হৃদয়ে কান্নার ঢেউ! জান্নাতে সুখে থাকুন শায়েখ!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২১ ২০২০, ০২:০৯

কে আই ফেরদৌস

শায়খ, সেই নাস্তিকবিরোধী আন্দোলনের অনেক আগ থেকেই আপনি ছিলেন আমাদের মতো লাখো ছাত্র, শাগরেদ, ভক্তদের শ্রদ্ধা ও আস্থার কেন্দ্রবিন্দু।

কসম রবের, আপনার প্রতি আমাদের কখনোই বিন্দুমাত্র অনাস্থা, অশ্রদ্ধা ছিলো না। আজও নেই। আজীবন শ্রদ্ধাভরে আপনি আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন। কিন্তু কষ্ট হয়েছিলো এটা ভেবে, আপনার বার্ধক্যের সুযোগে আপনার কলিজার টুকরা ছেলে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর ফাঁদে পড়ে আপনার অজ্ঞাতে সর্বজন স্বীকৃত আপনার সুউচ্চ অবস্থানকে করেছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। ওদের লালসা বাস্তবায়নের প্রধান মাধ্যম হিসেবে আপনার বার্ধক্যকেকে ওরা কাজে লাগিয়েছে বারবার। আমরা ভালো করেই জানতাম, আপনি এসব নোংরা খেলা থেকে অনেক অনেক দূরে।

কিন্তু হায়, আপনার ধারে কাছে যে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া আপনার কোন সত্যিকার হিতাকাঙ্ক্ষী, ছাত্র, ভক্তকেই আপনার পাশে যেতে দেয়া হতো না! এই যে সব সময় ওদের বৃত্তেই আপনাকে বন্দী করে রাখতো সেটাও আপনি বুঝতে পারেন নি কোনদিন। পারবেনই বা কীভাবে, কলিজার টুকরা সন্তান কি বাবাকে নিয়ে এমন স্বার্থবাদী খেলা খেলতে পারে? সম্ভব? শায়খ, এ যুগে সবই সম্ভব। স্বার্থের কারণে আপন মা-বাবাকে জঙ্গলে ফেলে আসার নজির‌ও আছে এ দেশেই।

শায়খ, মনে আছে সেই বিতর্কিত শোকরানা মাহফিলের কথা? যেই মাহফিলের ব্যাপারে দেশের অগণিত আলেম উলামা অসম্মতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আপনাকে উলামাদের আবেদন সম্পর্কে জানানো হয়নি। আপনার কলিজার টুকরা সন্তান আপনাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসেন শোকরানা মাহফিলে।

সেই শোকরানা মাহফিলে ঘটে গেলো আপনার জীবনের প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা! আপনি মঞ্চে রুমাল মাথায় দিয়ে নিশ্চুপ বসেছিলেন প্রধান আসনে। দেশের প্রধানমন্ত্রী আসলেন, উপস্থিত হাজার হাজার জনতার চোখ প্রধানমন্ত্রীর দিকে। কিন্তু আপনার চোখ নত। কারো দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ঠিক তখনি ঘটে গেলো সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা!

এক অতি উৎসাহী চামচা আপনাকে ধ্যান থেকে জাগিয়ে দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোলাকাত করার জন্য। আপনিও হতচকিত হয়ে মাথা তুললেন, তখনি প্রধানমন্ত্রী হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে আপনার হাতের কাছে নিয়ে গেলেন। আপনি কিছু বুঝে উঠার আগেই, আপনি এক নারীর সাথে হ্যান্ডশেক করে ফেললেন আপনার মনের অজান্তেই!

আমরা জানি আপনার বয়স এমন পর্যায়ের বার্ধক্যে পৌঁছে ছিলো যে, তখন নারী পুরুষের পর্দা সম্পর্কিত মাসআলা আপনার ক্ষেত্রে শরিয়া অনুযায়ী রহিত হয়ে গিয়েছিলো। তারপরও সেই হ্যান্ডশেক নিয়ে শাহিবাগী নাস্তিকরা, রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা এক হয়ে আপনার বিরুদ্ধে কতো অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেছে। আপনাকে নিয়ে ওদের প্রত্যেকটা অশ্লীল ভাষা আমাদের হৃদয়ে চাকুর আঘাতের মতো জর্জরিত করতো। কতো মানুষের সাথে যে সেটা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছি, একমাত্র আল্লাহ জানেন।
শুধু আমি নই, দেশ বিদেশের লাখো ভক্ত ছাত্ররা আপনার হয়ে লড়েছে সেই জ্ঞানপাপী সমালোচকদের বিরুদ্ধে! আজ পর্যন্ত লড়ে যাচ্ছে আপনার জন্য।

শায়খ, দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই শোকরানা মাহফিলের চামচা ব্যাক্তি আজও আপনার লাশের পাশে আপনার সন্তানকে মিডিয়ার সামনে কী বলতে হবে, শিখিয়ে দিচ্ছে। লাখ লাখ শোকাহত দর্শক অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখেছে কেবল। মিডিয়া ব্রিফেও দেখলাম আপনার কলিজার টুকরা সন্তানকে মিসগাইডকারীরা আজও ঘিরে আছে শায়খ! যেমন ঘিরে রেখেছিলো আপনার জীবদ্দশায়। আহ! আমাদের কিছুই করার নেই শুধু আফসোস ছাড়া!

জীবনের অন্তিম সময়ে, ঠিক একদিন আগে আপনি সেই স্বার্থবাদীদের জাল ছিন্ন করে একদম নিজের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটিয়ে গেলেন। অভিযুক্ত নিজের সন্তানকে মাদরাসা থেকে বহিস্কার করলেন। নিজের শারীরিক দূর্বলতার কথা চিন্তা করে সকল দায়িত্ব স্বেচ্ছায় শূরা কমিটির হাতে অর্পণ করে গেলেন। হাটহাজারী মাদরাসা অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলো আপনার সেই ঐতিহাসিক সিদ্বান্তের ফলে। নিজেকে সেই প্রথম সময়ের উচ্চতায় নিয়েই শেষ বিদায় নিলেন।

আল্লাহর ওলিকে আল্লাহ দুনিয়াতে সমালোচনার পাত্র রেখে নিতে চাননি। এটাই আল্লাহর ইচ্ছা ছিলো। লাখো লাখো ভক্ত মুমিনের কামনা ছিলো। মহান আল্লাহ তার পবিত্র বন্ধুকে পবিত্র দায়িত্ব পালন করিয়েই নিজের কাছে টেনেছেন।

এখন আপনি সকল সমালোচনার উর্ধে। এখনো যারা আপনার নামকে নিয়ে রাজনীতি করতে চায়, করুক। ওদের শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে। না হয়, আখেরাতে অবশ্যই। সেদিন আপনি আশ্চর্য হবেন, আপনার কাছের মানুষরাই…

তবে আপনার এমন বিদায় একজন নাদান ছাত্র হিসেবে, ভক্ত হিসেবে কখনো চাইনি। হাজার হাজার মাইল দূরে, ইংল্যান্ডের এক প্রান্ত থেকে আজ সারা দিন, সারা রাত কেবল কান্নার ঢেউ ভেঙেছে হৃদয়ে।
হাজার মাইল দূরে থেকে ছটফট করছে মন। জানাযায় শরীক হতে পারবো না…

জান্নাতে সুখে থাকুন শায়খ!