সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আজ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ০৪ ২০২১, ০৫:৫০

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনি এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। উপজেলা সদরের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নির্বাচনি এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি ও চৌকি বসিয়েছেন। আধা সামরিক বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যরা সশস্ত্র টহল দিচ্ছেন। নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেলে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ভোটগ্রহণকালে প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।

সুষ্ঠু ভোটের শঙ্কা ও সব সংশয় মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনে জয়লাভের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে শুরু থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের নেতৃত্বে শক্তিশালী টিম পুরো নির্বাচন মনিটরিং করছে।

জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে তারা দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন দেখভাল করতে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্যও সিলেটে এসেছেন।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় একটি টিম নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে সিলেটে অবস্থান করছে।

জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেছেন, এ নির্বাচন সরকারের জন্য চ্যলেঞ্জের। সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করে সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ আগে সুষ্ঠু ভোট না হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে অনেক দলের অনীহা রয়েছে।

এমনকি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। ফলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সব সরবরাহ করে। সব করণীয়ও ঠিক করে কমিশন।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব যা বলেছেন তা ঠিক নয়। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনরায় নৌকার পক্ষে যাবে। নৌকার পক্ষে জনগণ রায় দেওয়ায় মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। সুতরাং নৌকা মার্কার কোনো বিকল্প নেই।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই ফলাফল নৌকার পক্ষে আসবে।

শুক্রবার বিকালে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) নির্বাচনি সব সরঞ্জাম প্রতিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তিন উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন।

শুক্রবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, কার ও জিপ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী, তাদের নির্বাচনি এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম শিথিল থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও গণমাধ্যমের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের জানান, নির্বাচনকালে অনিয়ম রোধে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভোট কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকবেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবেন। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র‌্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে। ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। রিটার্নিং অফিসার কিংবা প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদামতো কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে এবং ভোট গণনার সময় তারা দায়িত্ব পালন করবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এম কাজি এমদাদুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে ইভিএমের সরঞ্জামি পৌঁছে গেছে। কিছু কিছু কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র‌্যাব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ শুরু করেছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। চলতি বছরের ১১ মার্চ তিনি মারা যান। এ আসনের উপনির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র ও সাবেক বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি) ও কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব)। এ আসনে ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ১৪৯টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে।

ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বহিষ্কার : ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল কায়েছকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। শুক্রবার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. মজির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আতিকের বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ : সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের আগমুহূর্তেও পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের অভিযোগ থামছে না। এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে ভোটারদের মধ্যে অবৈধভাবে টাকা বিতরণের অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।

এ ব্যাপারে শুক্রবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। হাবিবের পক্ষে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ফারুক আহমদ এ অভিযোগ করেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আতিকুর রহমান আতিক। তার দাবি-পরাজয় আঁচ করতে পেরে এমনটি করছেন হাবিব।