আজ শনিবার, ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ৪৫তম বার্ষিকী।

বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করে দিনটি। তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপদগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

এই হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে মহান আল্লাহর দরবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।

দেশে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী ১৫ আগস্ট শনিবার সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকার বনানীস্থ কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও অন্যান্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, পুষ্পস্তবকক অর্পণ এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিশেষ দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিনে কর্মসূচি পালনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সারা দেশের মসজিদসমূহে বাদ যোহর বিশেষে মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়াও জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীগুলো ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। পোস্টার মুদ্রণ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/গ্রোথ সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার স্থাপন ও এলইডি বোর্ডের মাধ্যমে প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এছাড়াও জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সকল মোবাইল গ্রাহককে ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করবে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থা জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।

বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনর্মিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় শোক দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্য উদয়ের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।

সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। একই সময় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল ও সুবিধা মতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অুষ্ঠিত হবে। দুপুরে অস্বচ্ছল, এতিম ও দুঃস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।