লন্ডনী কন্যা, পুলিশ ও এক অদ্ভুত কাহিনী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৬ ২০২১, ১৮:৪৮

আব্দুল্লাহ মায়মুন

(গত পর্বের পর থেকে)

ঘটনাস্থল হবিগঞ্জ জেলাধীন নবীগঞ্জ থানার আউশকান্দিতে দীর্ঘ ১৬ ঘন্টা ভোগান্তির পর নুসরাত তার গ্রামের বাড়ী জগন্নাথপুরে যায়। সাথে ছিলেন আমার শ্বশুর এবং দুই চাচা শ্বশুর।

আউশকান্দি থেকে সুনামগঞ্জ জেলাধীন জগন্নাথপুর থানার শ্রীধরপাশা গ্রামে যেতে যেতে প্রায় রাত হয়ে যায়। মার্চ মাস, দিন এমনিতেই ছোট। তাই খুব দ্রুত রাতের অন্ধকার চাদর ফেলে।

ঘরে পৌঁছলেই শুরু হয় কান্না। ঘরে ছিলেন তার দাদা-দাদী এবং চাচী-ফুফু। পাশের ঘর থেকে কিছু মহিলা আসেন। এবার ইংল্যান্ড থেকে শুধু আমার শ্বশুর ও নুসরাত আসে। আমার শ্বাশুড়ি এবং একমাত্র সমন্ধী হুযায়ফা ইংল্যান্ডেই থাকেন। তারা ইংল্যান্ডে বসেই আমাদের জন্যে চিন্তা করতে থাকেন।

নুসরাত ঘরে পৌঁছার পরেই অনেক মহিলা ঘটনার পূর্ণ বিবরণ জানতে চান। সে কিছু জবাব দিয়ে বলে, আমি এখন টায়ার্ড, বিশ্রাম নিব। এভাবেই প্রথম রাত বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, উৎকন্ঠা এবং শোকে অতিবাহিত হয়। পরদিন গ্রামের, পাশের গ্রামের বিভিন্ন মহিলা আসতে থাকেন ঘটনার বিবরণ শোনার জন্যে। সে একই কথা বার বার বলতে বিরক্ত হয়। বিরক্তির কারণ ছিলো অন্যটি, তারা কথা বলতে বলতে বিভিন্ন ধরনের আজগুবি সন্দেহ এবং প্রশ্ন করা শুরু করে। যেমন- মনে হয় তোমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে, তোমার স্বামীর কি কোনো শত্রু আছে কিনা? তোমার স্বামী জঙ্গি? ইত্যাদি।

এদিকে আমার শ্বশুর ও চাচা স্তদ্ধ। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। কারা এ ঘটনা ঘটালো এবং কেনোই বা ঘটালো?

এদিকে আমার চাচা শ্বশুরের মাথায় পুলিশের ঢুকিয়ে দেওয়া সন্দেহগুলো কাজ করছিলো। পুলিশ তাদেরকে বলছিলো, এর পিছনে ড্রাইভার আব্দুর রহিমের হাত আছে। কারণ হিসেবে তারা দেখায়, সে কেনো এত রাতে এখানে গ্যাস নিতে আসলো? আর শ্বশুর দীর্ঘ দিন ইংল্যান্ডে থাকায় বাংলাদেশের জুলুম-নির্যাতন সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণাই রাখেন নি। তাই তিনি সন্দেহ করতে থাকেন যে, হয়তো নিজেদের মধ্যে কেউ কোনো লোভে পড়ে অপহরণ করিয়েছে। তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের অনেকেই বিয়ের পূর্বে লন্ডনী মেয়ে নুসরাতের বিয়ের প্রস্তাবক ছিলো। কেউ কেউ সরাসরি, আবার কেউ কেউ ঘুরিয়ে। এখন তাঁর সন্দেহের তীর এদের দিকে গেলো। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। বারবার গড়িমসির নামে প্রতারণা করছিলো। তখন তারা বুঝে নেন যে, গুটি অন্যদিক থেকে ঘুরানো হচ্ছে। তাই তারা এদিক-সেদিক সন্দেহ করা থেকে বিরত হয়ে যান।

