাসন। উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি সাধনে চালু করা হয়েছে ই-টেন্ডারিং সিস্টেম। এখন চোখ মেললেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক দৃশ্যপট দৃষ্টিগোচর হয় সকলের কাছে। এভাবে উন্নয়নের সূচক অব্যাহত থাকলে আগামীর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একসময় বাংলাদেশের গর্ব হবে তা হলফ করে বলা যায়।
ইতোমধ্যে সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। মনোরম শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজিয়েছে বর্তমান প্রশাসন। প্রায় পনের হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অর্ধশত বিদেশী শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নরত আছে। যাদের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে গবেষণার প্রতি। উৎসাহিত করা হচ্ছে প্রজেক্টভিত্তিক গবেষণায়। সকল অনুষদ হতে প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা জার্নাল।
পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মশালা। সমঝোতা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বহির্বিশ্বের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কোর্স কারিকুলাম গবেষণায় কোলাবোরেশান রিসার্চের জন্য এমওই হয়েছে ৯টি দেশের সাথে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক, বিজ্ঞান-মনস্ক, প্রগতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে যে মানুষটি চেষ্টার কোন ত্রুটি না রাখার অঙ্গীকার করেছেন সেই রাশিদ আসকারী ১৯৬৫ সালের ১লা জুন রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার আসকারপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বৃটিশ আমলে এমএবিএড এবং ইংরেজী বিষয়ে হাইস্কুল শিক্ষক। শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের অধিকারী প্রফেসর আসকারী ১৯৮০ সালেরাজশাহী র্বোড থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি উর্ত্তীণ হন। ১৯৮২ সালে একই র্বোড থেকে এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ সহ সমগ্র বোর্ডে ৫ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ থেকে অর্নাস ও ১৮৬ সালে মার্স্টাস পাশ করেন। তিনি ভারতের পুণা ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রিঅর্জন করেন।
শিক্ষা জীবন শেষ হতেই ড. আসকারী ১৯৯০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বিভাগে ১৯৯৩ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০০০ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ২০০৫ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের কিং খালিদ ইউনিভার্সিটির ইংরেজী বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর পদে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রফেসর আসকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে মোট তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ মেয়াদে ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯-২০০০ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং একই বছর তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব হিশেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর প্রকাশিত ইংরেজী-বাংলা গ্রন্থের সংখ্যা ৮; তন্মধ্যে একটি সম্পাদিত। তার লিখিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ২৫। আর্ন্তজাতিক প্রকাশনা ১২টি। তার রচিত ইংরেজী ছোট গল্প ওহায়িও স্টেট ইউনিভার্সিটি ইউএসএ থেকে প্রকাশিত জার্নাল অব দি পোস্ট কলোনিয়াল কালচারস এন্ড সোসাইটিস, ভারতের কনটেম্পরারি লিটারারি রিভিউ (সিএলআরঅই) থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির আজীবন সদস্য। এছাড়াও জানা অজানা অনেক সফলতার পালক যুক্ত হয়েছে ড. রাশিদ আসকারীর ঝুলিতে। সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রফেসর ড. রশীদ আসকারী অর্জন করেছেন ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্মাননা পদক ২০১৯’।