লেখনী-বক্তৃতা ও কাজের মাধ্যমে সত্যের দিকে দাওয়াত 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ১০ ২০২০, ২১:৫৮

এম. এম আতিকুর রহমান

এক. লেখনী-বক্তৃতার মাধ্যমে দাওয়াত

লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে দাওয়াতের একটির সম্পর্ক যবানের সঙ্গে, আরেকটির সম্পর্ক কলমের সঙ্গে। সুতরাং দাওয়াতের কাজ যে প্রকারেই করা হোক না কেন, দা’ঈর ভাষা, সাহিত্যের মানে উত্তীর্ণ হওয়া জরুরি। প্রথমে তাঁর মাতৃভাষা ও তাঁর সমাজের পরিভাষা সম্পর্কে তাঁকে প্রাজ্ঞ হতে হবে; চাই তাঁর মাতৃভাষা যাই হোক না কেন। কারণ, সে যদি নিজের এলাকার মানুষকে মাতৃভাষায় সত্যের দীনের দাওয়াত দেয়, তাহলে তা বেশি কার্যকর হবে।

পক্ষান্তরে কোনো ভিন্নভাষী যদি ভিন্ন ভাষায় দাওয়াতের কাজ করে, তাহলে তা এতটা কার্যকর ও প্রভাবসম্পন্ন হবে না। যেমন ধরুন, আমি যদি ‘চাতরাল’ গিয়ে আমার ভাষায় ওয়াজ করি, তাহলে আস্থা ও মুহাব্বতের কারণে হয়তো-বা মানুষ আমার ওয়াজ শুনবে এবং আমার প্রতি তারা ভক্তি-শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করবে, কিন্তু তাতে ওই রকম প্রভাব পড়বে না, যা ওই ভাষাভাষী একজনের ওয়াজে হবে। তাই প্রত্যেক দা’ঈর কর্তব্য হলো, তার মাতৃভাষা ও সাহিত্যে পাণ্ডিত্য অর্জন করা।

দাওয়াতের আরেকটি প্রকার হলো লেখা। একজন দা’ঈর লেখা খুব পরিষ্কার ও সুন্দর হওয়া চাই এবং নিয়ম-নীতি অনুযায়ী হওয়া চাই। লেখার সাহিত্যমানও উচ্চাঙ্গের হওয়া চাই। দা’ঈর লেখা যদি অসুন্দর ও অশুদ্ধ হয়, তাহলে প্রথমেই পাঠক তাতে বিরক্ত হবে। সে ভাববে, যার লেখাই বিশুদ্ধ নয়, সে আবার আমাকে কী শেখাবে! তাই লেখা সুন্দর করাও দা’ঈর অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আজকাল সর্বসাধারণের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর কাজকে শক্তিশালী গণমাধ্যম দিয়ে সম্পাদন করা হয়। তাই দা’ঈর জন্য এ বিষয়টিও জানা থাকা জরুরি।

গণমাধ্যমও দুই ধরনের :

এক. টেক্সট বা লৈখিক মিডিয়া, তথা পত্র-পত্রিকা, ওয়েবসাইট ইত্যাদি।

দুই. অডিও-ভিডিও মিডিয়া, তথা রেডিও, টেলিভিশন, ইউটিউব ইত্যাদি

লৈখিক মিডিয়ায় দাওয়াতের কাজ করতে হলে লেখায় সাহিত্যমান থাকা জরুরি। অডিও-ভিডিও মিডিয়ায় কাজ করতে হলে যবানের ভাষা ও আলোচনা সাহিত্যমানে উত্তীর্ণ হওয়া জরুরি।

লৈখিক মিডিয়ার সম্পর্ক কলমের সঙ্গে, আর অডিও-ভিডিও মিডিয়ার সম্পর্ক যবানের সঙ্গে। এ জন্য উভয় ক্ষেত্রেই দা’ঈর পাণ্ডিত্য থাকা জরুরি।

দুই. কাজের মাধ্যমে দাওয়াত

দাওয়াতের দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো- নিজের জীবনে ইসলামী বিধিবিধান পালনের বাস্তব নমুনা পেশ করা। সত্য সুন্দর ও মজলুম মানুষের পক্ষে দাড়াতে নিজের আমল আখলাক, চাল চলন উন্নত হওয়া চাই। এটি দাওয়াতের সবচেয়ে কার্যকর ও গতিশীল মাধ্যম। এজন্য নিজের সংশোধন ও প্রস্তুতির নিমিত্তে প্রয়োজন তাজকিয়ায়ে নফসের উন্নয়ন।

আমার যে আমলের মাধ্যমে আমি অন্যের কাছে দাওয়াত পেশ করবো, তা দুরস্ত করার জন্য প্রয়োজন মুসলিহ ও মুরব্বী; প্রয়োজন এমন কিছু মানুষের সোহবত ও সাহচর্য, যাঁরা নিজেরা আত্মশুদ্ধি অর্জন করেছেন।

আল্লাহ্‌র নীতি এটাই যে, যেমনিভাবে শারীরিক রোগীর চিকিৎসা একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই করতে পারেন, ঠিক তেমনি আত্মার বাতেনী রোগ-ব্যাধির চিকিৎসাও একজন রূহানী ডাক্তার ছাড়া সম্ভব নয়।

চলবে…

মূল-মুফতি মুহাম্মাদ রফী উসমানী (সাম্প্রতিক বিবেচনায় কিছু পরিবর্তিত)