হবিগঞ্জে বেড়েই চলছে সর্দি-জ্বরের প্রভাব; আতঙ্ক জনমনে 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১৮ ২০২০, ১৫:১৪

নিজস্ব প্রতিনিধি: পরিবর্তন হচ্ছে দেশের আবহাওয়া। গরম বিদায় নিয়ে লাগছে শীতের আভা। দিনে লাগছে গরম রাতে অনুভূত হচ্ছে ঠাণ্ডা। মাত্র এই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওঠানামা করে ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস! তাপমাত্রার এই আচমকা তারতম্যের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না শরীর। তাতেই গড়বড় করছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি। সেই ফাঁকে হামলা চালাচ্ছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া। শ্বাসনালীর সংক্রমণে কাবু হচ্ছে মানুষ। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ঘরে ঘরে মানুষ সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে দেখা দিয়েছে আতংক। তবে বিশেষজ্ঞরা আতংকিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের গরম বেশি সময় ধরে থাকলেও তার একটা ধারাবাহিকতা ছিল। তাই শরীরও ছিল খোশমেজাজে। কিন্তু দিন চারেক হল গরমের বিদায় নিতে শুরু করে শীতের সংমিশ্রণ দেখা দিয়েছে। বিদায়বেলা সকাল-সন্ধ্যায় গরম লাগলেও বেলা বাড়তেই অনুভূত হচ্ছে ঠাণ্ডা। দুপুর-বিকাল ও সন্ধ্যা-রাতের মধ্যে সময়ের যা ব্যবধান, তার তুলনায় বেশি ফারাক তাপমাত্রায়। বিকাল চারটের ২৬-২৭ ডিগ্রিই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা-আটটায় নেমে আসছে ২১ ডিগ্রিতে। রাতে আরও কমছে।

এদিকে বায়ুদূষণ আজকাল যেহেতু এমনিতেই শরীরকে কাবু করে রেখেছে, তাই সামান্য হামলাতেই ভেঙে পড়ছে রোগ প্রতিরোধের দেয়াল।

আক্রান্তদের একজন বলেন, বলেন, গত ৩ দিন ধরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে বাসায় অবস্থান করছি। জ্বর আজ বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। অনেকেই বলছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সাধারণ জ্বর-সর্দি হয়েছে। কারণ প্রতি বছর এই সময়টাতে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জ্বর-সর্দি হয়। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমার ছেলের জ্বর-সর্দি কমেছে। এখন আমার জ্বর বেশি হওয়াতে পরিবারের চাপে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

এদিকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এসি-ফ্রিজ-গিজারের মতো শরীরেও থাকে থার্মোস্ট্যাট। সবসময়ে তা শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ধরে রাখতে চায়। মুশকিল হলো, আচমকা বাইরের তাপমাত্রার বাড়াবাড়ি বদল হলে শরীরের থার্মোস্ট্যাট যথাযথ কাজ করে না। তখনই ইমিউনিটি তার কর্তব্যে গাফিলতি করে ফেলে। হয় অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে (তখন অ্যালার্জির শিকার হয় শরীর) অথবা সক্রিয়তা কমে যায় (তখন জীবাণু সংক্রমণের শিকার হয় শরীর)। বর্তমান সময়ে দ্বিতীয়টিই বেশি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এই সময়টিতে জ্বর হবে এটা স্বাভাবিক। জ্বর হলে ভয়ের কিছু নেই। হাসপাতালের আউটডোরে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রধান করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দেশে একদিকে করোনাভাইরাস সংক্রামণে অনেকই আক্রান্ত হচ্ছে। আবার সিজনাল জ্বর-সর্দিতে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে। তবে যে কোন রোগকে হালকা মনে না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যদি জ্বর-সর্দি না কমে তাহলে করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করানো উচিৎ।

হিমাংশু লাল রায় বলেন, হঠাৎ অত্যধিক গরম ও মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি। এ গরম-ঠাণ্ডা করণে অনেকের জ্বর হচ্ছে। যার কারণে মানুষ না বুঝে আতঙ্কে আছে। যেহেতু এখন করোনার সময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার কথা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকরে পরামর্শক্রমে ঔষধ সেবন করলে জ্বর শেষ হয়ে যাবে। এই জ্বর ৩ থেকে ৪ দিনের ভিতরে শেষ হয়ে যায়। তবে বর্তমানে কোনো জ্বরকেই হালকা ভাবে নেওয়া উচিৎ নয় এবং জ্বর হলে ঘর থেকে বের না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন বলেন, দেশের আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ইদানীং সর্দি- জ্বর বাড়ছে। তবে করোনাভাইরাসের ভয় কাজ করছে অনেকের মাঝে। করোনাভাইরাস সংক্রামণ হয়েছে মনে করে অনেকেই করোনা টেস্ট করাচ্ছেন। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা যায় করোনা নেগেটিভ। স্বাভাবিক জ্বর-সর্দি হয়েছে।