সহীহ রাজাকারনামা!

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ১৮ ২০১৯, ১৭:৪৭

উবায়দুর রহমান খান নদভী

‘রাজাকার’ ভুল উচ্চারণ। এ শব্দটিই ভুল। এর কোনো অর্থ হয় না। সঠিক ও অর্থবোধক শব্দ ‘রেজাকার’। অর্থাৎ, স্বেচ্ছাসেবক। রেজাকার একাধারে উর্দু ও ফার্সি শব্দ। ইংরেজিতে ভলান্টিয়ার।

শাব্দিক অনুবাদ করলে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নাম হবে জাতীয়তাবাদী ‘রেজাকার’ দল আর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তরজমা হবে আওয়ামী ‘রেজাকার’ লীগ।

পাকিস্তান রক্ষায় সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীর নাম রাখা হয় রেজাকার বাহিনী। পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ের হুজুগ ও মূর্খতা থেকে শব্দটি হয়ে যায় রাজাকার। একমুখী শিক্ষিতরা এটিই চালু করে দেয়। বিভিন্ন ধারার পড়াশোনা জানা লোকেদের জন্য এমন ভুল শব্দের ব্যবহার নিতান্ত পীড়াদায়ক। অবশ্য ভাষার ক্ষেত্রে ‘বহুল প্রচলিত ভুল’ বলে একটা কথা আছে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জেনে শুনে বিষ পানের মত এর ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশে রাজনীতির চক্কর আর সত্য মিথ্যার জটিল মিশ্রণ রেজাকারকে বানিয়ে দেয় রহস্যময় এক পর্বত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পর্বতের রহস্যভেদ করে জাতিকে আলোর দিশা দিয়েছেন।

৪৯ তম বিজয় দিবসের সারপ্রাইজ হিসেবে রেজাকারের তালিকা প্রকাশ করে দেশবাসীকে নতুন আলো দেখিয়েছেন। আশা করি তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ও নির্ভেজাল তালিকাটি প্রকাশ করে জাতিকে সমৃদ্ধ করবেন। যে তালিকায় জাপা জামাত বিএনপি, এমনকি পরবর্তী যুগের আওয়ামী লীগের হাতও লাগেনি। যে তালিকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিজেই বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর দস্তখতের ভিত্তিতে তার সরকারের আমলে তৈরী করিয়ে ছিলেন।

পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৈরী শহীদদের তালিকাটিও আশা করি প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ করবেন। যেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মান্নান সাহেবের দ্বারা শহীদদের পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা দানের জন্য বঙ্গবন্ধু নিজেই তৈরী করান। তাঁর কন্যা হিসেবে এ তালিকাটি সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ আপনারই নেওয়া উচিৎ।

রেজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগের ৮০৬০ জন, বর্তমান বিএনপির (মূলত বাম,মুসলিম লীগ ও অন্য কিছু দলের লোকজন) ১০২৪ জন, পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা অন্য নাগরিক ৭/৮ শ মানুষ এবং জামাতের ৩৭ জনের নাম রয়েছে বলে গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। জানা নেই এ গোনা গুনতি কে কখন করলো। এখানে কমবেশি কিংবা সত্য মিথ্যার মিশ্রণ থাকতে পারে। তবে এক দেড় কোটি মানুষ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারত চলে গেলেও বাকি ৬ সাড়ে ৬ কোটি মানুষকে দেশেই থাকতে হয়েছিল, অতএব মনে যাই থাকুক তাদের নানা কৌশলে নয় মাস সময় পার করতে হয়েছে। তাই রেজাকারের তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কারো নাম থাকাও বিচিত্র নয়।

এতে আপনার কিছু আত্মীয়, কিছু মুক্তি সংগ্রামী, কিছু হিন্দু নারী-পুরুষের নামও এসেছে।( বিপদের সে দিনগুলোতে নানা কারণে শত শত হিন্দু নারী-পুরুষের রেজাকার হতে হয়েছে। সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধকোষ, ১২ খণ্ড, প্রায় সাড়ে ৮০০০ পৃষ্ঠা দ্র.) এতে যেহেতু কারো হাত পড়েনি বিশেষ করে তালিকাটি তথাকথিত গবেষকদের হাত হয়ে আসেনি তাই এ নিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে বলে জনগণ মনে করে না। কারণ পাকিস্তানীদের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। এ তালিকায় যে ভালো মানুষের মানহানীর চেষ্টা ছিল না সেটারই বা কী নিশ্চয়তা আছে। বিপদে পড়ে, বাঙালির প্রাণ বাঁচাতে, মুক্তি বাহিনীর হয়ে কিংবা গোয়েন্দাগিরির জন্যও তখন কেউ কেউ পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

যাদের নাম ওঠায় সবকিছু আবার নতুন করে সাজানোর চাপ আসছে, তাদের একটি ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়। নিজেরা বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত রচনা করার মতো নতুন করে পছন্দ মতো নাম বাদ দিয়ে আর ঢুকিয়ে রেজা কারের তালিকা তৈরী করতে হয় না। আর এ তালিকায় ঘষামাজা বা সংযোজন – বিয়োজন করা মানে বিষয়টিকে চিরতরে বিশ্বাস অযোগ্য বানিয়ে দেওয়া।

পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই। প্রায় ৫০ বছর রেজাকার বলতেই যারা ইসলামের প্রতীক পোশাক সংস্কৃতি ইত্যাদিকে সামনে নিয়ে আসতেন তারা কি এখন নিজেদের গালে কোনো কিছুর আঘাত টের পাচ্ছেন না।

যারা রাসুল সা. এর সুন্নতের বিরামহীন অবমাননা করে জাতিকে আঘাতের পর আঘাত দিয়ে গেছেন গত ৫০টি বছর, তারা মনে মনে কিছুটা হলেও লজ্জিত অনুভব করছেন না। এ তালিকাটি তো এসব লোকের জন্য ভয়ানক কোনো দুঃস্বপ্নের মতো। এ তো তাদের জন্য জ্বলজ্যান্ত এক অভিশাপ।

*সব সময় আমরা যা ধারণা করি, তাই হয় না। ছবিতে যেমন দেখতে পাচ্ছেন- এমনও হয়।