মদপানে মাদক কর্মকর্তার মৃত্যু!

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ১৩ ২০১৯, ১৫:০২

মদ পানেই মারা গেলেন খুলনার সেই মাদক কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস। বিজয়া দশমীর রাতে খুলনায় মদপানে যে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন।

প্রায় দু’বছর আগে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুই সন্দেহভাজনকে নিয়ে খুলনার বটিয়াঘাটা থানায় গিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (এসআই) মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস। তার সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা শাখার সেপাই মো. সেলিম ও সোর্স সুশীল।

থানায় তাদের আচরণে (মাতলামি) সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে তাদের আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের খবর দেয়া হয়। কর্মকর্তারা তাদের সহকর্মীদের মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলেও ওই সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মনোজিৎকে। পরবর্তীতে বিভাগীয় মামলায় ডিমোশন দিয়ে এসআই থেকে এএসআই করা হয় তাকে। গত আগস্টে তিনি যোগ দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে। বিজয়া দশমীতে সেই মাদক কর্মকর্তা মদ পানেই মারা গেলেন।

মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস (৫২) খুলনা মহানগরীর হাজী মহসিন রোডস্থ আর্জেন আলী বাইলেন এলাকার ধীরাজ বিশ্বাসের ছেলে। তাপস কুমার বিশ্বাস ও শ্রাবন্তি বিশ্বাস তিথি নামে তার দু’টি সন্তান রয়েছে। শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যরা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে সৎকার করেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান জানান, বিষাক্ত মদপানে মনোজিৎ নামে একজনের মৃত্যুর খবর পান তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে নিশ্চিত হন এই মনোজিৎ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে এএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। এর আগে গত বছর তিনি খুলনা কার্যালয়ে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। তার পুরো নাম মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস। কিন্ত তার কর্মস্থল বর্তমানে খুলনায় না হওয়ায় এ বিষয়ে তিনি খুব একটা হস্তক্ষেপ করেননি। মৃতদেহ পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছে- এ টুকুই।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) বিপ্লব মোদক জানান, এএসআই মনোজিৎ কুমার চলতি বছরের আগস্টের শেষের দিকে নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে যোগদান করেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ অক্টোবর তিনি ছুটিতে যান। পরে বিজয়া দশমীর রাতে তার স্ত্রী ফোনে জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুর খবর পান তিনি। কিন্তু মাদক সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত নন। তবে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা শুনেছেন বলে জানান।

বিপ্লব মোদক আরো বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা খুলনায় না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া স্ত্রী ও ছেলের সেলফোনেও শনিবার দিনভর চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে খুলনার বটিয়াঘাটা থানায় ঘটনার বিষয়ে ওই থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান, ১৫০ গ্রাম গাঁজাসহ দুজন আসামি নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে এসআই মনোজিৎ কুমার থানায় আসেন মামলা করতে। মামলা নেওয়ার সময় বাংলা মদের গন্ধ পান তিনি।

তিনি বলেন, ‘মদের গন্ধ পেয়ে আমি এসআই মনোজিৎকে বললাম, ধরছেন গাঁজা আর বাংলা মদের গন্ধ বের হচ্ছে। বাংলা মদ আবার খাইল কে? তখন এসআই মনোজিৎ “সরি স্যার, সরি স্যার” বলা শুরু করে। আমি বললাম, আপনি যদি (মদ) খেয়ে থাকেন, তবে আপনি এখানে আসছেন কেন? পরে বাইরে গিয়ে দেখলাম তাদের সঙ্গে আসা একজন সেপাই দাঁড়ানো। তার মুখ থেকেও মদের গন্ধ আসছে। এরপর দেখি আমার পুলিশের সঙ্গে একজন তর্কাতর্কি করছে, মাতলামি করছে। জানতে পারলাম, সে তাদের সোর্স সুশীল বিশ্বাস। পরে তিনজনকে বসিয়ে রেখে তাদের কর্তৃপক্ষকে জানাই।’

তিনি বলেন, পরে এসআই মনোজিৎ, সেপাই সেলিম ও তাদের সোর্স সুশীলকে হাসপাতালে নিয়ে ‘স্টমাক ওয়াশ’ করানো হয়। হাসপাতাল থেকে দেয়া সনদের ভিত্তিতে সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘গাঁজাসহ আসামিদের নিয়ে থানায় মামলা দিতে গিয়েছিলেন তারা। মাদক সেবন করে থানায় গিয়ে তারা অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। পরে আমাদের পরিদর্শক আহসান হাবিব মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় অ্যালকোহল জাতীয় কিছু পান করার সত্যতা পাওয়া যায়। আমরা চিকিৎসকের প্রতিবেদনসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে সুপারিশ প্রেরণ করি। পরবর্তীতে বিভাগীয় মামলায় ডিমোশন দিয়ে মনোজিৎ কুমারকে এসআই থেকে এএসআই করা হয়।’

সূত্র.রাইজিংবিডি