এদিকে গ্রামের মহিলাদের বাড়িতে আসা সময়ে সময়ে বাড়ছিলো। তাদের কথা-বার্তা ও আজগুবি প্রশ্নে নুসরাত বিরক্ত হয়ে যায়, স্থিরভাবে কিছু ভাবতেই পারে না। তখন সে বলে দেয়, এরকম কেউ আসলে তার সাথে যেনো কথা না বলানো হয়। তার চোখে সর্বদা ঘটনার বিভীষিকাময় দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছিলো, কী থেকে কী হয়ে গেলো! কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। প্রিয়তমকে চোখের সামনে কিডন্যাপ হতে দেখে সে নিথর হয়ে যায়, নিস্তদ্ধ হয়ে যায়৷ শুধু ভাবে প্রিয়তমের কিছু হলে তার কী হবে? তাই শুধু কান্নাকে আপন সঙ্গী বানিয়ে নেয়। কখনও সে একা একা কাঁদে, কখনো তার দাদুমণিকে ধরে কাঁদে, কখনো দিনে কাঁদে, কখনো রাতে কাঁদে, কখনো কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে দেয়, কখনো শব্দ করে কাঁদে, কখনো নিঃশব্দে। কখনো দেহ-মন উভয়টি কেঁদে উঠে। এভাবে কতবার যে, লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে তা একমাত্র সে জানে আর জানেন অন্তর্যামী, যার কাছ থেকে কিছুই লুকানো সম্ভব নয়, যিনি রাখেন প্রতিটি অন্তরের খবর।

এক সময় তার চোখের পানি শুকিয়ে যায়। বুকের বাম পাশে চিন চিন করে ব্যথা শুরু হয়। শরীর হয়ে যায় দুর্বল। ভালোভাবে খেতেও পারে না। দেশে মা নেই, আছেন ইংল্যান্ডে। নতুবা সে তাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা শান্তি পেত। এদিকে নাই শ্বাশুড়ি, তিনিও ইংল্যান্ডে। তাহলে হয়তো কথার মাধ্যমে কিছুটা সান্ত্বনা পেত। শুধু ফোনেই তাদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। ফোনে কথা বলা আর সামনে থাকা দুটো কি সমান?

বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। বাবার কলিজার টুকরো। আদরে-আহ্লাদে যে বড় হয়েছে। এখনও জীবনের স্বাদ যে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। জীবন কী জিনিস এটা বোঝার পূর্বেই ঘটে গেলো এরকম একটা ট্রাজেডি।

প্রিয়তমের চিন্তায় যে মেয়ের এমন অবস্থা, এই মেয়েকেই যখন সন্দেহ করা হয় যে, সে তার স্বামীকে অপহরণ করিয়েছে তখন অবস্থা কী দাঁড়ায়?

 

যাইহোক, দেশে আমাদের পরিবারের শুধু বড় বোন আছেন আর আছেন ভাবী। বোন থাকেন সিলেট জেলাধীন বালাগঞ্জ থানার গহরপুরের সুলতানপুর গ্রামে। এখান থেকে আমার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ী অনেক দূর, সেখান থেকে সাথে সাথে জগন্নাথপুর যাওয়া কঠিন। তার আছে ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চা। তাই তিনি তিনদিন পর জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা যান নুসরাতকে দেখতে৷ কিন্তু আমার একমাত্র ভাতিজি নাফীসা কয়েক মাসের শিশু থাকায় ভাবী যেতে পারেন নি। তবে ফোনে যোগাযোগ রাখেন।

আমার বোন নুসরাতকে দেখতে গিয়ে তার সাথে সান্ত্বনামূলক কিছু কথা বলেন। সেদিন কিছুটা ভালো যায়। কিন্তু পরে আবার শুরু হয় অন্ধ ভয়, অজানা আতঙ্ক। এভাবেই সে দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে থাকে।

 

নবীগঞ্জ থানার পুলিশ আমার শ্বশুরবাড়ীর লোককে শুধু প্ররোচনাই দেয় তা নয়, বরং তারা ড্রাইভার আব্দুর রহীমের পরিবারকেও প্ররোচনা দেয়। আমার পরিবারকে বলে অপহরণের পিছনে ড্রাইভারের হাত রয়েছে আর ড্রাইভারের পরিবারকে বলে এ ঘটনার পিছনে নুসরাত এবং আমার শ্বশুরের হাত রয়েছে। পুলিশ কর্তৃক পুশ করা এই প্ররোচনা তাদের মধ্যে বিষের মত কাজ করে। তারা সুস্থভাবে থানা ছাড়লেও নিজেদেরকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলো না।‌ তারা গ্রামে ফিরে যায়, মৌলভীবাজারে। তারা আমাদের নানাবাড়ীর গ্রাম মামরকপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। তাই পুলিশের কথা বিশ্বাস করে তারা ক্ষোভ ঝাড়তে থাকে আমাদের নানাবাড়ীর উপর। বিশেষ করে আমার ছোট মামী যিনি নুসরাতকে মেয়ে বানিয়ে ছিলেন তার পরিবারের উপর। তারা বলাবলি করতে থাকে যে, আমাকে অপহরণ করার পিছনে নুসরাতের হাত রয়েছে। এ অপবাদ এক কান দুই কান হয়ে পুরো এলাকায় চাউর হয়ে যায়। আমি কারাগার থেকে বের হওয়ার পরেও এ অপবাদ শুনে নুসরাতকে নিয়ে মোটামুটি লম্বা লেখা ফেবুতে পোস্ট করি। লেখাটির নেপথ্য কারণ ছিলো এ অপবাদ। যখন ওই অপবাদকারীরা জানতে পারে এত কিছুর পরেও নুসরাতের সাথে আমার সংসার ঠিক আছে, তখন তারাই বলে, আরে… ‘মেয়েটা দেখি অনেক ভালো’!

