আইসিইউ খুঁজতে খুঁজতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন দুই সহোদর

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০৬ ২০২০, ১৪:৪৪

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম হাটহাজারীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই সহোদর ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, হাটহাজারী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব দেওয়ান নগর জোহরা বাপের বাড়ির মরহুম গোলাম রসুলের ছেলে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মো. শাহ আলম (৩৬) এবং তার ছোট ভাই হাটহাজারী বাজারের এন জহুর মার্কেটের কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী মো. শাহ জাহান (৩২)।

শুক্রবার (০৫ জুন) বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ(চমেক) হাসপাতালে মারা যান শাহ আলম(৩৬), একইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে একই হাসপাতালে মারা যান ছোট ভাই ব্যবসায়ী শাহজাহান(৩২) ।

মাত্র ৮ ঘণ্টার একই পরিবারের দুই ভাইয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের মাতম চলছে। পরিবারের অভিযোগ হাসপাতালে আইসিইউ খুঁজতে খুঁজতে আইসিইউ না পাওয়াতে বিনা চিকিৎসায় দুই ভাইয়ের এমন মৃত্যু হয়েছে চোখের সামনেই।

জানা যায়, দুই ভাই করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রায় চার দিন পূর্বে চমেকে ভর্তি হয়। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ডাক্তার তাদের আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দেয়। কিন্তু হাসপাতালে অনেক ধরনা দিয়েও আইসিইউ বেড না পাওয়াতে গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে মৃত্যু হয় শাহ আলমের। একইভাবে আইসিইউর অভাবেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায় ব্যবসায়ী শাহজাহান।

মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ের আবীরস্থ সবজি মার্কেটে কাজ করতেন মো. শাহ আলম (৩৬)। গেল জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে প্রবাস থেকে ছুটিতে দেশের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। করোনার সংকটের কারণে আটকা পড়েন দেশে। গত ৭/৮ বছর আগে বিয়ে করেন শাহ আলম। সংসারে ৬ বছর বয়সী সানজিত নামের একটি সন্তান রয়েছে তার। শাহ আলমের ছোট ভাই নিহত শাহজাহান (৩২) হাটহাজারী বাজারের কাচারী সড়কের এন জহুর শপিং সেন্টার মার্কেটের কাপড়ের দোকান আপন ফ্যাশনের মালিক। বিবাহিত শাহজাহান সওদাগরের স্ত্রী ও ৫ বছর বয়সি এক কন্যা ও ১ বছর বয়সী এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

নিহত শাহ আলমের খালাত ভাই খোরশেদ জানান, ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইকে হারালাম শুধুমাত্র আইসিইউর অভাবে। চিকিৎসকরা বলেছেন আইসিইউতে রাখতে কিন্তু কোনো সিট পাচ্ছিলাম না। টাকা দিয়েও কোনো হাসপাতালে মেলেনি আইসিইউ শয্যা। এমনকি সময়মতো করোনা পরীক্ষাটাও করাতে পারিনি সংশ্লিষ্টদের অসহযোগীতার কারণে।

এ হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ধরনা দিতে দিতেই দুই ভাই চোখের সামনেই মারা গেছে। কিন্তু আপনজন হিসেবে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি ভাইদের জন্য। তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হলেও কয়েক দিন আগে স্যাম্পল নেওয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পর্যন্ত হাতে আসেনি।

এদিকে একই পরিবারের তরতাজা দুটি প্রাণ ঝড়ে যাওয়াতে এলাকায় শোকের ছায়া পড়েছে। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই নিকটাত্মীয়দের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোকের ঝড় উঠেছে।