৫ ই মে’র রক্তের দাগ আজও শুকায়নি!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ০৫ ২০১৯, ১৪:২৬

 

হাবীব আনওয়ার

৫ ই মে, ২০১৩ ইংরেজী। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় রচিত হয়েছে। আকাশ কেঁদেছে,বাতাস কেঁদেছে। কেঁদেছে মানবতা। বিশ্বের মানচিত্রে এদেশের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে চরম ভাবে। ক্ষমতার মসনদে তখন আওয়ামীলীগ। স্বাধীনতা অপরাধীদের বিচার দাবিতে গুটি কয়েক নাস্তিক ইসলাম ধর্ম, আল্লাহ- নবী এমন কি উম্মাহাতুল মু’মিনিনদেরকে নিয়ে খুবই জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলো। দেশের ১৭ কোটি মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটলো। বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আন্দোলন -সংগ্রাম করলো। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢেকে দিল পুরা শাহবাগ চত্বর। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম একটি সড়কে গুটিকয়েক পেচাশের পৈশাচিক উল্লাস সকলের মনকে ভাবিয়ে তুললো। আবার যখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত যেমন, স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা, লাখো শহীদের রক্তে কেনা জাতীয় পতাকা উঠানো নামানোর মত আদেশও তারা দেওয়া শুরু করলো৷ তখন দেশের সচেতন ওলামায়ে কেরাম উদ্বিগ্ন হয়ে পরলেন। মানুষের ঈমান, আমল, জান -মাল সর্বপরি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান গুরু দায়িত্ব নিয়ে শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ আহমদ শফি হাফিজাহুল্লাহুর নির্দেশে সারাদেশে গণ আন্দোলন গড়ে তুললেন। সেই সাথে ঘোষণা করলেন ১৩ দফা কর্মসূচি। ৬ এপ্রিল স্মরণকালের সর্ববৃহৎ লংমার্চ করে তাক লাগিয়ে দিলেন পুরো বিশ্বকে। সরকারের প্রতি মহানুভবতা দেখালেন উদার চিত্তে। দেশ ও দেশেও মানুষের অধিকার আদায় কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। দাবি আদায় না হলে ৫ মে পূণরায় আসার কথা জানালেন।

বিভিন্ন জায়গায় শানে রেসালত সম্মেলন করে গণসচেতনতা তৈরী করলেন।

২. ৫ ই মে সারা দেশের মানুষ আবার নবউদ্যমে ঈমানের তপ্ত বারুত সঞ্চয় করে ছুটে এলেন অচেনা অজানা শহর ঢাকায়। সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে শান্তিপূর্ণ অবস্থান শেষে ক্লান্তময় দেহটাকে একটু অবসান দিতে জড়ো হলেন, শাপলার শহীদি চত্বরে। কথাছিল আল্লামা শফী দা. বা. দুআর মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু দিনভর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী, বেপরোয়া প্রশাসন, নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির ভয়ালো তান্ডবে বেশ ক’জন নবী প্রেমিক শহীদ হলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে নেতৃবৃন্দের কাছে খবর আসতে থাকে যে, বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসীরা ওঁৎ পেতে আছে হেফাজত কর্মীদের উপর হামলার প্রস্তুতি নিয়ে। চিন্তিত নেতৃবৃন্দ নিরস্ত্র কর্মীদের নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দিয়ে রাতটুকু শাপলায় যাপনের সিদ্ধান্ত নেন।

লক্ষ লক্ষ নবী প্রেমিক সারাদিনের ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ নিয়ে পিচ ঢালা পথেই একটু বিশ্রামের জন্য গা এলিয়ে দিয়েছে। আবার অনেকেই সিজদায় পরে আল্লাহর দিদারে ধন্য হচ্ছেন।

৩. ঘড়ির কাটা ২ টা ছুঁইছুঁই । কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহুর্মুহু গুলি আর গ্রেনেডের বিকট শব্দে সব কিছু তছনছ করে দিয়েছে। ফিল্ম স্টাইলে সন্ত্রাসী কায়দায় মুহূর্তে শতশত নবী প্রেমিককে শহীদ করে দেওয়া হয়। আহত করা হয় কয়েকলাখ নিরীহ মুসুল্লিদের। গ্রেফতার করা হয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরামকে। গুম করা নাম না জানা অনেককে! সন্তান হারা মা, পিতা হারা এতিম, স্বামী হারা বধু আর স্বজন হারা প্রিয়জনের আত্মাচিৎকারে আকাশ বাতাস কেঁদে উঠলেও কাঁদেনি পাষাণ্ড জালিমের দিল।
হে আল্লাহ! তুমি সকল শহীদদের শাহাদাতকে কবুল কর। আহতদের সুস্থ কর।এবং জালিমদের উপযুক্ত স্থানে দাও।

হেফাজত আজও আছে সমহিময়। যখনি কোন বাতিল শক্তি মাথা তোলার চেষ্টা করে তখনি হেফাজত গর্জে উঠে। বিপরীত যারা হেফাজতকে নিশ্চিহ্ন করার স্বপ্ন বুনেছিল তারা আজ ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এমনকি নিজ রাজনৈতিক দলের নেতারাও স্মরণ করে ঘৃণা ভরে।তাদের পরিচয় সবার কাছেই স্পষ্ট। কিন্তু হেফাজত আজ বাংলা সীনান্ত ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। পৃথিবীর কোণায় কোণায় হেফাজতের নাম শোনা যায়। হেফাজত আছে থাকবে, বিরুদ্ধবাদীরা নিক্ষেপ হবে ইতিহাসের ঘৃণিত স্থানে।