স্বপ্নই ছিল ডাক্তার হবো -ডা. ইশরাত রফিক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ২৫ ২০১৯, ১৭:৩২

 

ডা. ইশরাত রফিক একজন স্বপ্নবাজ তরুণী। তবে তার স্বপ্ন পূরণের পথটা মোটেও সহজ ছিল না। বাবা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী। মেধাবী বাবার দিকনির্দেশনাই পড়াশোনা চালিয়ে যায় ইশরাত।

ইশরাত বলেন, ছোট বেলায় একটু শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছিলাম, তবে ডানপিটে ছিলাম। যখন যা ইচ্ছে করে বেড়াতাম। অন্য আট দশজনের মতো বাবা মায়ের কোনো চাপ ছিল না ডাক্তারি পড়া নিয়ে। আমিই স্বপ্ন দেখতাম ডাক্তারি পড়বো, বড় ডাক্তার হবো। মানুষের সেবা করবো।

ইশরাত ডাক্তারি পড়াশোনার পাশাপাশি গান, কবিতা, খেলাধুলার প্রতি ঝোক ছিল চোখে পড়ার মতো। এক কথায় মাল্টিট্যালেন্ট। মেধাবী এ মেয়ে ছোট বেলা থেকেই সাংস্কৃতিক চর্চার শুরু করেন। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে সংগীতে সাধারণ ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি শিল্পকলা একাডেমিতে ও নজরুল একাডেমিতে বিশেষভাবে উচ্চাঙ্গ সংগীত চর্চা করেন। গান করে পেয়েছেন স্বর্ণপদকও।

শুধু কি তাই! চিকিত্সা বিজ্ঞানী ও গবেষক ড. ইশরাত রফিক লেখাপড়ায় গোল্ডেন মার্ক পেয়েছেন। সরকারি মেডিক্যালে পড়েনি, পড়েছেন ময়মনসিংহের বেসরকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজে। একসময় তার আক্ষেপ ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়তে পারা নিয়ে, কিন্তু এখন আর সেটা নেই। তবে ইশরাত স্বপ্ন পূরণে ছিল অটল। তাই কোনো বাধাকে বাধা হতে দেননি বরং তিনি স্বপ্ন পূরণে বাধাকে পুঁজি করে এগিয়েছেন। তিনি যখন প্রাইভেট মেডিক্যালে ভর্তি হন এরপর থেকে তিনি পড়াশুনাকে ও স্বপ্ন পূরণকে দায়িত্ববোধে পরিণত করেন।

ইশরাত বলেন, শিক্ষকদের উপদেশ ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে নিজেকে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ থেকে।

তিনি চিকিত্সা বিজ্ঞান নিয়ে করেছেন গবেষণা। কাজ করছেন ক্যান্সার ফেটিগ নিয়ে। তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় এিশ হাজার রোগী আছে। ইশরাত নিয়মিত মহাখালী ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে গিয়ে এর প্রতেকটি রোগীকে দেখেন, কথা বলেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের সময় দেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশে ক্যান্সার ফেটিগ নিয়ে কাজ শুরু করেন। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত নোবেল বিজয়ীদের সম্মেলনে মিথসক্রিয়ার একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে বিশ্বের প্রায় ৬০০ জন তরুণ গবেষক, এরমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে অংশ নেয় এ তরুণ চিকিত্সক ও গবেষক ড. ইশরাত রফিক। চিকিত্সা বিজ্ঞান নিয়ে তিনি ৬৫টি গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন। বিশ্বের বিখ্যাত বেশ কিছু জার্নালে তার লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিন অ্যান্ডারসিয়া হাইফারবিক মেডিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন এবং তার লেখা গবেষণা প্রবন্ধপত্রটি পাঁচ হাজার পত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান লাভ করেন। ড. ইশরাত রফিক মেডিসিন ডাক্তার (এম.ডি), অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন ডাক্তার, এছাড়াও তিনি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) হাইপারবারিক মেডিসিন (আমেরিকান বোর্ড অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিন) এবং অ্যান্ডারসিয়া ও হাইপারবারিক মেডিক্যাল সোসাইটির (ইউএসএ)।

ড. ইশরাত রফিক শিক্ষাগত জীবনে অনেক পুরস্কার অর্জন করেন দেশ ও বিদেশ থেকে, তার কাজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণা প্রশংসনীয় হয় দেশ-বিদেশে। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিএমডিসি, এএমএসএ, এসিএইচএম সদস্যপদ অর্জন করেন।