হাসানাতুল আবরার, ছায়্যিয়াতুল লিল মুকাররাবিন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৫ ২০২০, ২৩:৫৩

শিরোনামের আরবী বাক্যটির বাংলা ভাবার্থ হল, “দূরের লোকের ভালটিও কাছের লোকের মন্দের সমান” আরো সহজ করে বললে, “আমজনতা বা সাধারণ লোকের জন্য যা করা তেমন সমস্যার নয়, বিশেষ বা খাস লোকের জন্য তাও অপরাধের অন্তর্ভুক্ত”। তাইতো আপনজ বা প্রিয় মানুষের সামান্য আঘাতে বেশি কষ্ট লাগে। প্রক্ষান্তরে দূরের মানুষ বা অপ্রিয় জনের বড় আঘাতের হৃদয়ে তেমন দাগ কাটেনা।

দুই.

পাঞ্জাবি, টুপি তথা সুন্নতি পোষাক পরিধান করা সুন্নত। পরলে সাওয়াব পাওয়া যায়, আল্লাহর পক্ষ্য থেকে রহমত আসে। না পরলে অর্থাৎ অন্য কোন পোশাক পরলে কোন অপরাধ হয়না। তবে এই বোনাস হিশেবে সাওয়াব বা রহমত পাওয়া যাবেনা। ইসলাম সুন্নতি পোষাক ছাড়া অন্যান্য পোশাক পরিধানের অনুমতি দেয়। তবে সুন্নতি পোষাক পরিধানের জন্য উৎসাহিত করে।

তিন.

দাড়ি রাখা সুন্নত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা তথা আবশ্যকীয় সুন্নত। দাড়ি রাখা সুন্নত হলেও সর্ব সম্মতিক্রমে নিজ হাতের একমুষ্টির ভেতর দাড়ি কাটা হারাম। দাড়ি শুধু আমাদের বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত নয়, বরং দাড়ি এক লক্ষ মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রাসুলের সুন্নত। তাই দাড়ি না রাখা বা একমুষ্টির খাটো রাখা মানে সমস্ত নবী রাসুলের সুন্নতের বিপরিত কাজ করা।

চার.

সুন্নতি পোষাক পরিধান সাধারণ মানুষের জন্য সুন্নত হলেও ইসলামি লাইনে যারা গ্রহণযোগ্য, অনুসরণীর, উল্লেখযোগ্য, তাদের জন্য সুন্নতি পোষাক পরিধান আবশ্যকীয়। যেমন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামি নেতা, চিন্তাবিদ, বক্তা, আলোচক, দায়ী, লেখক, গবেষক। কারণ এরা জনসাধারণ থেকে একধাপ উপরে, মর্যাদার আসনে আসীন। যদি এরা সুন্নতি পোষাককে অবজ্ঞা করে, তাহলে তাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ ও মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমজনতার সাথে তাদের কোন পার্থক্য থাকেনা।

পাঁচ.

নিজের হাতের একমুষ্টিত ভেতরে দাড়ি কাটা বা ক্লীনসেইভ করা সাধারণ মানুষের জন্য যে মাত্রার অপরাধ, ইসলামি লাইনে উল্লেখযোগ্যদের জন্য তার থেকে অনেক বড় মাত্রার অপরাধ। কারণ তাদের চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-বুদ্ধি, মান-মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা জনসাধারণের চেয়ে বেশি। যা নিম্নস্তরের লোকের হালকা অপরাধ, উচ্চস্তরের লোকের তা মারাত্মক অপরাধ।

ছয়.

তাই ইসলামি লাইনে যারা উল্লেখযোগ্য, তাদের জন্য সুন্নতি পোষাক, সুন্নতি দাড়ি, সুন্নতি আচরণ আবশ্যকীয়। অন্যতায় কেউ যদি প্রশ্ন করে, “তুমি তুমার নিজের বডিতে সুন্নত তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারছনা! তুমি কোন মুখে অন্যকে ইসলামের কথা বল! ইসলামের দিকে ডাক! ইসলাম নিয়ে লিখ! গবেষণা কর! সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখ! ইসলামের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য কর! আগে তুমার সাড়ে তিনহাত বডিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কর।” প্রশ্নটিকে কি অবান্তর বলা যাবে?

সাত.

সম্প্রতি কিছু আলেম, বক্তা, ইসলামি লেখককে অনলাইনে ও অফলাইনে বেসুন্নতি পোষাকে দেখা যায়। নিজেকে আধুনিক, প্রগতিশীল, মুক্তমনা হিশেবে জাহির করতে তাদের মাথা থেকে টুপি সরে গেছে। কারো গা থেকে পাঞ্জাবিও গায়েব। কারো দাড়ি খাটো হয়েগেছে। আচ্ছা! পাঞ্জাবি, টুপি, দাড়ি তথা সুন্নতি পোষাক কি আধুনিকতা বা প্রগতির অন্তঃরায়? মাথা থেকে টুপি সরালে কি খুবই স্মার্ট দেখায়? ১৫/১৬ বছর মাদরাসায় পড়ে, কুরআন-হাদীসের কাছাকাছি থেকে যদি নবীর সুন্নত ভাল লাগেনা, তাহলে ইসলামি শিক্ষার সার্থকতা কি? মাথা থেকে ইসলাম সরিয়ে নিজেকে ইসলামি চিন্তাবিদ জাহের করা কি যৌক্তিক?

আট.

তাই শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় ভাইয়েরা! যাদেরকে আল্লাহ ইসলামের বিশেষ নেয়ামত দিয়েছেন। আলিম, ইসলামি নেতা, বক্তা, লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ হিশেবে কবুল করে মর্যাদাশীল করেছেন। দয়া করে নিজেকে পুরোপুরি সুন্নতি সাজে সাজিয়ে তুলুন। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে নিজেকে বলিয়ান করুন। আপনারা জানেন! আমি আবার স্মরণ করে দিচ্ছি, “বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত থেকে সুন্দর, ভদ্র, শালীন পোশাক পৃথিবীতে ছিলনা, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও হবেনা। সর্বকালের সর্বাধুনিক পোশাক হল সুন্নতি পোষাক।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে সুন্নতের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দাও। আমীন।