৫০ লাখ করোনার টিকা আসছে আজ: জেলায় জেলায় পৌঁছাবে বেক্সিমকো

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২৫ ২০২১, ১০:১৯

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৫০ লাখ করোনার টিকা আজ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। বিমানবন্দর থেকে এই টিকা বেক্সিমকোর টঙ্গীর গুদামে নেওয়া হবে। সারা দেশে পাঠানোর আগে এই টিকা সরকারি ওষুধ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র নেওয়া হবে।

চার দিন আগে ভারতের উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর সেরাম থেকে ছয় মাসে তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি আছে। অন্য দিকে কোভ্যাক্স থেকে দেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে আরও টিকা কেনার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রতি মাসে ৫০ লাখের বেশি টিকা এলে তা রাখার মতো জায়গা তাদের নেই। বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে টিকা এলে বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আজ সোমবার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ লাখ টিকা ঢাকায় আসবে। এর আগে ২১ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা এসেছে। এই ৭০ লাখ টিকা রাখা ও বিতরণের সব প্রস্তুতি সরকার নিয়ে রেখেছে।

টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়ার জন্য তালিকা তৈরি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আসছে ৫০ লাখ টিকা
সরকার, সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এই টিকা কেনা হচ্ছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে সেরাম। দেশে এই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো। বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই টিকা উড়োজাহাজে করে ঢাকায় পৌঁছাবে। বিমানবন্দরে বেক্সিমকোর গাড়ি থাকবে। বিমানন্দর থেকে টিকা নেওয়া হবে বেক্সিমকোর টঙ্গীর নতুন সংরক্ষণাগারে। এরপর সরকারের চাহিদা অনুযায়ী এই টিকা ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেক্সিমকোর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিটি ব্যাচের টিকা সরকারের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো হবে। এই টিকা ভারতের পুনে থেকে আসবে দিল্লি বিমানবন্দরে, সেখান থেকে ঢাকায়, ঢাকা থেকে যাবে টঙ্গী। এই সময়ে তাপমাত্রার কোনো হেরফের হয় কি না, হেরফের হলে তার প্রভাব টিকার ওপর পড়বে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য টিকা পরীক্ষা করোনা হবে।

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, সরকারকে তিন কোটি টিকা সরবরাহের বাইরে বেক্সিমকো আরও ১০ লাখ টিকা আনবে। এই টিকা মূলত ওষুধশিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের দেওয়ার জন্য আনা হচ্ছে। তবে এই টিকা খোলা বাজারে বিক্রি করা হবে না।

সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তা
বেশি টিকা এলে তা কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এক মাস বিরতিতে যদি ৫০ লাখ করে টিকা আসে, তা হলে সেই টিকা সংরক্ষণের জন্য জায়গা আছে। অতিরিক্ত জায়গার দরকার হবে না। সমস্যা হবে যদি বেশি টিকা আসে।

বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে দেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা দেওয়ার কথা। সেই টিকা কবে আসবে, তা নিশ্চিত কেউ বলতে পারছে না। তবে কোভ্যাক্স বলেছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে তারা কিছু টিকা পাঠাবে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা এলে তা সংরক্ষণের জন্য ৬৭ দশমিক ১৪ ঘনমিটার কোল্ড স্পেস বা সমপরিমাণ ফ্রিজার স্পেসের প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে জেলার জন্য অতিরিক্ত ১৭৯টি আইএলআর (আইস লাইনার রেফ্রিজারেটর) এবং ৩১২টি ডিপ ফ্রিজ কিনতে হবে। আর উপজেলার জন্য ২৯৪টি আইএলআর ও ২৯৪টি ডিপ ফ্রিজ কিনতে হবে।

এদিকে সরকার কোভ্যাক্সের কাছে থেকে আট লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করলে তা নষ্ট হবে। স্থায়ী কমিটিকে দেওয়া প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের টিকা দেশে এলে তা কার্টন থেকে বের করে ৩ থেকে ৫ দিন মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। অতি দ্রুত তা মানুষকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবহনের কথা বিবেচনায় রেখে এই টিকা সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া যুক্তিসংগত হবে।