এভাবে পুলিশ অতি সুক্ষ্মভাবে সরল মানুষগুলোকে মিথ্যা সন্দেহ ঢুকিয়ে বিভ্রান্ত করে।

নুসরাত একজন লন্ডনী মেয়ে। সিলেটে লন্ডনী ছেলে-মেয়েদের কদর খুব বেশি। যদি চার সন্তানের লন্ডনী জননী এসে দাবি করে সে বিয়ে করবে, তাহলে সঙ্গীরূপে অতি তরতাজা জলজ্যান্ত কিউট ইনোসেন্ট বয় পেতে তার সময় লাগবে না। প্রার্থীর অভাব হবে না। এমনিভাবে যদি তিন স্ত্রীর স্বামী পঞ্চাশোর্ধ কোনো বুড়া বলে, ‘মুই বিয়া করতাম’! তাহলে তার জন্যে অতি রূপবতী সুদর্শনা কুমারী মেয়ে পেতেও সময় যাবে না।

যখন সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক জানতে পারলো যে, নুসরাত নামের এক লন্ডনী মেয়ের স্বামী হারিয়ে গেছে। মেয়েটির বিয়ে হলেও সন্তানাদি কিছু নেই। বিয়ের মাত্র ১১ মাস পরে স্বামীহীন অনিশ্চিত পথের যাত্রী হয়েছে। তখন তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। আমার শ্বশুরকে কিছু বলতে পারে না। শ্বশুরের আভিজাত্য গাম্ভীর্যে তাদের কম্পন শুরু হয়ে যাবে। তাই ইংল্যান্ডে অবস্থিত আমার সমন্ধী হুযায়ফাকে বলে, তোমার বোনের স্বামী তো কিডন্যাপ হয়ে গেছে? বেঁচে আছে না মরে গেছে কে জানে? কবে আসবে কি আসবে না তাও নিশ্চিত নয়। তাই আমার অমুক ভাই/মামা/ভাতিজা/চাচা আছে চিন্তা করিও না।

এভাবে তারা প্রত্যেকে নিজেদের প্রার্থীকে বুকিং দিতে থাকে। কিন্তু চার মাস দশ দিন পর যখন আমার সন্ধান পাওয়া যায় তখন তাদের সব স্বপ্নের গুড়ে বালি পড়ে যায়। আর আমার মুক্তির পর তাদের উদ্দেশ্য খান খান হয়ে যায়। আ- হাহারে!!

এর‌ইমধ্যে ঘটে যায় এক অদ্ভুত কাহিনী।

লন্ডনে এক আলেম থাকেন। তার দেশের বাড়ী আমাদের ঘটনাস্থল নবীগঞ্জ থানায়। যেখান থেকে আমাকে গুম করা ওখানে আবার প্রচুর ডাকাতি হয়। তাই তিনি আমার এ ঘটনাকে ডাকাতদের অপহরণ মনে করেন। অতীতে তিনি বেশ কিছু মানুষকে ডাকাতদের অপহরণ ও লুটতরাজ থেকে মুক্তি দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। সে হিসেবে ডাকাত গ্যাংয়ের সাথে তার পরিচয়ও আছে। লন্ডনে আমাদের পরিবারের সাথে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেন। তিনি ওই ডাকাত গ্যাংয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। আমার কথাও জিজ্ঞেস করেন। তারা দাবি করে, হ্যাঁ, আমি তাদের কাছেই বন্দী আছি।

আমার মুক্তির জন্যে তারা পনের লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং বিষয়টি গোপন রাখার শর্ত দেয়।

তিনি এসে আমার আব্বার কাছে বলেন, আব্বা তখন পুত্র হারানোর ব্যথায় শোকাতুর, অন্তর পুত্রের প্রতি ভালবাসায় টইটম্বুর। তাই তিনি খুব সহজেই বিষয়টি গ্রহণ করে নেন এবং ওই আলেমকে বলেন, ডাকাতদের সাথে দরকষাকষি করতে।

