অসময়ে তিস্তায় বাড়ছে পানি, কপাল পুড়লো চাষীদের
একুশে জার্নাল ডটকম
এপ্রিল ০৯ ২০২২, ১৭:০৫
রোকন সরকার,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে তিস্তার চরাঞ্চলে জেগে ওঠা বালুতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেন চাষিরা। এ বছরও এর ব্যতয় ঘটেনি। চাষিদের কঠোর পরিশ্রমে তিস্তার বালু চর সবুজ সমারোহে পরিণত হয়। বোরো-আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, কাউন, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, তামাক, বাদামসহ নানা জাতের শাক-সবজিতে ভরে ওঠে তিস্তার চরাঞ্চল। যা বর্ষার আগেই ঘরে তোলার স্বপ্ন বুনেন চাষিরা।
কিন্তু ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু জায়গাগুলো তলিয়ে গেছে। এতে ডুবে যায় চরাঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত ফসল। পেঁয়াজ, রসুন, কাউন আর বোরো ধান মাত্র ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা শুরু হতো। উঠতি ফসল অসময়ের পানি বাড়ায় ডুবে নষ্ট হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে তিস্তা পাড়ের প্রতিটি কৃষক পরিবার।এ ফসলই সারাবছর চলে। তিস্তাপাড়ের মানুষ। বন্যাকালীন সময়ের জন্য সঞ্চিত রাখেন এই শুস্ক মৌসুমের ফসল।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর বিভিন্ন চরে ১৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। অসময়ে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ২৫ হেক্টর জমির বোরো ক্ষেত পানিতে জমির পেঁয়াজ ও প্রায় ৭০ হেক্টর জমির তরমুজ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া বাদাম, কালিজিরা, তিশির ক্ষেতও তলিয়ে গেছে।
উপজেলার তিস্তা টি-গ্রোয়েন হেড এলাকার চাষী আবদুল মান্নান বলেন, ‘পানিটা হইবে আগে জানালে যেগুলো তোলা যাইতো সেগুলো তুলতাম । আমার সব পেয়াজ গেইছে, ধানখ্যান তো দেখতে পাইতেছো বাবা।ঐ যে দেখা যাচ্ছে সব ধান, পেঁয়াজ, কাউন, বাদাম পানিতে ডুবি গেইছে।চৈত মাসে এইদান পানি বাহে দেখং নাই।
একই এলাকার আবু জাফর বলেন, ‘প্রতি বছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পেঁয়াজ আবাদ করি। এবারো করছি। কিছু পেয়াজ তুলছি। কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় বাকি ক্ষেত সব ডুবে গেছে। পেঁয়াজ ভিজে যাওয়ায় পঁচে যাইবে। পানি বাড়ায় এলাকায় অনেক কৃষকের বোরো ধান, পেঁয়াজ,তিশি গমক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর জানান, চলতি সপ্তাহে হালকা মাঝারি ও বর্জসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন,সময়মত হারভেস্ট করতে পারলে অনেকটা লাভবান হওয়া যায়। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর বোরো ধান ও ১৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কৃষক হারভেস্ট করেছে।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। অনুমোদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’