আওয়ামী লীগ ও সূক্ষ্ম ইসলামিকরণ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ০৫ ২০১৯, ০৫:৩১

 

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

২০১৩ সালের ৫ মে’র সংঘাতের পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একধরণের ড্যামেজ কন্ট্রোল ও ব্যালান্সের রাজনীতি শুরু করেছে। একদিকে ভারত বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করেছে ও ফাঁসি দিয়েছে। আবার অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের দিকে দূতিয়ালি, সন্ধি ও লেনদেনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর সুস্পষ্ট একটি ফলাফল হল কওমি সনদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও তার বিনিময়ে কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাত না হলেও অন্তত দাঁতাত বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই পারস্পরিক লেনদেনের সম্পর্কের আরেকটি লক্ষণ হল হেফাজতের প্রভাব এখন ন্যাশনাল কারিকুলাম ও টেক্সটবুক বোর্ডের উপরে অল্পবিস্তর হলেও পড়া শুরু হয়েছে। একারণে সুশীল ও বাম ঘরানার সেক্যুলারদের অস্বস্তিও বেশ লক্ষণীয়।
তবে সুশীল ও বাম সেক্যুলারদের শত আপত্তি সত্ত্বেও এই ভারসাম্য রক্ষার প্রবণতা কিন্তু ক্রমাগত বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এছাড়া সার্বিকভাবে সমাজে নারীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হিজাব ও পর্দার ব্যবহারও আগের তুলনায় ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশে ইসলামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বতঃস্ফূর্ত সঞ্চারণের লক্ষণ। এভাবে শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতিতে খুব ধীরে হলেও একটা সূক্ষ্ম ইসলামিকরণ ঘটছে যা সেক্যুলার ও বাম মহল মনেপ্রাণে বন্ধ করতে চাইলেও বন্ধ করতে পারছে না।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই দেশীয় এবং বৈশ্বিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ইসলামিকরণের ধারাকে সুকৌশলে নিজেদের মত করে ব্যবহার করতে চাইছে। সেদিক থেকে ১৯৭২-৭৫ সালের আওয়ামী লীগ আর আজকের আওয়ামী লীগ বেশ ভিন্ন — অন্তত ডি ফ্যাক্টো বা প্রকাশ্য রূপের দিক থেকে। যদিও ১৯৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতির প্রতি একধরণের ডি জুরে বা নীতিগত আনুগত্য আওয়ামী লীগ এখনো দেখিয়ে থাকে। শেখ হাসিনার অধীনস্থ আওয়ামী লীগের এই নতুন কৌশলের কাছে খালেদা ও তারেক জিয়ার বিএনপি ইসলাম বিষয়ক রাজনীতিতে বড় ধরণের মার খেয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার হল এই রক্ষণশীল পরিবর্তনের ধারা, যা থেকে আওয়ামী লীগও মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারছে না, তা অনিবার্যভাবে একসময় একটি টিপিং পয়েন্টে গিয়ে পৌঁছে যাবে। তখন সমাজে গুণগত বড় পরিবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। কামাল আতাতুর্কের তুরস্ক এভাবেই ধীরে ধীরে বদলে আজকে এরদোয়ানের তুরস্কে পরিণত হয়েছে।