কবি ফারাযদাকের চাদর এবং একটি চুমু!

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ২২ ২০১৯, ২২:২১

ইলিয়াস মশহুদ

কবি ফারাযদাক। নামজাদা কবি। ফারাযদাক একবার এক মহিলার পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলো। মহিলাটি উচ্চ বংশীয়। ভাবসাবে তেমনই মনে হচ্ছে। দেখতে অপরূপা। যেনো রূপসী পরী। ডাগার ডাগর চোখ। মহিলাকে দেখেই কবির ভালো লেগে যায়। কাছে পাওয়ার মন চায়। কিন্তু পছন্দ হলেই কি আর হয়! বেচারী অন্যের স্ত্রী। তাই ভালো লাগলেও কিছু বলার এবং করার নেই।
কবি ফারাযদাকের কাঁধে তখন সুতির এক সুন্দর চাদর ঝুলানো ছিলো। চাদরটি ওই মহিলার পছন্দ হয়ে যায়। সে তার দাসীকে সম্বোধন করে বললো, ‘দ্যাখ! লোকটার গায়ে কী সুন্দর চাদর!’
ফারাযদাক দূর থেকে মহিলাটির এই কথা শুনতে পেরে দাসীর কাছে গিয়ে বললো, আমি চাদরটি তোমার মুনিবাকে দিতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে। সে জানতে চাইল- শর্ত কি? ফারাযদাক বললো, একটি মাত্র চুমু!
দাসী তার মুনিবাকে গিয়ে সব বললো। শর্ত শুনে মহিলাটি রাজি হয় না। একে তো সে অন্যের স্ত্রী। তার ওপর বংশীয় অভিজাত্য রয়েছে। কিন্তু মহিলা চাদরটির প্রেমে পড়ে যায়। দাসীও মুনিবাকে শর্ত মেনে চাদরটি নিয়ে আসার কথা বলে। সে তার মুনিবাকে আরও বুঝায়, এ আর তেমন কিছু হয়! সম্পূর্ণ অপরিচিত এক লোক। কেউ জানবে না, বুঝবেও না। একবার চুমু খেলেই কী আর হবে! সামান্য এই শর্তটি মেনে নিলেই তো আমরা সুন্দর চাদরটি পেয়ে যাচ্ছি!
চাদরের লোভ সামলাতে না পেরে শেষমেশ মহিলাটি কবির শর্তমতে চুমু খেতে রাজি হয়ে যায়।
এবার বাধসাধলো পরিবেশ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা। মানুষজন চলাচল করছে। এখানে তো আর এসব মানায় না। প্রকাশ্য চুমু বিনিময় করা যায় না। এখন তবে কী করা?
ফারাযদাক শর্ত বাস্তবায়নের জন্য মহিলার বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলো। মহিলাও রাজি। চুমু বিনিময়ের পর কবি ফারাযদাক চাদরটি মহিলাকে দিয়ে দিলো।
ফিরে আসার সময় ফারাযদাক মহিলার কাছে খাওয়ার জন্য পানি চায়। কবি মেহমানখানায় বসা। দাসী একটি কাঁচের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসে। ফারাযদাক পানি পান করে গ্লাসটি রাখতে গিয়ে আচমকা ভেঙ্গে যায়। কাঁচের গ্লাস, ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। ফারাযদাক ঘাবড়ে গিয়ে বসে থাকলো।
কিছু সময় পর মহিলার স্বামী বাড়িতে আসলে তিনি কবি ফারাযদাককে চিনে ফেললেন। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করে কবির কাছে গিয়ে বললেন- স্বাগতম! কেমন আছেন কবি ফারাযদাক!
কী মনে করে আমাদের এখানে? কোন সে কারণ। যার ওসিলায় আপনার চরণ আমাদের বাসায়?

ফারাযদাক বিনীতভাবে বললো, না- না, কোনো প্রয়োজন ছাড়াই এমনিতেই আসলাম। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হাঠাৎ পানির পিয়াস লাগায় আপনার বাড়িতে এসে পানি চাই। আমাকে একটি কাঁচের গ্লাসে করে পানি দেওয়া হয়েছিল। অসতর্কতায় হাত থেকে গ্লাসটি পড়ে ভেঙ্গে গেছে। এখন গ্লাস ভাঙ্গার ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাড়ির মহিলা আমার চাদরটি রেখে দিয়েছেন। চাদরটি আমার খুব প্রিয় ছিলো। তাই মন খারাপ করে বসে আছি।
বাড়ির মালিক কবির এ কথা শুনে ভেতরে গেলেন। স্ত্রীর ওপর ভীষণ রাগ হলো তার। কী! সামান্য একটা গ্লাস ভাঙ্গান কারণে কবি ফারাযদাকের সঙ্গে এমন ব্যবহার? চাদরটি এখনই ফিরিয়ে দাও!
চাদর ফিরিয়ে দেয়া হলো। কবি ফারাযদাক চাদর হাতে পেয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে ছুটর চললো।
এদিক মহিলা ও দাসী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
না পারছে, না পারছে আসল ঘটনা কাউকে বলতে…