সুনামগঞ্জের শিশু তুহিন হত্যায় বাবাসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ৩১ ২০১৯, ০০:১০

বাবাসহসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বহুল আলোচিত শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।

তুহিনের চাচাতো ভাই সাহানুরের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় শিশু আদালতে তার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত চার্জশিট আমলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম জানান, তুহিনের চাচা নাসিরের ঘরে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ১৩ অক্টোবর রাত ২টার দিকে বাবা বাছির ঘুমন্ত তুহিনকে নিয়ে আসে। পরে অভিযুক্ত পাঁচজন তুহিনকে হত্যা করে। হত্যার পর কদমগাছে তুহিনের লাশ ঝোলানো হয়। সবশেষে তুহিনের পেটে নাসির ও বাছির চাকু ঢোকায়।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবা আবদুল বাছিরের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডের রাতে বাবার সঙ্গে একই খাটে শিশু তুহিন ঘুমিয়ে ছিল। বাবা ভিন্ন অন্য কেউ ঘরে ঢুকে তার পাশ থেকে তুহিনকে বাইরে নিয়ে যাওয়া অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার ছিল।

তুহিনের চাচা নাছির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে বাবা আবদুল বাছির জড়িত থাকার কথা বলেছেন।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে যা জানতে পেরেছি, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ জনমত পক্ষে নেয়া। প্রতিবেশীরা যাতে শিশুর লাশ দেখে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়, আক্রমণাত্মক হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, গ্রাম্য কোন্দল, মামলা-মোকদ্দমার জেরে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ারের লোকদের সঙ্গে পুরনো বিরোধ ছিল তুহিনের পরিবারের। ২০০২ সালে গ্রামে সংঘটিত মুজিব হত্যাকাণ্ডে তুহিনের বাবা বাছির অন্যতম আসামি। এ ঘটনার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলা হয়।

২০১৫ সালের দিকে তুহিনের বাবা বাছিরের বেয়াই জবর আলীর মেয়ে নিলুফাকে হত্যা করা হয়। নিলুফা হত্যার আসামি ছিলেন তুহিনের বাপ-চাচাদের প্রতিপক্ষ আনোয়ার মেম্বারের গোষ্ঠীর ১৫-১৬ জন। ওই মামলার সাক্ষী তুহিনের চাচা মোছাব্বির। বর্তমানে এই মামলা গ্রামের একজনের হস্তক্ষেপে জবর আলী ও আনোয়ার মেম্বারের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসা করার প্রক্রিয়া চলমান ছিল। তুহিনের বাবা বাছিরের বিরুদ্ধে মুজিব হত্যার মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির তারিখ ছিল ১৪ অক্টোবর।

তুহিনের বাবা আশঙ্কা করছিলেন এ মামলায় হয়তো তার সাজা হয়ে যাবে। প্রতিপক্ষের মামলা মীমাংসা ও নিজের মামলার শাস্তির আশঙ্কা থেকে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ৩ দিন আগে নিজ সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাছির। বাছির তার ভাই ও ভাতিজারা এ পরিকল্পনায় জড়িত ছিল।

পরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হত্যাকাণ্ডের রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বাড়ির পাশে নৃশংসভাবে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুই ছুরিতে প্রতিপক্ষ সালাতুন ও সোলেমানের নাম লিখে রাখে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সালাতুন ও সোলেমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

প্রেস ব্রিফিংকালে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মিজানুর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, হায়াতুন্নবী, দিরাই থানার ওসি নজরুল হোসেন প্রমুখ।