ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় আজ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০৯ ২০১৯, ০৪:৫৮

১৯৯২ সালে ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দুদের ভেঙ্গে দেওয়া ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় হতে যাচ্ছে আজ। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ মামলার রায় ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সেই মুহূর্ত

বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সেই মুহূর্ত

অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পর ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় কমবেশি দুই হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। মসজিদটির জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেয় কট্টরপন্থী হিন্দুরা। তাদের দাবি, বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল। একটি রামমন্দির ভেঙ্গে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। তবে মুসলিমরা বলছে, মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরির কোনও প্রমাণ নেই। তাদের দাবি, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বলপূর্বক ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাই সেখানে মসজিদটি পুনঃস্থাপনই যৌক্তিক।

শনিবারের রায়ে ওই জমির মালিকানার বিষয়ে রায় দেবেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবে। রায় ঘিরে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। আদালতের সিন্ধান্ত মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাশ্মির ইস্যুতে মোদির পাশে থাকা মুসলিম সংগঠন জমিয়াতে উলেমায়ে হিন্দ। রায় যাই হোক, সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জমিয়ত প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদানি।

প্রায় ১৫ হাজার উগ্রপন্থী মসজিদে প্রবেশ করে ভাঙচুরে অংশ নেয়

প্রায় ১৫ হাজার উগ্রপন্থী মসজিদে প্রবেশ করে ভাঙচুরে অংশ নেয়

মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় তারা মেনে নেবেন। তারপরও ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা শহরসহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে। রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে ৩৮টি জেলা সংবেদনশীল, সেখানে বাড়তি বাহিনী নামানো হয়েছে। টহল চলছে দিন রাত। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যারা উত্তেজনা ছড়াতে পারে, এমন ব্যক্তিদের ‘চিহ্নিত করে’ ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দুইটি হেলিকপ্টার তৈরি রাখা হচ্ছে। এর একটি থাকবে অযোধ্যায়। পুলিশের বন্দুক, গুলি, কাঁদানে গ্যাসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সরঞ্জামও পরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। বাবরি মসজিদ ছিল যে শহরে সেই অযোধ্যার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। মাসখানেক ধরেই সেখানে ১৪৪ জারি রয়েছে।

বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটি মুসলিমদের আর বাইরের চত্বরটি হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতর কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে যায়। মুসলিমরা এর প্রতিবাদ জানায় এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালাবদ্ধ করে দেয়। জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সে বছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। পরে ভারতের ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রাম জন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, জমিটি তিন ভাগ হবে। দুই ভাগ পাবে হিন্দুরা। আর এক ভাগ পাবে মুসলিমরা (সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড)। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে। টানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয় বেঞ্চ।

আগামী সপ্তাহেই অবসর নেবেন ভারতের বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তার আগেই যে তিনি এই ঐতিহাসিক এ মামলাটির নিষ্পত্তি করে যেতে চান। সে ঘোষণা তিনি আগেই দিয়েছিলেন। সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি, বা.ট্রিবিউন।