সিলেটের ওসমানীনগরে লন্ডন প্রবাসী স্বজনদের আহাজারি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ২৩ ২০২১, ১৯:৩২

আহমদ মালিক, ওসমানীনগর প্রতিনিধি সিলেট: বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ও অসুস্থ সকলের খোঁজ খবর নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওসমানীনগরে স্বজনদের আহাজারি বেড়েই চলছে। নিজ নিজ বাড়ি ঘর সহ বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দোয়া প্রার্থনার আয়োজন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

করোনায় বিপর্যস্ত ব্রিটেনে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি মানুষ! যাদের অধিকাংশের বাড়ি সিলেটের। সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত ওসমানীনগরের মানুষ প্রবাসীদের নিয়ে আছেন দু:চিন্তায়। প্রতিদিন আসছে করোনায় আক্রান্ত স্বজনদের মৃত্যুর সংবাদ। এ পর্যন্ত করোনায় প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে ব্রিটেনে। এমন অবস্থায় সিলেটের ওসমানীনগরে দেখা দিয়েছে স্বজনদের আহাজারি।

ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসীদের নানা সহযোগিতার কারণে ওসমানীনগর একটি সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে উঠেছে। আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও প্রতিবেশী গরীব মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় বিরাট ভূমিকা রয়েছে ব্রিটেন প্রবাসীদের। করোনায় বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে সে পথ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওসমানীনগরের মানুষ। কখন জানি মৃত্যুর সংবাদ আসে!

স্বজন ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য চলছে দোয়া-প্রার্থনা। এমনকি শুক্রবার জুমআর নামাজের পর সকল মসজিদে বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ইতিমধ্যে ব্রিটেনে করোনায় সিলেটের ওসমানীনগরের আব্দুল হান্নান (৫২) নামের এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আব্দুল হান্নান ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে আব্দুল হান্নানের শ্যালক সুপার চৌধুরী জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০ দিন পূর্বে লন্ডনের রয়েল হাসপাতালে ভর্তি হন আব্দুল হান্নান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্রিটেন সময় বুধবার (২০ জানুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে ব্রিটেনে বসবাস করছিলেন।

শনিবার (১৬ জানুয়ারি) প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে ওসমানীনগরের দুই সহোদরসহ ৩ জন মারা গেছেন। দুটি হাসপাতালে তারা মৃত্যুবরণ করেন। মৃতরা হচ্ছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হোটেল ব্যবসায়ী বুরুঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর তিলাপাড়া গ্রামের বদরুল ইসলাম (৪৩)। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান তার বড় ভাই কবির আহমদ (৬০)। একই দিন ভোর সাড়ে ৬টায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান উমরপুর ইউনিয়নের হামতনপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকন মিয়া (৫২)।

করোনায় মারা যাওয়া বদরুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৫ দিন আগে বদরুল ইসলাম ও এক সপ্তাহ আগে কবির আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

ব্রিটেন প্রবাসী সফিক মিয়া জানান, চারদিকে শুধু এ্যাম্বুলেন্সর শব্দ, মৃত্যুর সংবাদ। বড় চিন্তায় আছি। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যে প্রবাসীরা দেশকে দেশের মানুষকে সহযোগিতা করেছিলো। আজ তাদের অবস্থা বিপর্যস্ত। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন-এই মহামারি থেকে আল্লাহ যেন রক্ষা করেন।

লন্ডনে ওসমানীনগরের বাসিন্দা সৈয়দ তাজির উদ্দিন মান্নান,মোহাম্মদ ফজল উদ্দিন বলেন, তোফায়েল আহমদ, আফাজ উদ্দিন, সাহেদ আহমদ মুছা, আসক আলী, কুতুব উদ্দিন, সামছুল আলম রাজু সহ আরো অনেকে বলেন এখনো সুস্থ আছি সবার দোয়ায়। আমার সন্তানরা ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। একে অপরকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি । অনেকে একটি রুমে কাটিয়ে দিয়েছেন ছয়মাস । বাইরে কি হচ্ছে অনেক কিছুই জানতে পারেন না কেবল মৃত্যু ভয় মনে পড়ে । বাংলাদেশে যেথে মন চায়।

ওসমানীনগরের তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান গয়াছ মিয়া, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ সহ আরো অনেকে বলেন আমাদের উপজেলার অধিকাংশ প্রবাসী ব্রিটেনে বসবাস করেন। সেই ব্রিটেনে আমাদের প্রবাসীরা করোনায় বিপর্যস্ত। প্রতিধ্বনি করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংবাদ আসছে। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। দেশবাসীর কাছে তাদের জন্য দোয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।