বিষয়টি যেহেতু বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কিত আর আব্বা আছেন ইংল্যান্ডে। তাই বিষয়টি সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্যে দেশের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এজন্যে তিনি বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে দুলাভাই মাওলানা নুমানুল হক চৌধুরীকে বলেন। দুলাভাই শোনার পর বলেন, হয়তো এই আলেম বাটপার নতুবা তিনি যাদের সাথে আলাপ করতেছেন তারা বাটপার। তাই তাদের কথায় কান না দেওয়া উচিৎ। কিন্তু পুত্রের প্রতি অপ্রতিরোধ্য ভালবাসা তখন আব্বাকে অন্ধ ও বধির করে দিয়েছিলো। এ ব্যাপারে তিনি কারো পরামর্শ শুনতে নারাজ। টাকাটা তাদেরকে দেওয়া আর পানিতে ঢালা যে সমান এ কথা বুঝতেও নাখোশ। দুলাভাইয়ের এ পরামর্শ তিনি নিলেন না। তখন দুলাভাই বলেন, তাহলে তাদেরকে বলুন, তারা যেনো মায়মুনের সাথে ভিডিওকল বা অডিওকলে কথা বলায়। আব্বা এ কথা গ্রহণ করেন এবং তিনি ওই আলেমকে এ শর্ত জুড়ে দেন।

আব্বা যখন এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন,

তখন দুলাভাই বিষয়টি আমার বড় ভাই মাওলানা আব্দুল্লাহ মুস্তাফীজ এবং চাচা মাওলানা আব্দুল মুকীত জালালাবাদী রাহ. -কে জানান। তারা উভয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পৃথক পৃথক মেসেজ দিয়ে আব্বাকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু আব্বা এদের মেসেজ পাওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দুলাভাইয়ের উপর দেখান।

তিনি দুলাভাইকে বলেন, আপনাকে বলছিলাম, কাউকে না জানাতে। আপনি কেনো তাদেরকে জানালেন? টাকাটা আমার যাবে, আপনার না। আপনি কেনো এ নিয়ে এত টেনশান করতেছেন?

এতে দুলাভাই নীরব হয়ে যান, শুধু ‘জ্বী’ ‘জ্বী’ বলতে থাকেন। ভাবটা এমন ‘শ্বশুর ইজ অলওয়েজ রাইট’!

তখন আব্বা বলেন, ডাকাতদের সাথে কথা হয়েছে, তারা মায়মুনকে অডিও কলে কথা বলাবে এবং পনের লক্ষ টাকার জায়গায় তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণে সম্মত হয়েছে। টাকাটা খুব দ্রুত দিতে হবে, তাই দুলাভাই দিবেন ঋণ হিসেবে এক লক্ষ এবং বাকী দুই লক্ষ টাকা দিবেন আব্বার অন্যতম প্রিয় শাগরিদ মাওলানা মুখলিসুর রাহমান রাজাগঞ্জী।

দুলাভাই যদিও মুখে সম্মত হন, কিন্তু মনেপ্রাণে বিষয়টি মেনে নিতে পারেন নি।

একদিন জানা যায় যে, ডাকাতরা আমাকে আব্বার সাথে কথা বলাবে। এরপরে তারা টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিবে। যে কোনো সময় তারা কথা বলাতে পারে, তাই আব্বা ওইদিন পুরো রাত্র সজাগ থাকেন। এক ফোঁটাও ঘুমান নি। কারণ যে কোনো সময় ফোন আসবে বলে কথা! আর ওইদিকে দুলাভাইকে বলে দেন, তিনি যেন টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হন। দুলাভাই মনে না মানা সত্ত্বেও বের হলেন, তিনি জানার পরেও এভাবে এত টাকা কী করে পানিতে ঢালবেন আর কীভাবে শ্বশুরের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখবেন! এজন্যে সাক্ষ্য স্বরূপ তাঁর চাচাত ভাই, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু, বিচক্ষণ মাওলানা রেজাউল হক চৌধুরীকে সাথে নেন। রেজা ভাই পুরো ঘটনা শুনে বলেন, এগুলো বাটপারি ছাড়া কিছু নয়। জবাবে দুলাভাই বলেন, ‘আমি তা বুঝতেছি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমি যদি শ্বশুরের আদেশ না মানি তাহলে আমার চাকুরী থাকবে না’।

একদিকে দুলাভাই এক লক্ষ টাকা নিয়ে প্রস্তুত। অন্যদিকে মাওলানা মুখলিসুর রাহমান রাজাগঞ্জীও দুই লক্ষ টাকা নিয়ে প্রস্তুত। অপরদিকে আব্বার নির্ঘুম রাতে সতর্কভাবে সময় পার করছেন। এভাবে ইংল্যান্ডের রাত অতিবাহিত হয়ে বাংলাদেশের দুপুর। তখন দুলাভাইকে আব্বা ফোন দিয়ে বলেন, টাকা নিয়ে যাওয়া লাগবে না। তারা তাদের কথামত মায়মুনকে আমার সাথে কথা বলাতে পারে নি!